Advertisment

পাক সেনাপ্রধান বাজওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধি কী ইঙ্গিত করে?

এর পর পাকিস্তান চাইবে জম্মু কাশ্মীর নিয়ে ছক কষতে। এর মধ্যে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে জিহাদি জঙ্গি পাঠানো এবং আইএসআইয়ের নির্দেশে ভারতের অন্যত্র জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাও থাকতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bajwa Explained

গত এক দশকে এই নিয়ে তিনবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল পাক সেনাপ্রধানের

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সে দেশের সেনা প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার পদে থাকার মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে দিয়েছেন। আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইমরান।

Advertisment

এই নভেম্বরে ৫৯ হবে জেনারেল বাজওয়ার। তাঁর এবারের তিন বছরের মেয়াদকাল শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর, নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে।

গত এক দশকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনও সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ল পাকিস্তানে। ২০০৭ সালে পারভেজ মুশারফের পর যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ২০১০ সালে সেই আশফাক পারভেজ কায়ানির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।

কায়ানির পর যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেই রাহিল শরিফ অবশ্য নির্দিষ্ট তিন বছরই ওই পদে আসীন ছিলেন।

আরও পড়ুন, দেশের সুরক্ষায় কোন শক্তিশালী পদ বানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?

পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী বনাম সেনাপ্রধান

পাকিস্তান তার জন্মের পর থেকে অর্ধেক সময় জুড়েই শাসিত হয়েছে সেনা দ্বারা, সেনা প্রধানরা সে দেশে সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন থেকেছেন তার চেয়েও বেশি সময় জুড়ে।

তত্ত্বগতভাবে দেখলে, সেনাপ্রধানকে নির্বাচনের অধিকার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, এ ব্যাপারে তিনি চাইলে ক্ষমতাসীন সেনাপ্রধান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাহায্য নিতেও পারেন, নাও পারেন।

কিন্তু কার্যত বিষয়টি আরও জটিল। সেখানে অসামরিক সরকারের সঙ্গে সামরিকবাহিনীর সম্পর্ক প্রায়ই টানাপোড়েনের মধ্যে চলে যায়। প্রধান মন্ত্রীরা চান তাঁদের নির্বাচিত সেনাপ্রধানরা অনুগত থাকবেন তাঁদের প্রতি।

নওয়াজ শরিফ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর সময়কালে তিনি মোট ৬ জন সেনাপ্রধান নির্বাচন করেছেন। বাজওয়া ও রাহীল শরিফ বাদ দিলে তিনি মুশারফকে নির্বাচিত করেছিলেন ১৯৯৮ সালে। এর আগে তিনি বেছেছেন জেনারেল আসিফ নওয়াজ, আব্দুল ওয়াহিদ কাকর এবং জাহাঙ্গির কারামতকে।

নওয়াজ কখনও সিনিয়রিটির ব্যাপারে বিশেষ নজর দেননি, তাঁর মূল নজর থাকত নিজের লোক বাছাইয়ের দিকে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে মোটামুটি ভালই উৎরে গিয়েছিলেন তিনি, শুধু একবার ছাড়া। ১৯৯৯ সালে মুশারফ সেনা বিদ্রোহ ঘটিয়ে নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেন এবং বহু বছর ধরে পাকিস্তানের বাইরে কাটাতে হয় তাঁকে।

উল্টোদিকে ইমরান হলেন সেনাবাহিনীর লোক এবং নিজের এ আসনের জন্য তিনি বহুভাবে জেনারেলদের কাছে কৃতজ্ঞ, বিশেষ করে জেনারেল বাজওয়ার কাছে।

মেয়াদের প্রথম বছরে তিনি সামরিক ও অসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে চমৎকার মেলবন্ধন ঘটাতে পেরেছেন বলে মনে করছেন সকলে। ইমরান সরকারের কঠোর আর্থিক নীতির বাজওয়া কর্তৃক সাম্প্রতিক সমর্থন দেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন বলেই স্বীকৃত হয়েছে।

বাজওয়ার মেয়াদবৃদ্ধি তাই ইমরান খানের একক সিদ্ধান্ত নয় বলেই মনে হয়।

আরও পড়ুন, প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন আলাদা চোখে দেখতে বললেন সম্পদ সৃষ্টিকারীদের?

পাকিস্তানের টানাপোড়েনের সময়

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা এবং তার পর ভারতের বালাকোট উত্তরের সময়কাল থেকেই ভারত পাক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছেই।

জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে ইমরান খানের মোদী ও ভারতের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মৌখিক আক্রমণ ইসলামাবাদের হতাশা ও অসহায়তাকেই প্রকট করছে।

এর পর পাকিস্তান চাইবে জম্মু কাশ্মীর নিয়ে ছক কষতে। এর মধ্যে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে জিহাদি জঙ্গি পাঠানো এবং আইএসআইয়ের নির্দেশে ভারতের অন্যত্র জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাও থাকতে পারে।

পাকিস্তানের হাত অবশ্য আটকে থাকবে এফ এ টি এফ-এর নজরের সামনে। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থা পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অক্টোবর মাসে। মার্কিন সাহায্য ক্রমশ কমে আসছে, আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ, সব মিলিয়ে পাক অর্থীতি ধসে পড়ার মুখে।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান মনে করেছে এই অবস্থায় নতুন সেনাপ্রধান আনার চেয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখাই ভাল।

আরও পড়ুন, সংঘ পরিবার ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর

ভারতের কিছু যায় আসে না

বাজওয়াকে স্বপদে বহাল রাখার বিষয়টি একেবারেই পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ক্ষমতার খেলা এবং সেখান পরিস্থিতি ও প্রাধান্যের উপর নির্ভরশীল।

পাকিস্তানের এ পছন্দ ভারতের কাছে খুব একটা প্রয়োজনীয় বিষয় নয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল প্রকল্প এত সহজে বদলানোর নয় এবং ভারতের জবাবও তেমনই থাকবে।

জেনারেল বাজওয়া ভারতের কাছে পরিচিতও বটে। সে শুধু সেনাপ্রধান হিসেবে নয়, যখন তিনি পাক সেনাবাহিনীর ১০ কর্পসের কম্যান্জার ছিলেন তখন থেকে। ওই বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা সন্নিহিত এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত।

Read the Full Story in English

pakistan
Advertisment