শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস কোভিড ১৯ আক্রান্ত ভারতে জন্য দ্বিতীয় দফার আর্থিক নীতি ঘোষণা করেছেন।
‘মহামন্দা’ পরিস্থিতিতে রিভার্স রেপোরেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাল আরবিআই
প্রেক্ষিত
আইএমএফ কোভিড ১৯ জাত আর্থিক সংকটকে মহা লকডাউন বলে ঘোষণা করে জানিয়েছে বিশ শতকের শুরুতে যে মহামন্দা দেখা দিয়েছিল তার পর এত বড় রিসেশন আর আসেনি। সারা পৃথিবীতে সম্ভাব্য আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষতি হবে ৯ ট্রিলিয়ন ডলার, ভারতের জিডিপির তিন গুণ।
তবে বাকি পৃথিবীতে সংকট হলেও ভারতের আশা তাদের জিডিপি বাড়তে চলেছে, তা যৎসামান্য হলেও।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই আর্থিক সংকটের মোকাবিলায় কিছু নীতি ঘোষণা করেছে।
২৭ মার্চ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনুৎপাদক সম্পদ বিষয়ে কিছু শিথিলতার নীতি গ্রহণ করে এবং পুঁজির অভাবে ব্যবসা যাতে মার না খায় সে কারণেও কিছু ঘোষণা করে।
কোভিড ১৯ রোগে পুরুষের মৃত্যুহার মহিলাদের চেয়ে বেশি কেন?
দ্বিতীয় উদ্দেশ্যে তারা রেপো রেট ও রিভার্স রেপো রেট কমায়। একই সঙ্গে তারা ব্যাঙ্কগুলিকে বাজারের চেয়ে কম সুদে ঋণ দেবার কথাও ঘোষণা করেছিল। এই সস্তা ঋণ দেবার উদ্দেশ্য ছিল ব্যাঙ্ক যাতে ব্যবসাক্ষেত্রে সস্তয় ঋণ দিতে পারে এই অসময়ে দাঁড়িয়ে।
আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কী বলল?
রিভার্স রেপো রেট আরও ২৫ পয়েন্ট কমানো হবে। এখন রিভার্স রেপো রেট ৩.৭৫ শতাংশ ও রেপো রেট ৪.৪০ শতাংশ। ২৭ মার্চেও রিভার্স রেপো রেট রেপো রেটের তুলনায় বেশি কমানো হয়েছিল।
রিভার্স রেপো রেট তুলনায় বেশি কমানোর পিছনে উদ্দেশ্য হল দুই রেপো রেটের মধ্যে ফারাক বৃদ্ধি- যার জেরে একদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার কাছ থেকে কম সুদে ঋণ নিতে ও সেই অর্থ ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে দিতে ব্যাঙ্কগুলিকে উৎসাহিত করছে এবং ফিরে এসে সেই অর্থ রিজার্ভ ব্যাঙ্কেই ব্যাঙ্কগুলি জমা রাখুক, এমনটা চাইছে না।
ব্যাঙ্কগুলি ঝুঁকি নিতে এতটাই নারাজ থাকে যে তারা কম সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে অর্থ গচ্ছিত রাখতে বেশি উৎসাহী হয়, ব্যবসাক্ষেত্রে ঋণ দেবার বদলে। রিভার্স রেপো রেটে আরও ছাড় দিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফের একবার ব্যাঙ্কগুলিকে বার্তা দিল তাদের কাছে অর্থ গচ্ছিত রেখে লাভ হবে না।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার TLTRO ঘোষণা করা। কিন্তু এ ব্যাপারে বলা হয়েছে এর অর্ধেক মাঝারি আকারের নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা ও ক্ষুদ্র আর্থিক সংস্থাকে ঋণ হিসেবে দিতে হবে।
কোভি়ড ১৯ চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেওয়া কি উচিত?
এর ফলে দুটি সুবিধা হবে। প্রথম নগদ বেশি আসবে। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি, আর্থিক মন্দার ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান মার খেয়েছে তাদেরকে লক্ষ্যে রেখেই এই ঘোষণা, এই অর্থ আর্থিক পিরামিডের একেবারে নিচের তলাকে সুবিধা দান করবে।
গ্রামীণ ক্ষেত্র, ছোট শিল্প ও হাউজিং ফিনান্স কোম্পানিগুলি, নাবার্ড, সিডবি, এবং এনএইছবি যারা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেবে এবং এনবিএফসি ও এমএফআইকে সেই ঋণ দেবে, তাদের ৫০ হাজার কোটি টাকা দেবার কথা ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
এ ছাড়া রাজ্য সরকারগুলিকে WMA-র মাধ্যমে আরও অর্থ দেবার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
WMA সুবিধার মাধ্যমে রাজ্য সরকারগুলি তাদের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে তফাৎ তা মিটিয়ে থাকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
১ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে এই সীমা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছিল। আজকের ঘোষণায় তা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে কোভিড ১৯ আক্রান্ত মানুষদের আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য করতে পারবে রাজ্য সরকার।
রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তাতে দেরি হলে তা অনুৎপাদক সম্পদ বিবেচনা করার জন্য এক বছরের অতিরিক্ত সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে।
ব্যবস্থার উপর যে চাপ পড়ছে এবং নগদের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও একনই ১০০ থেকে ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনবার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে ব্যাঙ্কের হাতে নগদ অর্থ থাকবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে এই সীমা ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে ফের ১০০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন