সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় কৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব তথা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই।
বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রের সর্বপ্রাচীন সদস্যদের অন্যতম তো বটেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।
সারদা মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তলব করার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আর এক পা এগিয়ে গেল সিবিআই।
আরও পড়ুন, নতুন চিটফান্ড বিরোধী বিল লগ্নিকারীদের কাছে কেন সুবিধাজনক
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আগে ডেরেক
গত মাসেই সিবিআই তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা এবং দলের অন্যতম পরিচিত মুখ ডেরেক ওব্রায়েন কে ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই, সেও এই সারদা মামলাতেই।
ডেরেক ওব্রায়েন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র জাগো বাংলার প্রকাশক। এই প্রকাশনার আওতায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন এখন সিবিআইয়ের স্ক্যানারে। জাগো বাংলার সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল ডেরেকেরও আগে।
সারদা ও তৃণমূল কংগ্রেস
সারদা কেলেঙ্কারি ও তার মাস্টারমাইন্ড সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যুক্ত কিনা সে কথা জানতে তৃণমূল কংগ্রেসের যে বহু নেতানেত্রীদের ডেকে পাঠানো হয়েছে, তাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সর্বশেষ সংযোজন। সারদা সাম্রাজ্য তৈরির সময়ে সুদীপ্ত সেন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, এবং বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমও অধিগ্রহণ করেছিলেন।
অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় এবং বলিউডের প্রাক্তন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী ছিলেন সারদার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর।
প্রাক্তন কৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে মিডিয়া গোষ্ঠীর সিইও হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। দেড়হাজার সাংবাদিককে নিয়োগ করা হয়েছিল তো বটেই. একই সঙ্গে ২০১৩ সালে এই গোষ্ঠী পাঁচটি ভাষায় আটটি সংবাদপত্র চালাত। শোনা য়ায় কুণাল ঘোষের বেতন ছিল মাসিক ১৬ লক্ষ টাকা।
তৃণমূলের এক প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসুও সারদার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
একদা অতি ক্ষমতাবান তৃণমূল নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র সারদা কর্মী ইউনিয়নের নেতা ছিলেন।
তদন্ত চলাকালীন সিবিআই দশজনেরও বেশি তৃণমূল বিধায়ক ও সাংসদকে জেরা করেছে, গ্রেফতার করেছে সৃঞ্জয় বসু, মদন মিত্র ও কুণাল ঘোষকে।
সিবিআই তৃণমূলের প্রাক্তন সহ সভাপতি তথা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, জেরা করেছে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কুদেব পাণ্ডাকে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে অভিনেত্রী ও তৃণূলের বীরভূমের বর্তমান সাংসদ শতাব্দী রায়কে, প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ ও অভিনেতা তাপস পালকেও।
সারদা মামলায় ইডি জেরা করেছে তৃণমূলের প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে।
২০০০ সালের গোড়ার দিকে সুদীপ্ত সেন সারদা গোষ্ঠীর অধীনে যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্প শুরু করেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বেশি রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিশাল সংখ্যক এজেন্টদের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হত, এজেন্টদের কমিশন দেওয়া হত বিপুল পরিমাণে।
দ্রুত ২৫০০ কোটি টাকা তুলে ফেলে সারদা। ফিল্মস্টারদের এনডোর্সমেন্ট পায় এই গোষ্ঠী, বিনিয়োগ করে ফটুবল ক্লাবে, সংবাদ মাধ্যমে, শুরু করে সংবাদমাধ্যম এবং হয়ে ওঠে বড় দুর্গাপুজোর স্পনসর।
আরও পড়ুন, সারদার ক্ষতিগ্রস্তরা কেমন আছেন?
বাংলা ছাড়িয়ে এদের কাজকর্ম বিস্তৃত হয়ে পড়ে ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরায় এবং এক সময়ে তাদের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা পোঁছয় ১৭ লক্ষে।
সেবি নজর রাখছিল সারদার উপর। ২০১২ সালে তারা সারদাকে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে নিষেধ করে। এর পরের বছরই এই প্রকল্প প্রথমবার ধসে পড়ে, সে বছর সারদার নগদ ব্যয় ছিল আয়ের চেয়ে বেশি। ২০১৩ সালের গ্রীষ্মের মধ্যেই গোটা প্রকল্প সম্পূর্ণ ধসে পড়ে। বিনিয়োগকারী ও এজেন্টরা প্রতিশ্রুত বকেয়া না পেয়ে লাইন দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে শুরু করেন।
সারদা মামলা- রাজনৈতিক বিতর্ক
সারদাকে তণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল ভাবে ব্যবহার করেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে ও পরে বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে এই নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছে।
এ বছরের গোড়াতেই মমতা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক হাই প্রোফাইল আইপিএস অফিসারকে জেরা করে সিবিআই। সারদা মামলা যথাযথভাবে তদন্ত না করার ব্যাপারে সন্দেহের আঙুল ওঠে তাঁর দিকে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআইকে তাদের দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলেছে।
Read the Full Story in English