Advertisment

Jammu and Kashmir Rail: রেলযোগে ভূস্বর্গ দর্শন! কিছুদিনের মধ্যেই বদলে যাবে উপত্যকার হালচাল?

Jammu and Kashmir: জম্মু ও কাশ্মীরের যখন ডোগরা রাজারা ছিলেন, সেই সময় প্রথম রেললাইনটি ১৮৯৭ সালে জম্মু এবং শিয়ালকোটের মধ্যে সমতলভূমিতে ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Jammu and kashmir, PM modi

Jammu and kashmir-PM modi: মঙ্গলবার, ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, জম্মুতে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা ও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংকেও দেখা যাচ্ছে। (পিটিআই ছবি)

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে বৈদ্যুতিক ট্রেন। এতদিন যা অকল্পনীয় ছিল, এবার সেটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। কাশ্মীরের বানিহাল থেকে সাঙ্গলদান পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পের লক্ষ্য, কাশ্মীরের বারামুল্লাকে জম্মুর উধমপুরের সঙ্গে যুক্ত করা।

Advertisment

বানিহাল-সাঙ্গলদান রেললাইন
বানিহাল থেকে সাঙ্গলদানের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার রেলপথের ৯০ শতাংশেরও বেশি লাইন, পার্বত্য রামবান জেলার টানেলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দেশের দীর্ঘতম ১২.৭৭ কিলোমিটার টানেল (টি-৫০)। এই পথে ১৬টি সেতু রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও উদ্ধারের জন্য এখানে ৩০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি এস্কেপ টানেল আছে। প্রকল্পটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৫,৮৬৩ কোটি টাকা।

কেন এই টানেল গুরুত্বপূর্ণ?
ভ্রমণের বিকল্প পথ

রাস্তাগুলো ব্যবহারযোগ্য না হলেও উপত্যকায় ভ্রমণের বিকল্প পথ হিসেবে এই রেললাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ভূমিধসের কারণে রামবান এবং বানিহালের মধ্যে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ থাকলে জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে যাতায়াতের বিকল্প পথে ট্রেনটি সাঙ্গলদানে পৌঁছতে পারবে। আর তাতে যোগাযোগের একটা পথ খোলা থাকবে। আবার কেউ রামবান শহর থেকে সড়কপথে ৩০-৩৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে পারেন। তারপর ট্রেনে চেপে কাশ্মীরে যেতে পারেন।

পর্যটন এবং অর্থনীতির প্রচার
এই ট্রেনপথের মাধ্যমে জম্মু বিভাগের দূরবর্তী অঞ্চলগুলো পর্যটকদের জন্য খুলে গেল। যার জেরে উপত্যকায় আরও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের পথ সুগম হল। এই অঞ্চলে রয়েছে বিখ্যাত গরম জলের ঝরনা। যা, সাঙ্গলদান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জায়গাটা মনোরম গল উপত্যকার কাছাকাছি। উন্নত সড়ক যোগাযোগের অভাবে এই এলাকাগুলো এখনও পর্যন্ত পর্যটকদের কাছে অনাবিষ্কৃতই রয়ে গিয়েছে।

chenab bridge
সেতুটি নদীতল থেকে ১,১৭৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ৩৫ মিটার লম্বা। (গজেন্দ্র যাদবের এক্সপ্রেস ছবি)

এখনও অনেক কাজ বাকি
এই উপত্যকা এখনও মূল ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ক থেকে অনেকটাই দূরে। উপত্যকার এই রেল নেটওয়ার্ককে ভারতীয় রেলের মূল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা, মোট ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের মধ্যে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০৯ কিলোমিটার চালু করা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে উপত্যকাটিকে ভারতীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মূল উপত্যকার সঙ্গে সংযুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ৬৩০ কিলোমিটার কাজ বাকি আছে। এই কাজও প্রায় শেষের দিকে। যেখানে কাজ চলছে, সেটা রিয়াসি জেলার মধ্যে পড়ে। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই রেলওয়ে সেতুটি চেনাব নদীর তল থেকে ১,১৭৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ৩৫ মিটার লম্বা।

জম্মু ও কাশ্মীরের রেলপথের ইতিহাস
জম্মু ও কাশ্মীরের যখন ডোগরা রাজারা ছিলেন, সেই সময় প্রথম রেললাইনটি ১৮৯৭ সালে জম্মু এবং শিয়ালকোটের মধ্যে সমতলভূমিতে ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল। ১৯০২ এবং ১৯০৫ সালে, রাওয়ালপিন্ডি এবং শ্রীনগরের মধ্যে ঝিলমের পথ ধরে একটি রেললাইন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা অবিভক্ত ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাশ্মীর উপত্যকাকে সংযুক্ত করবে। কিন্তু, জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা প্রতাপ সিং চেয়েছিলেন রিয়াসি হয়ে জম্মু-শ্রীনগর লাইন হোক। তার ফলে, কোনও প্রকল্পই অগ্রসর হয়নি। দেশভাগের পর শিয়ালকোট পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। ভারতের রেল নেটওয়ার্ক থেকে জম্মু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে পাঠানকোট-জম্মু লাইনের উদ্বোধনের আগে পর্যন্ত, জম্মু ও কাশ্মীরের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশনটি ছিল পঞ্জাবের পাঠানকোট।

