শুক্রবার ধৃত নীরব মোদীকে লন্ডনের আদালতে হাজির করা হবে। তাঁর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন করবেন এটাই প্রত্যাশিত। অন্যদিকে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মোদীর বিরুদ্ধে ভারতের বক্তব্য় এবং ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টের কথা বলবে, যার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৩,৫০০ কোটি টাকার পিএনবি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নীরব।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড মোদীকে গ্রেফতার করার ফলে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে, যদিও দিল্লি তাঁকে ফেরাতে কতটা বদ্ধপরিকর এবং কত দ্রুত কার্যকর হয়, তা দেখার।
আরও পড়ুন, লন্ডনে হঠাৎ দেখা নীরব মোদীর, বহাল তবিয়তেই হীরে ব্যবসায়ী
নীরব মোদী: ভারত, ব্রিটেন এবং প্রত্যর্পণ
ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯২ সালে এবং তা লাগু হয় ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে। নীরব মোদীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলিকে কূটনৈতিক মাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে, এবং ব্রিটেনকে সাহায্য করার জন্য তদন্ত আধিকারিক পাঠাতে হবে।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অনুরোধ মোতাবেক ইন্টারপোল এর আগেই রেড কর্নার নোটিশ জারি করেছে নীরব মোদীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ব্রিটেনের সংবাদপত্র দ্য ডেলি টেলিগ্রাফের ব্রিটিশ সাংবাদিক মিক ব্রাউন লন্ডনের রাস্তায় নীরব মোদীকে খুঁজে পান। এর পরেই নীরবকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রত্যর্পণ চুক্তি হয় দ্বিপাক্ষিক। প্রথমত, চুক্তিতে উল্লিখিত অপরাধের ক্ষেত্রেই কেবল প্রত্যর্পণ লাগু হয়, এবং যে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হচ্ছে, কেবলমাত্র সেই অপরাধ সম্পর্কেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা চালানো হয়। দ্বিতীয়ত, যে অপরাধের জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হচ্ছে, তা চুক্তিবদ্ধ দুটি দেশের ক্ষেত্রেই অপরাধমূলক কাজ হিসেবে গণ্য হতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষিতে ভারত ব্রিটেন প্রত্যর্পণ চুক্তির ২ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, দুটি চুক্তিবদ্ধ দেশের নিজস্ব আইনে যে অপরাধের সাজা অন্তত পক্ষে এক বছরের কারাদণ্ড, সে ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ কার্যকর হবে। নীরব মোদীর বিরুদ্ধে সিবিআই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় মামলা রুজু করেছে, যে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
প্রত্যর্পণের পুরনো অনুরোধের হাল
ব্রিটেনের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত একজনকেও সে দেশ থেকে ফেরাতে পারেনি ভারত। সাম্প্রতিকতম ব্য়র্থ প্রত্যর্পণ প্রচেষ্টা ছিল বিজয় মালিয়ার ক্ষেত্রে। আরও আটটি অনুরোধ স্থগিত রয়েছে। এগুলি হল, রাজেশ কাপুর (২০১১) জালিয়াতি, টাইগার হানিফ (২০০৪) সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগ, অতুল সিং (২০১২) যৌন অপরাধ, রাজ কুমার প্যাটেল (২০০৯) জালিয়াতি, যতীন্দ্র কুমার আঙ্গুরালা এবং আশারানি আঙ্গুরালা (২০১৪) ব্যাঙ্ক দালিয়াতি ও প্রতারণা, সঞ্জীব কুমার চাওলা (২০০৪) ক্রিকেট বোটিং এবং শেখ সাদিক (২০০৪) ষড়যন্ত্র ও চুরি।
এছাড়া ব্রিটেন বেশ কয়েকটি প্রত্য়র্পণের অনুরোধ ফিরিয়েও দিয়েছে। এর মধ্য়ে রয়েছে রেমন্ড ভারলি, রবি শঙ্করণ, ভেলু বুপালন, অজয় প্রসাদ খৈতান, বীরেন্দ্র কুমার রাস্তোগি এবং আনন্দ কুমার জৈনের প্রত্যর্পণের অনুরোধ। যৌন অপরাধের জন্য ওয়ান্টেড ভারলে দাবি করেছে যে সে স্মৃতিভ্রংশে ভুগছে এবং ভারত যাকে খুঁজছে, সে সেই ব্যক্তি নয়। ভারলের স্মৃতিভ্রংশের দাবির ভিত্তিতে ভারতের অনুরোধ খারিজ করেছে ব্রিটেন। নৌবাহিনীর ওয়ার রুমের ফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত শঙ্করণের প্রত্য়র্পণের অনুরোধ ব্রিটেনের আদালত প্রমাণের অভাবে খারিজ করে দিয়েছে। অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও প্রমাণের অভাবের কারণেই খারিজ হয়েছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ।
অন্যদিকে ব্রিটেনে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশের নাগরিক মহম্মদ আব্দুল শকুরকে এই প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতাতেই ভারত থেকে ব্রিটেনে পাঠানো হয়।
ভারত থেকে পালিয়ে ব্রিটেনে লুকিয়ে আছে বলে সন্দেহ এমন ৬০ জনের নামের তালিকা ব্রিটেনকে দিয়েছে বারত। অন্যদিকে ব্রিটেন পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির আওতায় ১৭ জনের তালিকা দিয়েছে ভারতকে।