রিটায়ার্ড কর্নেল সঞ্জয় কুমার শ্রীবাস্তব ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অবসার্ভিং সিস্টেমস প্রমোশন কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন। বজ্রপাত বিষয়ক একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে ওই কমিটি। তাঁর সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কথা হল ২০১৯ সালের মাঝ বর্ষার বজ্রপাতের পরিসংখ্যান নিয়ে।
বজ্রপাত নিয়ে রিপোর্ট তৈরিতে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে?
এই রিপোর্ট তৈরি করার জন্য ভারতের আবহাওয়া দফতরের বিভিন্ন বজ্রপাত বিষয়ক সতর্কতা ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নাউকাস্ট, পুনের ইন্ডিয়ান ইন্সটিট্যুট অফ ট্রপিক্যাল ম্যানেজমেন্টের বজ্রপাত সম্পর্কিত তথ্য, এনআরএসসি, ইসরোর দেওয়া তথ্য, অন্য সব উপগ্রহের তথ্য এবং লাইটনিং রেজিলিয়েন্ট ইন্ডিয়া ক্যাম্পেনের নেটওয়ার্কও। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে যেমন বিভিন্ন রাজ্য সরকার রয়েছে, তেমনই রয়েছে এনজিও, সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি। ভারতে বজ্রপাতের ঝুঁকি নিয়ে আমরা একটা মানচিত্র তৈরি করতে চাইছি এবং বজ্রপাতের হটস্পটগুলিকে চিহ্নিত করতে চাইছি।
আরও পড়ুন, গরম হচ্ছে পৃথিবী, কলার উৎপাদনে কী প্রভাব তার?
রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী?
আবহাওয়া দফতর সারা ভারতে যে সেন্সরগুলি বসিয়েছে তা এপ্রিল মাস থেকে অ্যালার্ট দিতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকারগুলির উচিত এই তথ্য সংগ্রহ করা এবং আপৎকালীন ব্যবস্থা চালু করে জেলা স্তর পর্যন্ত এই তথ্যগুলি পৌঁছে দেওয়া। অঞ্চল ভিত্তিক এসএমএস ব্যবস্থা চালু থাকলেও বিভিন্ন রাজ্য তা গ্রহণ করেনি, এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। ওড়িশা, কর্নাটক এবং অন্ধ্র প্রদেশের মত কয়েকটি রাজ্য এ কাজ নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই করেছে।
গত চার মাসে ওড়িশায় বজ্রপাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, কিন্তু অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম। এটা কীভাবে ঘটল?
আবহাওয়া বিভাগ থেকে খবর পাওয়ার পর ওড়িশা সরকার তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পূর্ব নির্ধারিত বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে তৃণমূল স্তরে। যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, বিপদবার্তার সাইরেন শোনার পর কী করতে হবে সে ব্যাপারে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অনেক বাড়িতে বজ্রপাত নিরোধক বসানো হয়েছে। গত বছর যে ময়ুরভঞ্জে বজ্রপাতে ১৫২ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে এ বছর মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। বাড়ির আকার বদলানো বা এ বিষয়ক শিক্ষা বিতরণের মত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে রাজ্য।
এদিকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশের বজ্রপাতের পরিমাণ এক ষষ্ঠাংশ কিন্তু মৃত্যুর পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ (৫১২)...
বিহারে বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা লাগু রয়েছে, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত তার মূল ফোকাস ছিল বন্যার উপর। উত্তর প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রকল্প চালু করেছেন বটে, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক কারণে কাজ শুরু হয়নি। ঝাড়খণ্ডে প্রাথমিক কাজ হলেও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের কাছে লোকবল না থাকায় কোনও কাজ নিচের স্তরে পৌঁছয়নি।
আরও পড়ুন, প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন: আগে যোগী, পিছে মোদী
গবেষণায় বিরহর, পাহাড়িয়ার মত সম্প্রদায়ের বিলুপ্তি আটকাতে বজ্রপাত থেকে রক্ষার উপর জোর দেওয়া হল কেন?
সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, এবং ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশে নিয়ে গঠিত ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে সবচেয়ে বজ্রপাত প্রবণ এলাকা। এ অঞ্চলে জনজাতিদের বাস। দেশের অন্য যে কোনও জেলার তুলনায় পূর্ব সিংভূমে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বজ্রপাত হয়েছে, ২ লক্ষেরও বেশি। এই অঞ্চলগুলিতে মূলত জনজাতিদের বাস, যাঁদেরি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, অন্যথায় তাঁদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বজ্রপাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি?
আমরা দেখেছি যে সব জায়গা তাপপ্রবাহপ্রবণ, সে জায়গাগুলিই বজ্রপাতপ্রবণ। দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডবে এয়ারোসোলের পরিমাণ বাড়ে, যার জেরে বাড়ে বজ্রপাতের পরিমাণ। ঝাড়খণ্ডে অন্তত দু থেকে তিনটি এমন ঘটনা ঘটেছে, যাতে বৃষ্টি হীন বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
Read the Full Story in English