মাঙ্কিপক্স। আমার পরিচিত এক জন এর বাংলা করেছে-- বানরবসন্ত। আর এক জন আবার-- হনুমানবসন্ত বলেছে। ঠিক করেনি মোটেই, হনুমান তো ভগবানের নাম! যা হোক, জোকিং অ্যাপার্ট, মাঙ্কিপক্স নিয়ে চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক মঙ্গলবার মাঙ্কিপক্সের গাইডলাইন্স প্রকাশ করেছে। এই অসুখে নজরদারি, সনাক্তকরণ প্রভৃতি নিয়ে এই গাইডলাইন্স। এই অসুখের উপসর্গ, এবং চিকিৎসা কী, আসুন জেনে নিই।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলি কী কী?
ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি-র বক্তব্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্স জ্বর থেকে শুরু হয়। মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি এই অসুখের উপসর্গ। এর ফলে লিম্ফ নোডগুলি ফুলে যায়, যা স্মলপক্সের ক্ষেত্রে হয় না।
সংক্রমণের কত দিন পর উপসর্গ দেখা যায়?
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। ইনকিউবেশন পিরিওড-টা হল (সংক্রমণ থেকে উপসর্গ আসা পর্যন্ত সময়) হল ৭ থেকে ১৪ দিন। এটা ৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত ঘোরাফেরা করতে পারে। rash বেরনোর আগে ১ থেকে ২ দিন আগে থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত খোসা ঝড়ে পড়ে যায়, ততক্ষণ এটি ছোঁয়াচে।
কী ভাবে এই অসুখ বাড়ে?
মাঙ্কিপক্স বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে যায়। প্রথমে আক্রান্ত হওয়ার সময়, যখন অসুখ আপনার ভিতরে ঢুকছে, তখন জ্বর আসে, প্রথম পাঁচ দিন এমনটা হতে পারে। মাথাব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যেতে পারে। লিম্ফ নোডগুলি সারা শরীরে ছড়ানো থাকে, যা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্ল্যান্ডগুলি গলায়, বোগলে, কুঁচকিতে থাকে, সেইগুলিই ফুলে যায়। আগেই বলেছি, মাঙ্কিপক্স হলে এইটি একটি নির্দিষ্ট লক্ষণ, যা rash বেরিয়ে বিড়ম্বনায় ফেলার অসুখ যেমন হাম কিংবা চিকেনপক্সে হয় না। রোগী দুর্বলতা বোধ করতে পারেন, মানে এনার্জি পাচ্ছেন না তিনি কোনও কাজেই।
আরও পড়ুন- মাঙ্কিপক্স নিয়ে গাইডলাইন প্রকাশ কেন্দ্রের, বিশ্বজুড়ে ৩০০ আক্রান্তের হদিশ
স্কিনে rash বেরিয়ে আসার পর্বটা শুরু হয় জ্বর আসার দু'দিনের মধ্যে। দেখা যায়, rash বেশির ভাগের মুখে হয়, বেশির ভাগ মানে ধরা যাক ৯৫ শতাংশের। আবার অনেকের হাতের তালুতে, পায়ের পাতা, গোড়ালিতে rash বেরোয়, সেই সংখ্যা ৭৫ শতাংশ। চোখের সাদা অংশ, মণি এবং জনন অঙ্গেও rash বেরোয়। ত্বকে সংক্রমণের কাল ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। এই সময়টা খুবই কষ্টকর। বেদনার। প্রথমে rash-এ পরিষ্কার তরল থাকে, তার পর যা পুঁজে পরিণত হয়, তার পর শুকোতে থাকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা হল, এই সময়টা আলাদা করে রাখতে হবে রোগীকে। এবং চোখে যন্ত্রণা, এর ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট, প্রস্রাব কমে যাওয়া, ইত্যাদির দিকেও নজর রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের কোপ, নয়া ভয়ের হিম স্রোত মেরুদণ্ডে
মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা কী?
এখনও পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের কোনও পরীক্ষিত চিকিৎসা নেই। WHO বলেছে, সাপোর্টিং চিকিৎসার কথা। যা উপসর্গ অনুযায়ী করা হয়ে থাকে। আক্রান্ত এই খবর মেলা মাত্র আইসোলেশনে রাখা হবে রোগীকে। এটা অত্যন্ত জরুরি। ত্বকে যে rash বেরোয়, তার জন্য সাধারণ অ্যান্টিসেপ্টিক দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে ড্রেসিং করা হয়, যদি ক্ষত ভাল মাত্রায় হয়, তা হলে ড্রেসিং করা অত্যন্ত দরকার। মুখে ঘা হলে, তার জন্য উষ্ণ গরম জলে গার্গেল করা প্রয়োজন। ডাক্তাররা বলছেন, পাঙ্কিপক্সে ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না, উপসর্গ অনুযায়ী সব ধরনের চিকিৎসাই মেলে।
Read full story in English