Advertisment

ভ্যাকসিন নিলেই প্যারাসিটামল, হতে পারে হিতে বিপরীত! কেন, কী ভাবে?

কেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মুম্বইয়ের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী।

জোরকদমে কোভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের। এ দেশে এখনও পর্যন্ত এই একটি ভ্যাকসিনই দেওয়া হচ্ছে কমবয়সিদের। এবং ভ্যাকসিনের পর বাড়িতে প্যারাসিটামল খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রায় নিয়ম করে, আগেও খাওয়ানো হচ্ছে অনেক সময়ে। ডাক্তারের নির্দেশের পরোয়া না করেই হচ্ছে এটা। কোভ্যাক্সিনের নির্মাতা ভারত বায়োটেক বলছে, কোভ্যাক্সিন নেওয়ার পর প্যারাসিটামল কিংবা পেনকিলার খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

Advertisment

তাদের বক্তব্য, যে কোনও ভ্যাকসিনের মতোই কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বেশির ভাগই তা মৃদু। কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যায়। কিন্তু অনেকে পেনকিলার বা প্যারাসিটামল খেয়ে নেন কার্যত চোখ বুজে। এমনকি কোনও ভ্যাকসিন কোনও প্রতিক্রিয়া তৈরির আগেই ওষুধ খেয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ। বাচ্চাদের বেলায় অভিভাবকরা ভ্যাকসিনের পর ওষুধ এগিয়ে দিচ্ছেন অনেক সময়। বলছেন, জ্বর আসার আগেই খেয়ে নাও তো ওষুধ, আগে থেকেই খুঁটিটা বেঁধে ফেলা ভাল! ভ্যাকসিন সেন্টার থেকেও অনেক সময় প্যারাসিটামল-নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটা পুরোপুরি ভুল হচ্ছে, ভুল জমতে জমতে বোধ হয় পর্বত হয়ে গিয়েছে।

একটি টুইটে ভারত বায়োটেক বলেছে, 'কম বয়সিদের কোভ্যাক্সিন দেওয়ার পর, তিনটি ৫০০ গ্রামের প্যারাসিটামল খেতে বলা হচ্ছে কিছু সেন্টার থেকে। কিন্তু প্যারাসিটামল কিংবা পেনকিলার খাওয়ার দরকার নেই কোভ্যাক্সিনের পর।' ভারত বায়োটেক জানাচ্ছে, ৩০ হাজার জনের উপর কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ১০ থেকে ২০ শতাংশের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। গত বছরের নভেম্বর মাসে ল্যানসেট পত্রিকায় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল এ সম্পর্কে। বায়োটেক সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেছে, যতক্ষণ না কোভ্যাক্সিন নেওয়ার পর কাউকে নির্দিষ্ট ভাবে প্যারাসিটামল খেতে বলছেন না চিকিৎসকরা, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি সেবন নিষ্প্রোজন।

যুক্তিটা কী?

ইমিউনোলজিস্ট গগনদীপ কাঙ্গ বলছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সামান্য প্রতিক্রিয়া বা প্রদাহ তৈরি হলে অ্যান্টিবডি বেশি তৈরি হয়। যদি কেউ প্রতিষেধকের পরই প্রদাহ-বিরোধী (প্যারাসিটামল বা পেনকিলার) খেয়ে নেন, তা হলে অ্যান্টিবডি কম তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। গবেষণা থেকেও এমনটা সামনে এসেছে। আইসিএমআরের ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের সদস্য ডা. সঞ্জয় পুজারী বলছেন, ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমই হচ্ছে। হলেও এক-দু'দিন মাত্র থাকছে। প্যারাসিটামল কিংবা এই জাতীয় ওষুধ ভ্যাকসিনের কার্যকলাপে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা জানা যায়নি এখনও। কিন্তু এই ধরনের ওষুধ ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে বা পরে খাওয়ার জন্য সাধারণ ভাবে বলা হচ্ছে না।

প্যারাসিটামল এবং শিশুরা

ক্লাউডলাইন হসপিটালের আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অধিকর্তা (পশ্চিম) ডা. উমেশ বৈদ্য বলছেন, 'যতক্ষণ না পর্যন্ত জ্বর নির্দিষ্ট সীমার বাইরে যাচ্ছে, প্যারাসিটামল দেওয়া যায় না বাচ্চাদের। ভ্যাকসিনের সহ্যশক্তি কিন্তু বড়দের চেয়ে শিশুদের অনেক বেশি।' আর প্যারাসিটামল প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, 'এই ওষুধ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে। এটি সুরক্ষিত ওষুধ। ফলে ভ্যাকসিনের পর জ্বর বা এমন কিছু হলে এইটি দেওয়াই যায়।' সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অমিত দ্রাবিড়ের মত অনুযায়ী, প্যারাসিটামল লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে হবে। এটি লিভার টক্সিক ওষুধ। ফলে হরেদরে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর প্যারাসিটামল খাওয়ানো যায় না। একমাত্র প্রতিষেধকের পর নির্দিষ্ট উপসসর্গ দেখা দিলেই, এটি দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন করোনা মুক্তির পথটা কি অনন্ত বুস্টার ডোজে, নাকি মুক্তির উপায় এখনও অন্ধকারে?

কেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ভ্যাকসিনের ফলে দেহে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যখন তৈরি হচ্ছে, সেই সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। এটা নানা জনের ক্ষেত্রে নানা রকম হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগই উধাও হয়ে যায় দিন কয়েকের মধ্যে। কিছু জনের তো কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই হয় না এবং অ্যালার্জি জনিত সংক্রমণও খুব কম সংখ্যকের হয়ে থাকে। মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে এমনটাই। সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, গা-হাতপা ব্যথা, মাথা ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্তিম হয়ে ওঠা, জ্বর, বমি-বমি ভাব ইত্যাদি। সিডিসি বলছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ওষুধ খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে। আইবিউপ্রোফেন,অ্যাসিটোমিনোফেন, অ্যাসপিরিন (শুধুমাত্র ১৮ বছর এবং ১৮-ঊর্ধ্বদের) প্রভৃতি ওষুধ একেবারেই নিজ-ইচ্ছায় খাওয়া উচিত নয়। ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে বা পরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ভয়েও কোনও ওষুধ খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। সিডিসিও বলছে, ভ্যাকসিনের উপর ওষুধের কী প্রভাব তা এখনও অজানা। যদি কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নিয়মিত খেয়ে থাকেন কেউ, তা-ও প্রতিষেধক নেওয়ার আগেই খেয়ে নেওয়া উচিত।

coronavirus paracetamol
Advertisment