মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণে ইমরান খানের হাতেনাতে গ্রেফতারি, গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের যোদ্ধা হিসেবে তার মর্যাদা অনুগামীদের মধ্যে বাড়াতে পারে। তবে, এই আঁকাবাঁকা নতুন সংকট থেকে তাঁর সহজে মুক্তির পথ নেই। কারণ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর গ্রেফতারকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বেসামরিক সরকারের কাজ নয়। বরং, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ইমরান সমর্থকদের আচরণে।
ইমরানের দলের নেতা-কর্মীরা রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর ঘাঁটিতে যাওয়ার একটি দরজা-সহ গোটা পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনাঘাঁটির চারপাশে জড় হচ্ছেন। পাকিস্তানে এমন দৃশ্য অতীতে দেখা যায়নি। এসবের জেরে পাকিস্তানের সেনা যদি বর্তমান অবস্থান থেকে পিছুও হঠে, তারপরও কিন্তু, তাদের ভাবনার বিশেষ বদল হবে, এমনটা আশা করা অন্যায়। শুধু তাই নয়, ইমরানের বিরুদ্ধে এতবড় পদক্ষেপ গ্রহণের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির বর্তমান অবস্থান থেক পিছু হঠলে, সেটাও হবে একটা অবাক কাণ্ড।
৭০ বছর বয়সি ইমরান ক্রিকেটের জগৎ থেকে পাকিস্তানে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন। গত বছর থেকে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ইমরানের সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেন। আর, বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তার জেরে ২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরানের প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ আচমকা শেষ হয়েছিল। কিন্তু, বাজওয়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেন জেনারেল অসীম মুনিরকে। ইমরান খানের নির্দেশে যাঁকে বাজওয়া আইএসআইয়ের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ, ইমরানের পরিবারের কিছু সদস্যের ওপর মুনির নজরদারি রাখা শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন- বদলাচ্ছে ভারতীয় সেনাকর্তাদের উর্দি, ঠিক কতটা বদল ঘটবে?
আর, এই সব কারণেই ইমরান খানের গ্রেফতারির পূর্বাভাস ছিল। পদ থেকে অপসারণের পর ইমরান তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন। সেই কারণে, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে অযোগ্য প্রমাণ করা ছাড়া পাক সেনাবাহিনীর হাতে বিকল্প নেই। কারণ, কেবলমাত্র এভাবেই ইমরানকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা সম্ভব। আর, সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে হত্যা থেকে রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি-সহ ১৪০টি মামলায় ইমরানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইমরানের ক্ষমতাচ্যুতির পর পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট বা পিডিএম নামের দলগুলো যেমন শেহবাজ শরিফের হাত ধরে ইমরানকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে। তেমনই পিছন থেকে গোটা ঘটনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে পাক সেনা।