৮০ সালের পর
১৯৮৩ সালে, জম্মু এবং উধমপুরের মধ্যে একটি রেললাইনের কাজ শুরু হয়। ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনের আনুমানিক ব্যয় ছিল ৫০ কোটি টাকা। পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, প্রকল্পটি শেষ করতে ২১ বছর এবং ৫১৫ কোটি টাকা লেগেছে। ২০০৪ সালে শেষ হওয়া এই প্রকল্পে ২০টি বড় টানেল আছে। যার মধ্যে দীর্ঘতম টানেলটি ২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। মোট ১৫৮টি সেতু আছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চটি ৭৭ মিটার উঁচু। জম্মু-উধমপুর লাইনে কাজ চলতে থাকায়, কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৪ সালে উধমপুর থেকে শ্রীনগর এবং তারপর বারামুল্লা পর্যন্ত লাইন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল। এটি ছিল উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেললাইন (ইউএসবিআরএল) প্রকল্প। এই প্রকল্প ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ব্যয় অনুমোদিত হয়েছিল ২,৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০০২ সালের পরে গতি পায়।

জাতীয় প্রকল্প
প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এই প্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কারণ, এটি ছিল স্বাধীনতার পরে ভারতীয় রেলের দ্বারা গৃহীত সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পের একটি। এই প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে ৩৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি হয়েছে। লাইনটি উপত্যকার শ্রীনগর এবং বারামুল্লাকে ট্রেনের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। ভূমিধসের কারণে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে যানচলাচল হামেশাই বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় এই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল উপত্যকার সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সংযোগ বজায় রাখতে বড় ভূমিকা নেবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই রেলপথ নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী, সব আবহাওয়ায় খাপ খাওয়ানোর মত বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

Jammu to Sialkot train
জম্মু থেকে শিয়ালকোট ট্রেন, ব্রিটিশ জমানায় প্রাক্তন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে প্রথম রেল সংযোগ। (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)

চ্যালেঞ্জ এবং ব্যবস্থা
হিমালয় পর্বতমালায় অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে ধসপ্রবণ শিবালিক পাহাড়। শিবালিক এবং পিরপাঞ্জাল পর্বতগুলো ভূমিকম্পের দিক থেকে সবচেয়ে সক্রিয়। এই পর্বতগুলো ভূমিকম্পের চতুর্থ এবং পঞ্চম স্তরে রয়েছে। শীতকালে এখানে ভারী তুষারপাত হয়। এখানে সেতু এবং টানেল তৈরি বেশ কষ্টদায়ক। এখানে একটি টানেল এবং ৩২০টি সেতু-সহ ২০৫ কিলোমিটারেরও বেশি মোটরযানযোগ্য রাস্তায় ভারী যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণ সামগ্রী বহন আর শ্রমিকদের নির্মাণস্থলে নিয়ে যেতে খরচ হয়েছিল ২,০০০ কোটি টাকা। রাস্তাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ছিল পাহাড়ের মুখে, ৭০ ডিগ্রিরও বেশি বাঁক খাওয়ানো। এমন পাহাড়ি ভূখণ্ডে অত্যন্ত জটিল টানেল এবং বিশাল সেতু নির্মাণ প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং। রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়াররা এক্ষেত্রে একটি অভিনব হিমালয়ান টানেলিং পদ্ধতি (এইচটিএম) ব্যবহার করেছেন। যেখানে সাধারণ ডি আকৃতির পরিবর্তে সেতুর জন্য ঘোড়ার নালের আকৃতির সাপোর্টিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে, লাইনের নীচের অংশ একটি বক্ররেখার মত নীচে নেমে এসেছে। যা, আলগা মাটিতেও কাঠামোকে শক্তিশালী রেখেছে।

আরও পড়ুন- গুজরাতে সিগনেচার ব্রিজ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর, এখানে যা আছে, জানলে অবাক হয়ে যাবেন

এই রেলপথ চালু হওয়ায় সুবিধা
ট্রেনটি শ্রীনগর এবং জম্মুর মধ্যে যাতায়াতের সময়কে অর্ধেক করে দেবে। বর্তমানে সড়কপথে যেতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাগে। তা, তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় নেমে আসবে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, বন্দে ভারত ট্রেনগুলো লোকেদের জম্মু থেকে শ্রীনগরে পৌঁছে দিয়ে, একই সন্ধ্যায় ফিরিয়ে আনতে পারবে। ট্রেনটি দেশের অন্যান্য অংশে আপেল, শুকনো ফল, পশমিনা শাল, হস্তশিল্প- ইত্যাদির মতো পণ্যের ঝামেলামুক্ত পরিবহণ সহজতর করবে। কাশ্মীরের জনগণকে স্বল্পতম সময়ে পরিবহণের ব্যবস্থা করে দিয়ে আর পরিবহণ খরচ কমিয়ে উপকৃত করবে। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে উপত্যকায় দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র পরিবহণের খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। রেল মন্ত্রক জানিয়ছে, বানিহাল এবং বারামুল্লার মধ্যে চারটি কার্গো টার্মিনাল তৈরি করা হবে। এর মধ্যে তিনটির জন্য জমি ইতিমধ্যে চিহ্নিত করাও হয়ে গিয়েছে।

Rail Roko
Advertisment