Advertisment

কেবল অশোধিত তেল নয়, চিনির বাজারেও দুর্বিপাক

তেলের দাম যখন বেশি থাকে, তখন বিশেষ করে ব্রাজিলের কারখানাগুলিতে আখ থেকে ৯৯ শতাংশের বেশি খাঁটি অ্যালকোহল যুক্ত ইথানল তৈরি করে, যা পেট্রোলে মেশানো হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid 19, Sugar Price

উত্তর প্রদেশের কারখানাগুলি ২০১৯-২০ মরশুমে ৩২হাজার কোটি টাকার আখ মাড়াই করেছে, কিন্তু দিতে পেরেছে মাত্র ১৬,৪৫৬ কোটি টাকা

শুধু ওয়েস্ট টেক্সাসের অশোধিত তেলের দামই ২০ এপ্রিল -৩৭.৬৩ ডলার প্রতি ব্যারেলে পর্যবসিত হয়নি। ২১ এপ্রিল নিউ ইয়র্কে মে মাসের জন্য অপরিশোধিত চিনির দাম প্রতি পাউন্ডে কমেছে ৯.৭৫ সেন্ট। ২০০৮ সালের ৯ জুন এর পরে (পাউন্ড প্রতি ৯.৭০ সেন্ট হ্রাসের) এরকম আর ঘটেনি। এমনকি ভুট্টা ও পাম তেলের দামও কমার পথে।

Advertisment

বিশ্ব পর্যায়ে চিনির দামের পতন কেন?

কোভিড ১৯ মোকাবিলায় সারা বিশ্বের বহু দেশে লকডাউন চলবার কারণে আর্থিক কর্মসূচি প্রায় শূন্য, ফলে চাহিদায় ভাটা পড়েছে।  কিন্তু অতি সম্প্রতিকালের আগে পর্যন্ত দারুণ গতিতে দৌড়োচ্ছিল। প্রায় প্রতিটি পর্যবেক্ষণেই দেখা যাচ্ছিল, ২০১৯-২০ (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর) মরশুমে উৎপাদন ঘাটতি হবে ৮-৯ মিলিয়ন টন। ১২ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে অপরিশোধিত চিনির আগামী মাসের চুক্তি যখন শেষ হয়, তখন তার দাম উঠেছিল প্রতি পাউন্ড ১৫.৭৮ সেন্ট, ২০১৭ সালের মে মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ। সেখান থেকে ১০ সেন্ট পতন একটা বড় ব্যাপার। এর একটা কারণ রেস্তোরাঁ বন্ধ, বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না, মানুষ আইস ক্রিম ও চিনি দেওয়া বিভিন্ন ঠান্ডা পানীয় খাচ্ছেন না গলায় সংক্রমণের আশঙ্কায়।

গ্রিন জোন নয়, লকডাউন তুলতে প্রয়োজন গ্রিন কর্মিগোষ্ঠী গড়ে তোলা

করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউনের প্রভাবে বাড়ির বাইরে এবং প্রতিষ্ঠানে চাহিদায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ কোঅপারেটিভ সুগার ফ্যাক্টরিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকাশ নৈকনাবারের আশঙ্কা ২০১৯-২০ মরশুমে ভারতে চিনির ব্যবহার, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ২৫.৫-৬ মিলিয়ন টন থাকে, তার তুলনায় ১.৫-২ মিলিয়ন টন কমবে।

সেটাই কি একমাত্র কারণ?

অপরিশোধিত তেলের দাম কমা বৃহত্তর ইস্যু। আখ থেকে নিষ্কাশিত রস জমিয়ে যেমন চিনি হয়, তেমন তা পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় অ্যালকোহলও। তেলের দাম যখন বেশি থাকে, তখন বিশেষ করে ব্রাজিলের কারখানাগুলিতে আখ থেকে ৯৯ শতাংশের বেশি খাঁটি অ্যালকোহল যুক্ত ইথানল তৈরি করে, যা পেট্রোলে মেশানো হয়। ২০১৯-২০ (এপ্রিল-মার্চ)-তে মাত্র ৩৪.৩২ শতাংশ আখ থেকে ব্রাজিলের কারখানাগুলিতে চিনি উৎপাদিত হয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ২৬.৭৩ মিলিয়ন টন।

বাকিটা থেকে তৈরি হয়েছিল ৩১.৬২ বিলিয়ন লিটার ইথানল। কিন্তু তেলের দাম যখন এই অবস্থা তখন সে কারখানাগুলি আর আখ থেকে ইথানল তৈরিতে আগ্রহী নয়। ব্রাজিলের কারখানাগুলি এ বছর ৩৬ মিলিয়ন টন চিনি ও ২৬ বিলিয়ন লিটার ইথানল প্রস্তুত করতে চলেছে।

মহারাষ্ট্রে একদিনে ৭৭৮ সংক্রমণ, দেশেও দৈনিক সংক্রমণে রেকর্ড

 ভারতে এর প্রভাব কী হবে?

