History of Ram temple: অযোধ্যায় রাম জন্মভূমিতে শ্রীরামের মন্দির তৈরির জন্য দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চলেছিল। যার ইতিহাস তিন দশক ধরে বদলে দিয়েছে ভারতীয় রাজনীতির গতিপথ। এই আন্দোলন পেরিয়েছে একের পর এক মাইলফলক। বিজেপির রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ বলবীর পুঞ্জ তাঁর সাম্প্রতিক বই, 'ট্রিস্ট উইথ'-এ বলেছেন, ১৭৫১ সালে মারাঠারা অযোধ্যা, কাশী এবং মথুরার নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে হস্তান্তর করার জন্য আওধ (অযোধ্যা)-এর নবাবের কাছে আবেদন করেছিল। দোয়াব অঞ্চলে পাঠান বাহিনীকে পরাজিত করতে আওধের নবাবকে সাহায্য করেছিল মারাঠারা। বদলে, অযোধ্যা-কাশী-মথুরা চেয়েছিল। ১৭৫৬ সালে আওধের নবাব সুজা-উদ-দৌলা আসন্ন আফগান আক্রমণের বিরুদ্ধে মারাঠাদের কাছে ফের সাহায্য চান। বদলে, মারাঠারা অনুরোধ করেছিল যে তিনটি স্থান (অযোধ্যা, কাশী, মথুরা) তাঁদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। যাইহোক, নবাব সুজা-উদ-দৌলা পরে পক্ষ পরিবর্তন করেন। তিনি আহমেদ শাহ আবদালির দলে যোগ দেন। ফলে, মারাঠাদের দাবিও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। এরপর ১৭৬১ সালে আহমেদ শাহ আবদালির কাছে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হন। তার ফলে মারাঠাদের দাবিও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
- ১৭৫১ সালে মারাঠারা অযোধ্যা, কাশী এবং মথুরার নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে হস্তান্তর করার জন্য আওধ (অযোধ্যা)-এর নবাবের কাছে আবেদন করেছিল।
- হাফিজুল্লাহ নামে একজন আদালতের আধিকারিক ১৮২২ সালে ফৈজাবাদ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
- ১৮৫৫ সালের ২৮ জুলাই বাবরি মসজিদের কাছে হনুমানগড়ি মন্দিরে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
বলবীর পুঞ্জ তাঁর বইয়ে লিখেছেন যে আইনি নথি বলছে, অযোধ্যা বিরোধটি ১৮২২ সালের। হাফিজুল্লাহ নামে একজন আদালতের আধিকারিক ১৮২২ সালে ফৈজাবাদ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল যে, রাজা দশরথের পুত্র ভগবান রামের জন্মস্থানে বাবরের দ্বারা নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে। সেই মসজিদ তৈরি হয়েছে অযোধ্যায় সীতা রসোইয়ের কাছে।
আরও পড়ুন- রাম মন্দির অভিষেকের দিনও রাবণের শ্বশুরের দেবীর আরাধনা, বিগ্রহ জাগ্রত, দাবি ভক্তদের
আরও পড়ুন- নকশাতেই বাজিমাত, রামমন্দির ফেরাতে চলেছে রামায়ণের যুগের পরিবেশ!
১৮৫৫ সালের ২৮ জুলাই বাবরি মসজিদের কাছে হনুমানগড়ি মন্দিরে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। দিনের শেষে, হিন্দুরা- নাগা সাধু এবং বৈরাগীদের নেতৃত্বে ৭০-৭৫ জন মুসলমানকে হত্যা করেছিল। মেজর জেনারেল জিডি আউটরাম সেই সময় নবাব ওয়াজিদ আলি শাহকে জানিয়েছিলেন যে শাহ গোলাম হুসেন নামে এক ব্যক্তি হনুমানগড়ি ধ্বংস করার জন্য একটি বড় বাহিনী জমায়েত করেছিলেন। কিন্তু, ধ্বংস করা দূর। হনুমানগড়ির মধ্যে সুরক্ষিত হিন্দুরা শুধুমাত্র হনুমানগড়িকে রক্ষাই করেনি। বরং সেই রক্তমাখা দিনে মুসলমানদের কাছ থেকে রামের জন্মস্থান (যে জায়গাটিতে ভগবান রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন) দখলও করেছিল। এমনটাই বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোধ্যা শিরোনাম মামলায়।
আরও পড়ুন- রামজন্মভূমি আন্দোলন কংগ্রেস ছাড়া অসম্পূর্ণ, গুরুত্ব পায়নি নেহরুর মতামতও
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, 'কথিত আছে যে, সেই সময় পর্যন্ত হিন্দু ও মুসলমানরা একইসঙ্গে মসজিদ-মন্দিরে উপাসনা করতেন। ব্রিটিশ শাসনের পর, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ঠেকাতে একটি রেলিং তৈরি করা হয়। যার মধ্যে মসজিদে মুসলমানরা প্রার্থনা করতেন। আর, বেড়ার বাইরে হিন্দুরা একটি মঞ্চ তৈরি করেছিল। যেখানে হিন্দুরা তাঁদের নৈবেদ্য দিতেন।' মির্জা জানের লেখা, 'হাদিগা-ই-শুহুদা' থেকে জানা যায়, ১৮৫৬ সালে আমির আলি আমেথাভি নামে একজন সৈন্যসামন্ত নিয়ে রাম জন্মভূমিতে হামলা চালান। কিন্তু, হামলাকারীরা ব্রিটিশ সৈন্যদের পালটা আক্রমণে মারা যায়। ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর, মহম্মদ সেলিম নামে একজন ব্যক্তি নিহাঙ্গ শিখদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। শিখরা বাবরি মসজিদের ভিতরে যজ্ঞ করেছিলেন। সেখানে নিশান সাহিব তৈরি করেছিলেন। আর, বাবরি মসজিদের ভিতরে 'রাম' শব্দটি লিখে দিয়েছিলেন। ওই দিনেই বাবরি মসজিদের মহম্মদ আসগর, এক বৈরাগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জানান। কারণ, ওই বৈরাগী মসজিদের উঠোনে একটি মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। আসগর ওই মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান।
এরপর ১৮৮৫ সালে জন্মস্থানের মহন্ত রঘুবর দাস, বাবরি মসজিদের কাছে কিন্তু চত্বরের মধ্যে রাম চবুত্রায় একটি রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি চেয়ে আদালতে যান। ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন তাঁর 'রাম ও অযোধ্যা' বইয়ে এই মামলার বিবরণ দিয়েছেন। তাতে জানা যায়, এতদিন পরও ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার প্রদান করা সম্ভব হয়নি এবং স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, এই যুক্তিতে আবেদনটি খারিজ করা হয়। এরপর ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সাল থেকে ফের শুরু হয় রাম মন্দির তৈরির আন্দোলনের লড়াই।
আরও পড়ুন- শুধু ভারত না! প্রাচীনকালে রামায়ণ ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে