তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোয় হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কেন্দ্রীয় চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে 'অতীতের হিন্দি-বিরোধী আন্দোলন'-এর কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে, স্ট্যালিন ছিলেন ডিএমকের কার্যনির্বাহী সভাপতি।
আগেও হুঁশিয়ারি স্ট্যালিনের
সেই সময়ও তামিলনাড়ুতে '১৯৬৫ সালের মত' বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই সময়ও এবারের মতই স্ট্যালিন বলেছিলেন যে, যদি কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ুর ওপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে, ডিএমকের অর্ধ শতাব্দী পুরোনো হিন্দি-বিরোধী আন্দোলনের কথা যেন মাথায় রাখে।
১৯৬৫ সালে কী ঘটেছিল?
ওই বছরটি দ্রাবিড় আন্দোলনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে ওঠে। ১৯৬৩ সালে, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ বিল পেশ করেছিলেন। যেখানে ১৯৬৫ থেকে ইংরেজি এবং হিন্দিকে দেশের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কেন্দ্রের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রচারে নামে ডিএমকে। দলের ক্যাডাররা সংবিধানের ১৭ অধ্যায়ের কপি পোড়ান। কারণ, ওই ১৭ অধ্যায়েই হিন্দিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।
আন্নাদুরাই গ্রেফতার
পালটা, ডিএমকে প্রধান সিএন আন্নাদুরাইকে গ্রেফতার করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, চিন্নাসামি নামে একজন ২৭ বছরের ডিএমকে কর্মী হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে গায়ে আগুন ধরিয়ে শহিদ হন। কিন্তু, নির্বিকার কেন্দ্র ঘোষণা করে যে ২৬ জানুয়ারি ১৯৬৫ থেকে হিন্দিই ভারতের একমাত্র সরকারি ভাষা হবে।
আন্দোলন অব্যাহত
নির্ধারিত তারিখের আগের দিন ২৫ জানুয়ারি, ১৯৬৫ সালে আন্নাদুরাই-সহ প্রবীণ ডিএমকে নেতাদের প্রতিরোধমূলক হেফাজতে নেওয়া হয়। মাদ্রাজের কলেজগুলোর প্রায় ৫০ হাজার ছাত্র স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে হিন্দি অপসারণের জন্য তৎকালীন মাদ্রাজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম ভক্তবৎসলামের কাছে আবেদন জানাতে ফোর্ট সেন্ট জর্জে, মিছিল করেন।
আরও পড়ুন- সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির আসন ফাঁকা, পরবর্তী প্রধান বিচারপতির অপেক্ষায় নতুন নিয়োগ
আন্দোলনকারীদের আত্মহত্যা
২৬ জানুয়ারি কালাইগনার (এম করুণানিধি) এবং অন্যান্য ডিএমকে কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। সেদিন ডিএমকে সদস্য টিএম শিবলিঙ্গম শরীরে পেট্রল ঢেলে মাদ্রাজের কোদামবক্কমে আত্মহত্যা করেছিলেন। আর, ভিরুগাম্বাক্কাম আরঙ্গনাথম, আয়ানপলায়ম বীরাপ্পান এবং রঙ্গসমুথিরা মুথুর মত ডিএমকে কর্মীরা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর, কিরানুর মুথু, ভিরালিমালাই সম্মুগম, পিলামেদু ধান্দাপানি প্রতিবাদের পথে হেঁটে বিষ খান।
লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আশ্বাস
তামিলনাড়ুর দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি সুব্রমনিয়ম ও ভি আলাগেসান পদত্যাগের হুমকি দেওয়ার পর, প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী, যিনি ১৯৬৪ সালে নেহেরুর স্থলাভিষিক্ত হন, তিনি জনসমক্ষে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তবে, ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি থাকবে। ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি স্কুলে ত্রিভাষা সূত্রের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করে এবং অহিন্দিভাষী জনসংখ্যার ভয় দূর করতে সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩-র সংশোধনী চায়।
Read full story in English