পাতিয়ালায় পুলিশের হাত কাটার ঘটনায় উঠে আসছে নিহংদের নাম- এরা কারা?

সারা বছর এরা নিজেদের ডেরায় থাকে, আনন্দপুর সাহিব, দমদমা সাহিব তালওয়ান্দি সাবো এবং অমৃতসরের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এরা নিজেদের যুদ্ধ কৌশল ও ঘোড়সওয়ারির কৌশল প্রদর্শন করে।

সারা বছর এরা নিজেদের ডেরায় থাকে, আনন্দপুর সাহিব, দমদমা সাহিব তালওয়ান্দি সাবো এবং অমৃতসরের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এরা নিজেদের যুদ্ধ কৌশল ও ঘোড়সওয়ারির কৌশল প্রদর্শন করে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sikh, nihang sect

ধর্ম জাতি বর্ণ নির্বিশেষে যে কেউ এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তবে শিখ ঐতিহ্য অনুসারে গোষ্ঠীভুক্তির সময়ে তাঁর চুল অকর্তিত থাকতে হবে

পাতিয়ালায় লক ডাউন চলাকালীন পুলিশের উপর হামলা ও এক এএসআইয়ের হাত কেটে দেবার ঘটনার পর নিহংরা ফের পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন।

Advertisment

 কী এই নিহং?

নিহংরা শিখ যোদ্ধা, যাদের চিহ্নিত করা যায় পরনের নীল জোব্বা, তরবারির মত ধারালো অস্ত্র এবং রংবেরংয়ের পাগড়ি দিয়ে।

শিখ ইতিহাসবিদ ডক্টর বলবন্ত সিং ধিলোঁ বলেছেন পার্সিতে এর অর্থ কুমির হলেও তরবারি ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থেকে মনে হয় এ শব্দটি এ ক্ষেত্রে এসেছে সংস্কৃত নিঃশঙ্ক থেকে, যার অর্থ ভয়হীন, নিষ্কলঙ্ক, খাঁটি, এবং পার্থিব লাভালাভ সম্পর্কে ঔদাসীন্য থেকে।

Advertisment

কোভিড ১৯ ও বয়স্কদের করণীয়- বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

ঊনবিংশ শতকের ঐতিহাসিক রতন সিং ভাঙ্গু নিহংদের বর্ণনা করেছেন বেদনা বা বিলাসে যাঁরা উদাসীন, ধ্যান, প্রায়শ্চিত্ত ও দান যাঁদের ব্রত এবং সম্পূর্ণ যোদ্ধা হিসেবে।

 কবে থেকে এঁদের শুরু?

ধিলোঁ বলছেন, এঁদের ১৬৯৯ সালে গুরু গোবিন্দ সিংয়ের খালসা নির্মাণের সময় থেকে হদিশ মেলে। তিনি বলছেন, গুরু গ্রন্থ সাহিবেও নিহং শব্দের উল্লেখ মেবে, যার অর্থ নির্ভয় ও বন্ধনহীন ব্যক্তি।

ধিলোঁর কথায়, আরেকটি মতও রয়েছে। গুরু গোবিন্দ সিংয়ের ছেলে ফতেহ সিং (১৬৯৯-১৭০৫) একবার গুরুর উপস্থিতিতে নীল জোব্বা, নীল পাগড়ি পরে উপস্থিত হবার পর তিনি বলেছিলেন নিহংদের পোশাক এমনটাই হওয়া উচিত।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুপারকম্পিউটার- কীভাবে?

নিহংরা অন্য শিখ ও শিখ যোদ্ধাদের চেয়ে কোথায় আলাদা ?

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল জেমস স্কিনারের মতে, খালসা শিখরা দুভাগে বিভক্ত ছিল, এক, যারা গুরু গোবিন্দ সিংয়ের কথা মেনে যুদ্ধের সময়ে নীল পোশাক পরত, আর অন্যদল, যে কোনও পোশাক পরত। ধিলোঁ জানান, নিহংরা কঠোরভাবে খালসা বিধি মেনে চলত।

নিহংদের মধ্যে এক ধরনের পানীয় খুবই জনপ্রিয় ছিল, যাতে থাকত চিনেবাদাম, এলাচ, পোস্তদানা, মরিচগুঁড়ো, গোলাপের পাপড়ি এবং তরমুজের বীজ। এর নাম শারদাই বা শরবতি দেঘ। এর সঙ্গে সামান্য সিদ্ধি দিলে তার নাম হবে সুখনিদান।

একটু বেশি পরিমাণে সিদ্ধি দিয়ে দিলে তার নাম হয় শহিদি দেঘ।

শিখ ইতিহাসে এদের ভূমিকা কী?