চিনি ব্যবহার হ্রাস এবং ব্রাজিলের উৎপাদন বৃদ্ধি ভারতের চিনি কল ও আখচাষীদের পক্ষে দুঃসংবাদ। কোভিড-১৯-এর আগে পর্যন্ত ভারতের শিল্পগুলি ৫.৫ থেকে ৬ টন অপরিশোধিত চিনি ২০১৯-২০ সালে রফতানি করেছে। কারখানাগুলি ৩.৮ মিলিয়ন টনের চুক্তি হয়েছে যার মধ্যে ৩.০৫ মিলিয়ন টন পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। রফতানি থেকে কুইন্টালপিছু ২২৫০ থেকে ২৪০০ টাকা পাওয়া এবং সরকারের ১০৪.৪৮ টাকার ভরতুকি অতিরিক্ত মজুতের তুলনায় কিছুই নয়।

বিশ্ববাজারে চিনির দামের হ্রাস, ও ব্রাজিলের উৎপাদন বৃদ্ধি গোটা হিসেব এদিকওদিক করে দেবে। নৈকনাবারে অবশ্য আশায় ভর করছেন ইন্দোনেশিয়ায় ভারতীয় অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ কার সিদ্ধান্তের উপর।

ইন্দোনেশিয়ার রিফাইনারিগুলির লক্ষ্যমাত্রা এ বছর ৩.৩ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ২.৬ মিলিয়ন টন বেশি। তিনি বলেন, “ওরা মূলত থাইল্যান্ড থেকে চিনি কেনে, কিন্তু থাইল্যান্ডে এ বছর খুব খারাপ ধরনের খরা হয়েছে যার জেরে ২০১৮-১৯ সালে যেখানে উৎপাদন হয়েছিল ১৪.৬ মিলিয়ন টন, সেখানে এ বছর তা নেমে গিয়েছে ৯ মিলিয়ন টনে। এর ফলে আমাদের সামনে সুযোগ খুলে গিয়েছে।”

এ পরিস্থিতিতে আখ চাষিদের কী হবে?

রফতানি কমায় এবং দেশিয় বাজারে চিনির ব্যবহার প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের মধ্যে থেকে কমার ফলে আখের দাম কারখানগুলি দিতে অসমর্থ হবে।

ভারতে সরাসরি বিদেশি লগ্নি নীতিতে বদল কেন, তাতে চিনই বা অসন্তুষ্ট কেন?

উত্তর প্রদেশের কারখানাগুলি ২০১৯-২০ মরশুমে ৩২হাজার কোটি টাকার আখ মাড়াই করেছে, কিন্তু দিতে পেরেছে মাত্র ১৬,৪৫৬ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে রাজ্য সরকার ইচ্ছুক চাষিদের জন্য একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে, যাতে আগামী তিন মাস নগদের পরবরিতে এক কুইন্টাল করে চিনি দেওয়া হবে। মহারাষ্ট্রও ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোট আখের দামের ১২,৫৩৯ কোটি টাকার মধ্যে ১১,৩১০ কোটি টাকা দিতে পেরেছে।

সংকট শুধু চিনিতেই নেই। লকডাউনের ফলে অ্যালকোহলের বাজার কমেছে, তা সে পানীয়ই হোক বা পেট্রোলে মেশানোর ইথানল। উত্তরপ্রদেশের মিলগুলি এ বছর ১০০ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদন করতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের আখ কমিশনার সঞ্জয় ভুস্রেড্ডে, ২০১৮-১৯ সালে যে পরিমাণ ছিল ৫১.৫ কোটি লিটার। কিন্তু গাড়ি বা টু হুইলার কিছুই না চলায় ইথানল কিনতে কোনও তেল সংস্থাই রাজি নয়।

 অন্য কোনও কৃষিপণ্যের উপর কি প্রভাব পড়েছে?

ইথানল তৈরির আরেক উপাদান ভুট্টার দামও ২১ এপ্রিলে শিকাগোর হিসেবে ১২ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কময একইভাবে বায়ো ডিজেলের জন্য প্রয়োজনীয় পাম তেলের দামও কমেছে। ভুট্টার দাম কমার ফলে অন্য সিরিয়ালজাতীয় দ্রব্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে, যেমনভাবে পাম তেলের দাম কমায় কমতে পারে সয়াবিন ও অন্যান্য তৈলবীজের দাম। এরা সকলেই তেলের সঙ্গে যুক্ত- যার দামের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পেট্রোলিয়ম সংস্থা থেকে কৃষক, সকলেই।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Petrol price COVID-19
Advertisment