সাইকেলে চেপেছে বিতর্ক। চাপিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির সাইকেলকে বিতর্কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে আমদাবাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ফেটেছিল সাইকেল বোমা। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রসঙ্গ তুলে এই দ্বিচক্রযানটিকে বিঁধেছেন। সমাজবাদীকে সুতীব্র আক্রমণ করেছেন এই ভাবে। অনেকেই যাকে বলছেন-- বিলো দ্য বেল্ট। কিন্তু রাজনীতিতে ভাই সবই হয়, সব সত্যি। শোনা যাচ্ছে পাল্টা গানও। আসুন সমাজবাদী পার্টির নির্বাচনী প্রতীক সাইকেলের দিকে একটু ভাল করে তাকানো যাক।
সপা-র সাইকেলে নজর?
১৯৯২ সালের ৪ অক্টোবর। মুলায়ম সিং যাদব সমাজবাদী পার্টি গঠন করেন। বাইসাইকেল প্রতীক হিসেবে পায় এই দলটি ১৯৯৩ সালে, উত্তরপ্রদেশের ভোটে। সমাজবাদী পার্টি ২৫৬টি আসনে লড়ে সে বার, জেতে ১০৯টিতে। মুলায়ম মুখ্যমন্ত্রী হন, দ্বিতীয় বারের জন্য। এর আগে, মুলায়ম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত, কিন্তু তখন তিনি জনতা দলে, যাদের নির্বাচনী প্রতীক চাকা। অর্থাৎ কিনা আগে চাকা চিহ্নে লড়াই করেছেন, পরে তাই হয়ে গিয়েছে দু'চাকা। তার আগে? ১৯৬৭ সালে তিনি সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির টিকিটে দাঁড়ান। যাদের নির্বাচনী প্রতীক ছিল বটগাছ। জোড়া বদলের মতো প্রতীকেও তিনি লড়েছেন। 'কাঁধের উপর হাল ধরে আছে কিসান' প্রতীকের হাতও ধরেন 'যাদব শিরোমণি'।
আরও পড়ুন Explained: সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ, কেন দায়ের FIR?
কেন বাইসাইকেল?
'১৯৯৩ সালে যে চিহ্নগুলি থেকে বাছতে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে একটি বাইসাইকেল। নেতাজি মানে মুলায়ম সিং যাদব এবং সপা-র অন্য নেতারা বাইসাইকেল বাছেন।' জানালেন সমাজবাদী পার্টির উত্তরপ্রদেশের সভাপতি নরেশ উত্তম প্যাটেল। তার কারণ, প্যাটেল জানাচ্ছেন, 'সেই সময় বাইসাইকেল কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, সকলের বাহন, সাইকেল সস্তা এবং চালানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এর পর থেকেই সমাজবাদী পার্টি বাইসাইকেল নিয়ে লড়াই করছে।' শুধু প্রতীকে সীমাবন্ধ নেই সপার এই প্রতীক যানটি। মুলায়ম সিং যাদবের ভাই শিবপাল সিং সাইকেলে চড়ে প্রচার গিয়েছেন মাঝেমধ্যেই। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী থাকা-কালে প্রচারে মুলায়মকেও সাইকেল চালাতে দেখা গিয়েছে। ভাই শিবপাল অবশ্য নতুন দল গঠন করেছেন, তার নাম প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি (পিএসপি-লোহিয়া)। অখিলেশের সঙ্গে মতানৈক্য চরমে পৌঁছানোর জেরেই এই নতুন দল। এ নিয়ে কম নাটক হয়নি। যদিও শিবপাল এই বিধানসভায় সপা-র বাইসাইকেল প্রতীকে যশবন্তনগর থেকে লড়ছেন। শিবকে যেন সাইকেল ছাড়ছে না।
প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য নিয়ে কী বক্তব্য সপা-র?
নরেশ উত্তম প্যাটেল বলছেন, 'প্রধানমন্ত্রী জুমলাবাজি করেন। তাঁর সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কিছু ভাবছেন না। ভাবছেন না বেকরত্ব, কৃষক সমস্যা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী ধনী ব্যবসায়ীদের হয়ে কাজ করছেন। আর সমাজবাদী পার্টির বাইসাইকেল হল গরিব, কৃষকদের সঙ্গে সম্পর্কিত।'
আরও পড়ুন Explained: এফআইআর বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী কী?
এবার একটু অখিলেশের সাইকেল প্রসঙ্গ ছোঁয়া যাক
অখিলেশের প্রচারে সাইকেল এসেছে নানা সময়ে। কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে অখিলেশ যাদব বহু বার সাইকেল যাত্রা করেছেন। সাইকেল যেন স্ফূরণবর্ধক দাওয়াই হিসেবে কাজ করেছে। অখিলেশকে সাইকেল চালাতে চালাতে ইন্টারভিউ দিতেও দেখা গিয়েছে, এই ভাবে বেশ খানিকটা চমকও দিয়েছেন তিনি। বোঝা যাচ্ছে, এবার এই নিরীহ যানটি উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রচারের টানাপোড়েনে পাড়া-মহল্লা মাতিয়ে দু'পক্ষের হয়ে চিতিয়ে দৌড়বে। সাইকেলে তো সওয়ার ছিলই সপা, এবার মোদীর হাত ধরে ক্রিংক্রিংয়ে শুরু হয়েছে যে পদ্মেরও গর্জন!