বিশ্লেষণ: মহারাষ্ট্রের সেচ দুর্নীতি এবং অজিত পাওয়ার
২০১২ সালের মার্চ মাসে বিধানসভায় বার্ষিক আর্থিক সার্ভেতে জানানো হল, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্পে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে সেচের আওতায় এসেছে মোট ০.১ শতাংশ এলাকা।
২০১২ সালের মার্চ মাসে বিধানসভায় বার্ষিক আর্থিক সার্ভেতে জানানো হল, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্পে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে সেচের আওতায় এসেছে মোট ০.১ শতাংশ এলাকা।
কংগ্রেস-এনসিপি সরকারের আমলে অজিত পাওযার ছিলেন জলসম্পদ মন্ত্রী
সোমবার, এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগের দিন দুর্নীতি দমন শাখা তাঁর বিরুদ্ধে চলা ৯টি বহু কোটি টাকার সেচ কেলেংকারির থেকে রেহাই পেয়েছেন।
Advertisment
এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে অজিত পাওয়ারের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কোনও সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে দুর্নীতিদমন শাখা।
কংগ্রেস-এনসিপি সরকারের আমলে অজিত পাওযার ছিলেন জলসম্পদ মন্ত্রী। সেসময়ে সেচ প্রকল্পে বেনিয়মের অভিযোগ সামনে আসে। এর মধ্যে ছিল বিদর্ভ সেচ উন্নয়ন কর্পোরেশনও। অজিত পাওয়ার ছিলেন ওই কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। মহারাষ্ট্রে পাঁচটি এলাকাভিত্তিক সেচ উন্নয়ন কর্পোরেশন রয়েছে।
অজিত পাওয়ারের নাম এফআইআরে ছিল না। কিন্তু দুর্নীতি দমন শাখার ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জয় বারভে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর শাখায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে জানিয়েছিলেন, সেচ প্রকল্পে চুক্তি পাবার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিলেন অজিত পাওয়ার। বিদর্ভ সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের ৪৫টি প্রকল্পের ২৬৫৪ টি টেন্ডারের তদন্তের মধ্যে ৯টি র বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন শাখা জানিয়েছেস ২১২টি টেন্ডার তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। ২৪টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং পাঁচটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের প্রকৃতি কী ছিল?
২০১১ সালের জুন মাসের হিসেব অনুসারে, ৩৭১২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৮.২৬ লাখ হেক্টর সেচযোগ্য এলাকা নিরূপণ করা হয়। ২০১২ সালের জুন মাসে মোট প্রকল্পের মাত্র ৬৭.৩৬ শতাংশ, মোট ৩২.৫১ লক্ষ হেক্টর কাজে লাগানো হয়।
২০০১-০২ থেকে ২০১১-১২ সালের মধ্যে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর রিপোর্টে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, প্রকল্পের আগ্রাধিকার গণ্য না করা, সম্পূর্ণ করায় বিলম্ব, বন ও পরিবেশের ছাড়পাত্র ছাড়াই কাজ শুরু সহ বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ কখন সামনে এল?
ছাড় পাবার বিজ্ঞপ্তি
২০১২ সালে মহারাষ্ট্র ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেনিং অ্যাকাডেমি এবং প্রাক্তন সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়র বিজয় পান্ধারে মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান ও রাজ্যপাল কে শঙ্করনারায়ণকে চিঠি লেখেন। এঁরা বাঁধ নির্মাণে বেনিয়মের কথা উল্লেখ করে সিবিআই তদন্তের প্রস্তাব দেন। তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার এ ঘটনার জেরে ইস্তফা দেওয়ার এ বিষয়ের প্রথম হুইসল ব্লোয়ার পান্ধারেকে পুলিশি সুরক্ষা দিতে হয়েছিল। পান্ধারে ২০১৪ সালে আপের হয়ে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং হেরে যান। এ ছাড়া অন্য যেসব সমাজকর্মীরা এ বিষয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন, তাঁরা হলেন অঞ্জলি দামানিয়আ এবং প্রবীণ ওয়াটেগাঁওকর। আপের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যান অঞ্জলি দামানিয়াও।
বেনিয়মের প্রাথমিক অভিযোগের বিষয় বিস্তারিত উঠে এসেছিল ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পান্ধারের প্রথম চিঠিতে। ২০১২ সালের মার্চ মাসে বিধানসভায় বার্ষিক আর্থিক সার্ভেতে জানানো হল, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্পে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে সেচের আওতায় এসেছে মোট ০.১ শতাংশ এলাকা।
ততদিন পর্যন্ত, এক দশকের বেশি সময় জুড়ে জলসম্পদ বিভাগ ছিল এনসিপির হাতে। এই সময়কালের বড় অংশ জুড়ে অজিত পাওয়ারই ছিলেন এর দায়িত্বে। এনসিপি এই তথ্যের বিরোধিতা করলেও মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান বিরোধীদের এ বিষেয় তদন্তের দাবি মেনে নেন। ২০১২ সালে চৌহান শ্বেতপত্র প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। সেপ্টেম্বর মাসে অজিত পাওয়ার মন্ত্রিসভা ত্যাগ করেন, শ্বেত পত্র প্রকাশ হয়ে যাবার পর জিসেম্বর মাসে ফেরত আসেন তিনি। বিরোধীরা নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য লাগাতার দাবি জানিয়ে যাবার জেরে কংগ্রেস এনসিপি সরকার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ সচিব মাধব চিতালের নেতৃ্ত্বে একটি তদন্ত দল গঠন করেন। ওই কমিটি অজিত পাওয়ার ও তৎকালীন জলসম্পদমন্ত্রী সুনীল তাৎকারেকে ক্লিনচিট দেয়, দায়ী করে ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের। কমিটি জানিয়েছিল ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়নি, বৃদ্ধির পরিমাণ ২০ শতাংশ। রাজ্য সরকার একটি অ্যাকশন চেকেন রিপোর্টও জমা দেয়।
অন্য রিপোর্টে কী বলা হয়েছিল?
২০১৪ সালে ক্যাগ ২০০৭-১৩ পর্যন্ত চলা সেচ প্রকল্পের পরিচালনার উপর একটি অডিট করে। সেখানে ২০১২ সাল থেকে সমাজকর্মীদের ওঠা অভিযোগ মেনে নেওয়া হয়।
আগের সরকার এই অভিযোগের ব্যাপারে কী করেছে?
বিরোধী থাকাকালীন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ তদন্তের দাবিদার মধ্যে ছিলেন অগ্রগণ্য। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেবার একমাসের মধ্যে সেচ কেলেঙ্কারিতে অজিত পাওয়ার এবং তাতকারের ভূমিকা খতিয়ে দেখবার জন্য দুর্নীতি দমন শাখাকে তদন্তের অনুমতি গেয়। সরকার জানিয়েছিল তদন্তের আওতায় থাকবেন সরকারি আধিকারিক এবং ঠিকাদাররাও। তাতকারের সময়কালে কোঙ্কণ এলাকার রায়গড় জেলায় কোনডানে বাঁধ প্রকল্পের আর্থিক বেনিয়মে অভিযুক্ত ৪ জন ইঞ্জিনিয়রকে সাসপেন্ড করে। ৪৫ জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়।