ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা বিজেপির বিরুদ্ধে নিজেদের রণকৌশল কী হবে তা রবিবারে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে উঠে এল মমতার গলায়।
মমতা জানিয়েছেন তিনি মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য নিজে জেলাসফরে যাবেন, বুথ স্তরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে উদ্যোগী হবে দল, বিজেপির উত্তরভারতীয় হিন্দি বলয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বাঙালি সংস্কৃতির উপর জোর দিতে হবে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নিচু স্তরে ব্যাপক রদবদল করা হবে।
আরও পড়ুন, একুশে জুলাইয়ের পাল্টা? অগাস্টে কলকাতায় অমিত শাহের সভা
রাজ্যে বিজেপির আগ্রাসী মনোভাব, তৃণমূল নেতা ও বিধায়কদের ভাঙিয়ে নেওয়া এবং কাট মানি বিতর্কের প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস এই কৌশল নিয়েছে।
আগামী বছর রাজ্যে পুর নির্বাচন। তার পরের বছর বিধানসবা ভোট। শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যে রাজনৈতিক জমিতে বিজেপির সঙ্গে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করবেন তিনি।
বুথ স্তরের সংগঠন
নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের নেতৃত্বে একেবারে নিচুস্তরে সংগঠন গড়ার ব্যাপরে জোর দিয়েছে বিজেপি। শক্তিকেন্দ্র গড়ে তুলে সেখানে ভোট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে পান্না প্রমুখদের। ভোটার তালিকার নির্দিষ্ট পৃষ্ঠার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে কাউকে না কাউকে। মমতার নতুন সংগঠন-ধারণা সেখান থেকেই নেওয়া।
বিজেপি এ রাজ্য থেকে ৪০.৩০ শতাংশ ভোট শেয়ার ও ১৮টি আসন যে পেয়েছে, তাতে এই বুথ স্তরের মেশিনারি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আরও পড়ুন, ‘মমতার দলটাই উঠে যাবে’, হুঙ্কার মুকুল রায়ের
মমতা ঘোষণা করেছেন বুথ স্তরে দলীয় সংগঠন গড়ে তোলার জন্য রাজ্য জুড়ে কর্মসূচি নেওয়া হবে ২৬ জুলাই থেকে।
তৃণমূল স্তর
মমতা চাইছেন শহর ও গ্রাম দু জায়গাতেই জনসংযোগ যাত্রার মাধ্যমে তৃণমূল স্তরের নেতারা প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছন। এ ব্যাপারে তিনি জোর দিতে চাইছেন দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ এবং তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর। লোকসভা ভোটে এবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর বঙ্গে তফশিলি জাতি ও উপজাতি কেন্দ্রগুলিতে ভাল ফল করেছে বিজেপি। এ ছাড়াও বনগাঁ ও রানাঘাট কেন্দ্রে তফশিলি জাতির মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভাল ফল করেছে তারা।
কাট মানি নিয়ে বিজেপির আক্রমণের জবাব তৃণমূল দিতে চায় কালো টাকার প্রসঙ্গ তুলে। মমতা এই ইস্যুতে জুলাইয়ের ২৬-২৭ তারিখ থেকে আন্দোলন শুরু করতে চান রাজ্য জুড়ে। পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসন স্থানীয় স্তরে কাট মানি আন্দোলনকারীদের উপর ঝাঁপাতে চলেছে।
নিচুতলার পুনর্গঠন
অনেক বামপন্থী ভোটাররাই যে এবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, সে কথা জানেন মমতা। এবং সে কথা জেনেই রাজ্যে গেরুয়া শক্তি ঠেকাতে সিপিএম ও কংগ্রেসের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। কোনও দলই অবশ্য সে আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না।
মমতা বলেছেন বুথ স্তরে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতা-কর্মীদের কাছে যেতে। তাঁর আশা এই নেতা কর্মীরা রাজ্যের ভাল চেয়ে মুখ ফেরাবেন না। বামেরা ২০১৪ সালে রাজ্যে দুটি আসন পেয়েছিল এবং ভোট পেয়েছিল ৩৪ শতাংশ। এবার তাদের আসন সংখ্যা ০ এবং ভোটের হার ৭.৪৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতাই, বিধানসভায় আড়াইশোরও বেশি আসন পাবে তৃণমূল’
মুখ্যমন্ত্রী একইসঙ্গে পরিকল্পনা করেছেন এ মাসের শেষাশেষি জেলা সফর শুরু করে দিতে। প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন তিনি।
বাঙালিয়ানা
বাঙালি সংস্কৃতির ব্যাপারে উচ্চস্বরে কথা বলতেশুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাঙালির আইকন বিদ্যাসাগরকে খর্ব করার ব্যাপারে বিজেপিকে দুষেছেন তিনি। তবে অমিত শাহের রোড শোয়ের দিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ইস্যুতেই থেমে থাকছে না মমতার দল। বাঙালি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সভা সমাবেশের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।
Read the Full Story in English