Advertisment

বিশ্লেষণ: পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?

নাসিক জেলার লাসালগাঁও দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ বাজার। লাসালগাঁওতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে সারা দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, সেখানে দাম কমলে সারা দেশে পেঁয়াজের দাম কমে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান রাষ্ট্রায়্ত্ত সংস্থা এমএমটিসি-কে এক লক্ষ টন পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন। পেঁয়াজের খুচরো দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারত পেঁয়াজ রফতানিকারক থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারী দেশে রূপান্তরিত হল।

Advertisment

পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেন?

এ বছরের মে মাস থেকে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর কারণ মূলত দুটি। নতুন ফসল উঠেছে দেরিতে এবং মূল পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র, কর্নাটক এবং মধ্য প্রদেশে পেঁয়াজ চাষে ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে মোট ২৭টি নতুন বিল পাশ করাতে চায় কেন্দ্র

অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ক্ষেতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ এসেছে কম। মহারাষ্ট্রে লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে জানুয়ারি মাসের শুরুতে যেখানে ছিল কুইন্টাল প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, সেখানে মে মাসের পর সে দাম বেড়ে যায় ১০০০ টাকার উপরে। নাসিক জেলার লাসালগাঁও দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ বাজার। লাসালগাঁওতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে সারা দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, সেখানে দাম কমলে সারা দেশে পেঁয়াজের দাম কমে। এখন প্রায় সব শহরেই পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।

তখনই রবি শস্যে খামতির কারণে সরবরাহ কমে গিয়েছিল। নাসিক, আমেদাবাদ সহ মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকার কৃষকরা রবি শস্যের চাষ করেন এপ্রিলের পর। এই ফসলে আর্দ্রতা কম থাকে বলে তা মজুত করার পক্ষে সুবিধাজনক। মাটির সংস্পর্শে এসে আর্দ্রতার কারণে যাতে পচে না যায় বা অঙ্কুর না বেরিয়ে যায়, সে কারণে কৃষকরা একটু উঁচু মাচা তৈরি করে এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। একে বলে কান্দা চাওল। অক্টোবরের পর নতুন শস্য আসে। ততদিন পর্যন্ত এই মজুত পেঁয়াজই বিক্রি করতে থাকেন কৃষকরা।

বাজারে সারা বছরের খাদ্য জোগায় রবি, প্রথম খারিফ (অক্টোবরের পর চাষ হয়) ও দ্বিতীয় খারিফ (জানুয়ারি-মার্চে চাষ হয়) শস্য। ২০১৮ সালের খরার দরুন এ বছরের রবি শস্য মার খেয়েছিল। বর্ষা দেরিতে আসায় প্রথম খারিফ ও অক্টোবরে অতিবৃষ্টির জন্য দ্বিতীয় খারিফের ফসল উঠতেও দেরি হয়েছিল। এপ্রিলে, মরশুমের শুরুতে কৃষকদের মজুত করা ২২ লক্ষ টন পেঁয়াজের মধ্যে মাত্র ৫-৬ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল। কৃষিমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে খারিফ শস্য চাষের জমির পরিমাণ ২০১৮-১৯ সালে যেখানে ছিল ২.৯৭ লক্ষ হেক্টর, সেখানে এ বছরে হয়েছে ২.৫৮ লক্ষ হেক্টর। এই হ্রাস মূলত ঘটেছে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী মহারাষ্ট্রে, যেখানে দেরিতে আসা বর্ষার দরুণ পেঁয়াজ চাষ প্রায় হয়ইনি।

আরও পড়ুন, মদ প্রসঙ্গ: মন ভিজছে বামদের

একই সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাটে সেপ্টেম্বর মাসের অসময়ের ব্যাপক বৃষ্টিপাতের জন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, যা মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণও বটে। মহারাষ্ট্র সারা দেশের মোট পেঁয়াজের ৩৫ শতাংশ উৎপাদিত হয়, সেখানে রবি ও খারিফ শস্যে ফলন কমে।

মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

জুন মাস থেকে রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্র পেঁয়াজের দামের দিকে নজর রেখে চলেছে। তাদের প্রথম সিদ্ধান্ত আসে জুন মাসে। দেশের বাইরে পেঁয়াজ রফতানিতে যে ১০ শতাংশ ভরতুকি দেওয়া হত, তা তুলে নেওয়া হয়। এর পর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানিমূল্য বাড়িয়ে টন প্রতি ৮৫০ ডলার করা হয়। এর কয়েক সপ্তাহ পরেই পেঁয়াজের রফতানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় এবং কতটা পেঁয়াজ মজুত করা যাবে, তার পরিমাণও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই পরিমাণ পাইকারি ক্ষেত্রে ৫০০ কুইন্টাল এবং খুচরো ক্ষেত্রে ১০০ কুইন্টাল।

মজুতের নির্ধারিত পরিমাণ মানা হচ্ছে না সন্দেহে গত ১১ নভেম্বর আয়কর দফতর ব্যবসায়ীদের মজুতের পরিমাণ ও তাঁদের খাতাপত্র পরীক্ষা সুরু করেন। তাঁরা নাসিকের ১৫ জন ব্যবসায়ীর অফিস ও মজুতস্থল পরিদর্শন করেন। সে রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, দাম নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই হানাদারি। তল্লাশির কয়েকদিন পরেই জেলা জুড়ে পেঁয়াজের দাম মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়। বেশ কিছু বড় ব্যবসায়ী সরকারের ভয়ে পাইকারি বাজার থেকে দূরে থাকেন।

দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য এক লক্ষ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত সরকারের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ।

এই সিদ্ধান্তে কী বদল হল?

রফতানি বন্ধ করার সময়েই সরকার এমএমটিসির সূত্রে টেন্ডারের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ২০০০ টন পেঁয়াজ আমদানির রাস্তা খুলে দিয়েছিল। সে টেন্ডারের ফল মেলেনি। তবে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করতে শুরু করেছিলেন। মনে করা হচ্ছে মুম্বইয়ের বন্দরে ২০০০ থেকে ৪০০০ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে এবং তা কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে পৌঁছবে।

আরও পড়ুন, অযোধ্যায় রাম মন্দির: অবশেষে সঙ্ঘ পরিবারের ইচ্ছা পূরণ

পাসওয়ানের ঘোষণার ফলে ভারত পেঁয়াজ রফতানিকারক থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারক দেশে পরিণত হল। গত আর্থিক বর্ষে ভারত রফতানি করেছিল ২১.৮২ লক্ষ টন পেঁয়াজ, যার দাম ৪৯৭.৯৭ মিলিয়ন ডলার। আমদানি করা হয়েছিল মাত্র ৭০৮০ টন, যার দাম ১.১২ মিলিয়ন ডলার। ভারত মূলত আফগানিস্থান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে, যদিও এই পেঁয়াজ কেউই পছন্দ করেন না বলে জানাচ্ছেন দেশীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী আরও বলছেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারের উপর কুপ্রভাব ফেলবে। তার কারণ যে সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে এসে পৌঁছবে, তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে আসবে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজও।

Advertisment