প্রথম শিখ সাম্রাজ্যের (১৭১০-১৫) পতনের পর শিখ পন্থ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিল নিহংরা। সে সময়ে মুঘল রাজন্যবর্গ শিখদের হত্যা করছিল। এরপর ১৭৪৮-৬৫ সময়কালে আফগান আক্রমণকারী আহমেদ শাহ দুরানির সময়েও তারা ব্যাপক ভূমিকা নেয়। খালসা সেনা যখন ১৭৩৪ সালে পাঁচটি ব্যাটালিয়নে বিভক্ত হয়ে যায়, তখন একদল নিহং বা অকালিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাবা দীপ সিং শহিদ।

চিনের উপর ট্রাম্পের গোঁসা- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মগুলি কীরকম?

নিহংরা শিখদের ধর্মীয় বিষয়ক দায়িত্ নিয়েছিল অমৃতসরের অকাল বুংগা (বর্তমান অকাল তখতে)। তারা নিজেদের শিখ প্রধানের অধীন মনে করত না এবং স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখত। অকাল তখতে তারা সরবর খালসা করত এবং প্রস্তাব পাশ করত।

১৮৪৯ সালে শিখ সাম্রাজ্যের পতনের পর যখন পাঞ্জাবের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ স্বর্ণমন্দিরের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করে, তখন এই অংশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

ডক্টর ধিলোঁর মতে, নিহং প্রধান বাবা সান্তা সিং ভারত সরকারের নির্দেশে অকাল তখত পুনর্গঠন করতে গিয়ে মূল স্রোতের শিখদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ১৯৮৪ সালে অপারেশন ব্লুস্টারের সময়ে এই ঘটনা ঘটে। অজিত সিং পুহলার মত কিছু নিহং শিখ জঙ্গিদের খতম করতে পাঞ্জাব পুলিশকে সাহায্য করে।

 এখন এদের অবস্থা কী?

 ধিলোঁ বলছেন এরা একটা ক্ষুদ্র সম্প্রদায়। দশটিরও বেশি গোষ্ঠী রয়েছে এদের, এক এক গোষ্ঠীতে এক একজন নেতা (জাঠোদার) রয়েছেন, এরা এখনও পুরনো ঐতিহ্য মেনে চলে।

এদের মধ্যে বুধা দল, তরুণা দল এবং তাদের গোষ্ঠীগুলিই প্রধান। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে এরা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন আজ।

সারা বছর এরা নিজেদের ডেরায় থাকে, আনন্দপুর সাহিব, দমদমা সাহিব তালওয়ান্দি সাবো এবং অমৃতসরের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এরা নিজেদের যুদ্ধ কৌশল ও ঘোড়সওয়ারির কৌশল প্রদর্শন করে।

পাতিয়ালার পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির গুরু গোবিন্দ সিং চেয়ারের প্রফেসর ইন চার্জ ডক্টর গুরমিত সিং সিধুর কথায় আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে গুরু গ্রন্থ সাহিব এবং তার বহির্জাগতিক যোগাযোগের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, যার ফলে সমস্যা হচ্ছে এবং অনৈতিক কাজ কর্ম হচ্ছে। এর আগে নিহংরা কখনও নিরস্ত্র ব্যক্তিকে আক্রমণ করত না।

নিহং কারা হতে পারে?

বুধা দল প্রধান বাবা বলবীর সিংয়ের মতে ধর্ম জাতি বর্ণ নির্বিশেষে যে কেউ এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তবে শিখ ঐতিহ্য অনুসারে গোষ্ঠীভুক্তির সময়ে তাঁর চুল অকর্তিত থাকতে হবে।

তাকে সর্বদা পঞ্চবাণী মনে রাখতে হবে, প্রতিদিন রাত একটার সময়ে স্নান করতে হবে, সকালে ও সন্ধ্যায় প্রার্থনা করতে হবে।

যাঁরাই এই শর্তাবলী পূরণ করতে পারেবেন তাঁদের অমৃত সঞ্চার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিখ ধর্মে গ্রহণ করা হবে. তাঁকে একটি নতুন নাম দেওয়া হবে এবং গুরু গোবিন্দ সিং খালসা প্রতিষ্ঠার সময়ে যে জোব্বা পরেছিলেন এবং যে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, সেগুলিই তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, বলে জানালেন বলবীর সিং। তিনি একই সঙ্গে জানিয়েছেন পাতিয়ালায় পুলিশকর্মীদের উপর যারা হামলা করেছে তারা বুধা দলের কেউ নয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus