Advertisment

নিত্যানন্দের নতুন দেশ: কী ভাবে গড়ে ওঠে নয়া রাষ্ট্র

১৯৪৫ সালে রাষ্ট্রসংঘের সনদে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর অর্থ, জনসংখ্যার একাংশ নির্ধারণ করতে পারবেন তাঁরা কার দ্বারা কী ভাবে শাসিত হবেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
New Country, Nithyanada

সারা পৃথিবীতেই এখন স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে

ভারতের পলাতক গডম্যান নিত্যানন্দ প্রশান্ত মহাসাগরের নিকটবর্তী কোনও এক স্থানে নতুন এক দেশ বানিয়ে ফেলেছেন বলে জানা গিয়েছে। সারা পৃথিবীতেই এখন স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে। সে স্পেনের ক্যাটালোনিয়া হোক, কি ইরাকের কুর্দিস্থান অথবা চিনের তিব্বত। নতুন দেশের দাবি হঠাৎই তুঙ্গে উঠেছে।

Advertisment

কীভাবে কোনও অঞ্চল নতুন দেশে পরিণত হয়?

এ ব্যাপারে কোনও সোজাসাপ্টা নিয়ম নেই। কিছু নির্দিষ্ট আবশ্যকীয়তা ব্যতিরেকে কোনও এলাকার রাষ্ট্র হয়ে ওঠা মূলত নির্ভর করে কতগুলি অন্য দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওই ভূখণ্ডকে দেশ বলে স্বীকার করছে। একটা বড় স্বীকৃতি অবশ্যই থাকে রাষ্ট্রসংঘের।

কোনও ভূখণ্ডকে দেশ বলে ঘোষণা করতে পারে কে

যে কারওরই এই অধিকার রয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ঝাড়খণ্ডে, পাথালগড়ি আন্দোলনের অংশ হিসেেব গ্রামের বাইরে পাথরের ফল বসিয়ে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানকার সার্বভৌম কর্তৃত্ব রয়েছে কেবল ওই গ্রামসভার।

সোমালিয়ার সোমালিল্যান্ড ১৯৯১ সাল থেকে নিজেকে দেশ বলে দাবি করে আসছে, কিন্তু কেউই তাদের কোনও স্বীকৃতি দেয়নি। সার্বিয়ার কসোভো ২০০৮ সালে নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে, সামান্য কয়েকটি দেশ তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।

রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য কী কী মানদণ্ড অত্যাবশ্যক

১৯৩৩ সালের মন্টিভিডিও কনভেনশন অনুসারে মোটামুটি চারটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় পূরণ করা প্রয়োজন। দেশের স্বীকৃতির জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনগণ, সরকার এবং অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা প্রয়োজন।

একটি দেশের জনগণকে নির্দিষ্ট করার পদ্ধতি হল, সেখানকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের নিজেদের সেখানকার জাতীয়তায় বিশ্বাস। এ ছাড়া আরও কতকগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম কোনও পূর্বতন দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে ওই ভূখণ্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দাদের স্পষ্ট সম্মতি। এ ছাড়া দেখা হয় ওই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা সংখ্যালঘু তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষাকবচের বিষয়টিও।

আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বনাম আঞ্চলিক সংহতি

১৯৪৫ সালে রাষ্ট্রসংঘের সনদে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর অর্থ, জনসংখ্যার একাংশ নির্ধারণ করতে পারবেন তাঁরা কার দ্বারা কী ভাবে শাসিত হবেন।

একইসঙ্গে পুরনো স্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইনানুসারে সমস্ত দেশকেই অন্যের আঞ্চলিক সংহতিকে সম্মান করতে হবে। এ দুয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। জনগণের একাংশের যদি পূর্বতন রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হবার অধিকার থাকে, তাহলে সে দাবির দ্রুত স্বীকৃতি দেবার অর্থ অন্য দেশগুলি তাকে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিচ্ছে।

ঔপনিবেশিক কয়েকটি হাতে গোনা শক্তি যখন অধিকাংশ দেশের উপর রাজত্ব চালাত, তখন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি প্রথম উত্থাপিত হয়। সে সময়ে অধিকারের প্রশ্নের মীমাংসা করা সহজতর ছিল।

আজ, এ বিষয়টি পাল্টে গিয়েছে, অনেক জটিল হয়েছে। নতুন রাষ্ট্রের দাবি ওঠার একটি কারণ কোনও একটি দেশের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট এলাকার বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং দীর্ঘায়ত সশস্ত্র সংগ্রাম- এ দুয়ের মধ্যে একটি। অনেক ক্ষেত্রে উভয় কারণেই নতুন রাষ্ট্রের দাবি উঠে থাকে।

ফলে, তাইওয়ান নিজেকে পৃথক দেশ হিসেবে দাবি করলেও, অন্য রাষ্ট্রগুলি এ ব্যাপারে চিনের প্রতি সহানুভূতিশীল। গত বছরই এয়ার ইন্ডিয়া চিনের উদ্বেগ প্রকাশের ফলে তাদের ওয়েবসাইটে তাইওয়ানের নাম বদলে চাইনিজ তাইপেই করে দেয়।

রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন

রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতির অর্থ একটি নতুন দেশ বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার প্রভৃতি সংস্থার দরজা তার কাছে খুলে যাওয়া, তাদের মুদ্রার স্বীকৃতিলাভ। এর ফলে তারা বাণিজ্যসক্ষম হয়ে ওঠে।

অনেক সময়েই রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলি কোনও নতুন দেশকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ নিজে তাকে স্বীকৃতি দেয় না। এর ফলে সেই নয়া ভূখণ্ডটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করতে পারবে কিনা, বা পূর্বতন রাষ্ট্রের আগ্রাসানের হাত থেকে রক্ষা পাবে কিনা, সে নিয়ে ধোঁয়াশায় থাকে।

মোটের উপর একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতি পাবার বিষয়টি নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর। এক) কত বেশি পরিমাণ শক্তিশালী দেশ তাদের পিছনে রয়েছে, দুই) পূর্বতন রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে কতটা নিন্দিত তার উপর। পর্তুগিজ উপনিবেশ ইস্ট তিমোরে বিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশকে আক্রমণ করে ইন্দোনেশিয়া। সে সময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের মিত্রশক্তি হিসেবে সে সময়ে ইন্দোনেশিয়াকে প্রয়োজন ছিল পশ্চিমি শক্তিগুলির, ফলে ইস্ট তিমোর তত নজরে আসেনি। ১৯৯০-এ অক্ষশক্তির পরিবর্তন হয় এবং তার জেরে ২০০২ সালে স্বাধীনতা পায় ইস্ট তিমোর।

Advertisment