তিনি কংগ্রেসের সেই প্রবাদপ্রতিম নেতা দলের প্রতি, নেতৃত্বের প্রতি যার নিষ্ঠা অনুজ রাজনীতিকদের কাছে শিক্ষনীয় ছিল আজীবন। তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দেশের জরুরী অবস্থা হোক কিংবা কংগ্রেস অন্দরে সঙ্কট, রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হাতশিবিরের 'চাণক্য' ছিলেন কীর্ণাহারের ভূমিপুত্র। কিন্তু যা হওয়ার ছিল, যে পদ পাওয়ার ছিল তা কিন্তু তিনি পাননি! কেন? না এর কোনও সরকারি কারণ নেই। থাকাও অসম্ভব। কিন্তু বেশ কয়েকটি ঘটনা যেন নির্দেশ দেয় সেই প্রশ্নের।
যেমন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে নাগপুরে গিয়েছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের বর্ষীয়াণ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। যে ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে সেই সময় আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতার এহেন আচরণে জল্পনা-বিভ্রান্তি বেড়েছিল রাজনৈতিক মহলে। তবে কি কংগ্রেস ছাড়ছেন প্রণব? দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল আজীবন। সেখানে কীভাবে সম্ভব? তিনি শেষজীবন পর্যন্ত কংগ্রেস ত্যাগ করেননি। তবে আরএসএস সভায় তাঁর অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তাঁর দলের নেতৃত্বরাই। জানান হয়েছিল প্রবীণ নেতার উপস্থিতি ধর্মীয় সংগঠন আরএসএস-এর ভাবনাকে সমর্থন করে, যা কংগ্রেস বিরোধী।
আরও পড়ুন, প্রয়াত প্রণব: বীরভূমের গ্রাম থেকে দিল্লি দরবার, এক অকল্পনীয় যাত্রা
১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকে কীভাবে কংগ্রেস তাঁর মজ্জায় প্রবেশ করেছিল তা লিখেছেন 'দ্য ড্রামাটিক ডিকে: দ্য ইন্দিরা গান্ধী ইয়ার্স' (The dramatic decade: The Indira Gandhi years) বইয়ে। হাত শিবিরের প্রতি তাঁর টান প্রসঙ্গে স্মৃতিবিজরিত প্রণব লিখেছেন কীভাবে প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি তাঁর পরিবার বাড়ির ছাদে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করতেন। শৈশবের সেইদিন নিয়ে লিখেছেন, "বাবা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গিয়ে গিয়ে খাওয়ার দিতেন স্থানীয়দের। প্রচার করতেন কংগ্রেস আদর্শ।" পরিবারের কংগ্রেসপ্রীতিকে নিয়ে বড় হওয়া প্রণব ১৯৬৯ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে। এরপর উত্থানের ইতিহাস। রাজ্যসভার সদস্য থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সাহচর্য। এমনকী ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পরও 'চোখের জল মুছে' তিনি একই ভাবে অনুগত ছিলেন। তবে কেন পেলেন না কুর্সি?
আরও পড়ুন, প্লিস ডোন্ট ফরগেট আই ওয়াস দ্য নম্বর টু অফ মিসেস ইন্দিরা গান্ধী, বলেছিলেন প্রণবদা’
বহু সুযোগ এসেছিল দলের কাছে। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু, রাজীব গান্ধীর ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রীসভা স্থাপন। কিন্তু কোনওদিন প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করাই হয়নি প্রণবকে। এমনকী, ১৯৮৪ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর রাজীব গান্ধী যখন তাঁর নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছিলেন, তখন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামটাই ছিল না। বইতে তিনি লিখেছেন, “আমি যখন মন্ত্রিসভা থেকে আমার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কথা জানলাম, তখন আমি বিধ্বস্ত এবং হতবাক হয়ে পড়েছিলাম। আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।” পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন, এক নজরে প্রণব জীবন, দেখুন বিরল কিছু ছবি
রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পরও দল কিন্তু তাঁকে সেই পদ দেয়নি। বরং পদপ্রার্থী ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। একসময় রাজীব জায়াকেই হাতে ধরে রাজনীতির পাঠ দিয়েছিলেন প্রণব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেন না প্রণব! ২০১২ সালে দেশের ত্রয়োদশতম রাষ্ট্রপতি হলেন তিনি। প্রশাসনিক সর্বোচ্চ পদের দায়িত্ব নিপুণভাবে সামলানো প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কী প্রধানমন্ত্রী পদ না পাওয়ার কোনও আক্ষেপ ছিল? অজানাই থেকে গেল!
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন