সোমবার রাষ্ট্রসংঘ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেকোভিড ১৯ অতিমারীর জন্য হাম (মিজলস) টীকাকরণ কর্মসূচি ২৪টি দেশে পিছিয়ে গিয়েছে এবং ১৩টি অন্য জায়গায় বাতিল হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দেশগুলিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা অপ্রতুল হবার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই অতিমারী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
হামের প্রতিষেধক থাকলেও এই রোগে ২০১৮ সালে ১,৪০,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের অধিকাংশ শিশু। করোনা অতিমারীর কারণে অনেকগুলি প্রতিষেধক ব্যবস্থা লকডাউনের আওতায় পড়েছে, যে কারণে শিশুরা পোলিও, ইয়েলো ফিভার এবং কলেরার রুটিন টীকা থেকেও বঞ্চিত থাকছে।
কোভিড ১৯ ও বয়স্কদের করণীয়- বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
মিজলস বা হাম কী?
এটি একটি ভাইরাসজনিত অতি সংক্রামক রোগ, এবং এর ভ্যাকসিন থাক সত্ত্বেও সারা পৃথিবীতে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ এই হাম।
সংক্রমিত ব্যক্তির নাক, গলা ও মুখ থেকে ড্রপলেটের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয় সংক্রমণের ১০-১২ দিন পর। এর মধ্যে থাকে খুব জ্বর, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং মুখের মধ্যে সাদা ছোপ।
এ রোগ থেকে যেসব গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে অন্ধত্ব, এনকেফালাইটিস, ভয়ংকর ডায়েরিয়া, ডিহাইড্রেশন এবং নিউমোনিয়ার মত গুরুতর শ্বাসের সংক্রমণ। আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অংশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, অপুষ্টি, বিশেষ করে ভিটামিন এ-র অভাবে ভোগা শিশুদের মধ্যে।
করোনা সংক্রমিতদের হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে কখন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এ রোগের মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গণ টীকাকরণ কর্মসূচি এবং শিশুদের রুটিন ভ্যাকসিনেশন। ফলে এই কর্মসূচি বিলম্বের ফলে কয়েকহাজার শিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে।
কোন কোন দেশে এই কর্মসূটি পালনে দেরি হচ্ছে কোন দেশেই বা বাতিল হয়েছে?
মেহিকো, বলিভিয়া, লেবানন, নেপাল ও চিলের মত দেশগুলিতে টীকাকরণ কর্মসূচি বিলম্বিত।
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে হামের প্রকোপে কঙ্গো ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকে ৬৫০০ শিশু মারা গিয়েছে, এবং ২০১৮ সালের পর থেকে এই প্রকোপ আরও ছড়াচ্ছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলিও এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, তার কারণ টীকাকরণ কর্মসূচির বিরুদ্ধে অনেক বাবা-মায়েরই আপত্তি রয়েছে।
উপসর্গবিহীন কোভিড ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় চিনের প্রোটোকল কী?
এ ছাড়া একজন হামের রোগী ১২ থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। নেচার পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে এখনও পর্যন্ত জানা ভাইরাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণক্ষম ভাইরাস হল হামের। যেসব দেশে হামের প্রকোপ চলছে তার মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, ইউক্রেন, কঙ্গো, কাজাকাস্তান ইত্যাদি।
টীকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে হু কী বলছে
কোভিড ১৯-র মধ্যেও টীকাকরণ কর্মসূচি চালিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে হু একটি অন্তরবর্তী গাইডলাইন স্থির করেছে, যাতে বলা হয়েছে, যদি অতিমারীর কারণে টীকাকরণ কর্মসূচি না হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে অতিমারীর প্রকোপ কমার পর কীভাবে ঘাটতি মেটানো যায় তার কৌশল স্থির করতে হবে। এর জন্য যাদের ভ্যাকসিন বাদ পড়েছে তাদের খুঁজে বের করা এবং ফলো আপ করার কাজ করতে হবে, তেমনই প্রতিরোধের ঘাটতি কতটা তার হিসেব করতে হবে এবং গোষ্ঠীর দাবি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এছাড়াও হুয়ের উপদেশ, কোভিড ১৯ অতিমারী কালে গণ টীকাকরণ কর্মসূচি অস্থায়ী ভাবে বন্ধ করা হলেও বিভিন্ন দেশে এই বিলম্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়মিত ব্যবধানে যাচাই করতে হবে।