Pran pratishtha: অযোধ্যার রাম মন্দিরে প্রতিমার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন এগিয়ে আসছে। ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠা। তার আগে ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। প্রাণপ্রতিষ্ঠার মূল অর্থ— মূর্তির মধ্যে প্রাণের প্রতিষ্ঠা করা। এই অনুষ্ঠানে বেদ এবং পুরাণের বিভিন্ন নিয়মকানুন পালিত হবে। প্রতিটির নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে।
প্রাণ প্রতিষ্ঠা কী?
প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল এমন একটি কাজ, যা একটি মূর্তিকে দেবতায় রূপান্তরিত করে। মূর্তির মধ্যে প্রার্থনা গ্রহণ করার এবং বর দেওয়ার ক্ষমতা দেয়। এই রীতি মানতে প্রতিমা নানা ধাপে তৈরি করতে হয়।
শোভাযাত্রা
এর প্রথম পর্যায় হল শোভাযাত্রা। বা প্রতিমা নিয়ে আসা। অযোধ্যায় রাম মূর্তির জন্য, শোভাযাত্রা ১৭ জানুয়ারি। এই শোভাযাত্রার সময়, মূর্তিকে ভক্তরা প্রণাম করেন। তাতে, তাঁদের ভক্তি মূর্তিতে প্রবেশ করে। যার ফলে, মূর্তি ভক্তি এবং ঐশ্বরিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এইভাবে, ভক্তই মূর্তিকে ঈশ্বরে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। একবার মূর্তিটি মণ্ডপে প্রবেশের পর শুরু হয় প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার অনুষ্ঠান। ড. দীপকভাই জ্যোতিষাচার্য, যিনি গুজরাটের ভাপিতে পরাশর জ্যোতিশালয় পরিচালনা করেন, তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে চলিত মূর্তি (গৃহস্থালির মূর্তি, যেগুলো সারানো যায়) এবং স্থির মূর্তি (মন্দিরের মূর্তি যা একবার আনা হয়)- উভয়ের জন্যই প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠিত হতে পারে। নয়াদিল্লির শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল সংস্কৃত ইউনিভার্সিটির বেদ বিভাগের অধ্যাপক ড. সুন্দর নারায়ণ ঝা বলেছেন, যখন প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্র জপ করা হয়, তখন মূর্তিকে জীবিত করার জন্য প্রার্থনা করা হয়।
অধিবাস
প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য একাধিক অধিবাস পালিত হয়। এক রাতের জন্য প্রতিমাকে জলে রাখা হয়। যাকে জলধিবাস বলে। এরপর তা শস্যে রাখা হয়। যাকে ধন্যাধিবাস বলে। ঝা জানিয়েছেন, যখন একটি মূর্তি তৈরি করা হয়, তখন কারিগরের যন্ত্রপাতি থেকে মূর্তির গায়ে বিভিন্ন আঘাত লাগে। এই আধিবাসগুলো এই ধরনের সমস্ত আঘাতকে নিরাময় করার জন্য পালিত হয়।
স্নান
প্রতিমাকে স্নান করানো হয়। BAPS স্বামীনারায়ণ সংস্থার মতে, এই আচারে ১০৮ রকমের উপকরণ- যেমন পঞ্চামৃত, বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল ও পাতার নির্যাসযুক্ত জল, গরুর শিং-এর ওপর ঢেলে দেওয়া জল এবং আখের রসও থাকতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল- নেত্রমিলন বা দেবতার চোখ খোলার অনুষ্ঠান।
চোখ খোলা
স্নান করানোর পরে মূর্তিকে জাগ্রত করা হয়। অনেক মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। বিভিন্ন ঈশ্বরকে আহ্বান করা হয়। মূর্তির বিভিন্ন অংশকে সজীব হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। মূর্তির চোখ হল সূর্য, বায়ু হল কান, চন্দ্র হল মন- এভাবে আহ্বান জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি সোনার সুই দিয়ে দেবতার চোখের চারপাশে অঞ্জন স্থাপন করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি পিছন থেকে করা হয়। ঝা বলেন, 'মূলত, কাকুদ পর্বতে পাওয়া একটি কালো পাথর ঘষে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কালো পাউডার তৈরি করাই রীতি। কিন্তু, যেহেতু সেই পর্বত এখন চিনে, তাই ঘি এবং মধু দিয়ে অঞ্জন তৈরি করা হয়।' একবার অঞ্জন দেওয়ার পর মনে করা হয় যে, দেবতার চোখ খুলেছে। তাঁর মধ্যে জীবন এসেছে। তিনি এরপর ভক্তদের আশীর্বাদ করতে পারবেন।
এই পর্যায়গুলো কোথা থেকে জানা গিয়েছে?
প্রাণ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি বেদে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন পুরাণ- যেমন মাৎস্য পুরাণ, বামন পুরাণ, নারদ পুরাণ- ইত্যাদিতেও এর বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
এমন মূর্তি আছে, যার প্রাণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই?
ঝা বলেছেন যে, গন্ডকি নদীতে পাওয়া শালিগ্রাম এবং নর্মদা নদীতে পাওয়া শিবলিঙ্গ নর্মদেশ্বরের, প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা তাঁদের মধ্যে দেবত্ব বহন করেন।
অসম্পূর্ণ মন্দিরে কি প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যায়?
ড. দীপকভাই বলেছেন, মন্দিরের নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা উচিত। প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে শুধুমাত্র গর্ভগৃহ সম্পূর্ণরূপে তৈরি থাকা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন- ‘বিজেপি-আরএসএস’-এর অনুষ্ঠান, রাম মন্দিরের উদ্বোধনে থাকবে না কংগ্রেস