বহু মানবাধিকার কর্মীকে স্বস্তি দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে, যে কথা এত দিন বহু জন বলেছেন এবং বলে যাচ্ছিলেন, তাই বলেছে শীর্ষ আদালত। ঔপনিবেশিক এই আইনটি পুনর্বিবেচনা করবে কেন্দ্র, তত দিন পর্যন্ত এই আইনে কোনও মামলা করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে ঠান্ডা ঘরে আপাতত ঢুকিয়ে দেওয়ার পর, আর একটি বিতর্কিত আইন, ইউএপিএ নিয়েও একই দাবি উঠেছে। ইউএপিএ, আনলফুল অ্যাক্টিভিটি প্রিভেনশন অ্যাক্ট।
বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন। মানবাধিকার কর্মীদের অনেকেই যে আইনকেও ড্র্যাকোনিয়ান বলে কাঠগড়ায় তুলে থাকেন। ড্র্যাকোনিয়ান, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে এথেন্সের এক আইন প্রণেতা, নাম-- ড্র্যাকো, তাঁর লিখিত আইনকে বলে। ড্র্যাকো নাকি বেশির ভাগ অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড ধার্য করেছিলেন।
যাই হোক, এখন ইউএপিএ-র জন্য একই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরাল হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা অবসর নেবেন এ বছরের ২৬ অগস্ট। তার আগে এমন কোনও নির্দেশ তিনি দেন কিনা, সেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। তবে, প্রধান বিচারপতি রামানা রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে এ দেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে গেলেন সে ব্যাপারে সংশয় নেই।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট যেন এক ঝলক বাতাস বইয়ে দিয়েছে। বলছেন অনেকেই। চার দিকে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে। প্রধান বিচারপতি রামানা বলেছেন, ' ১২৪-এ ধারার যে কঠোরতা তা এই সময়ের সঙ্গে মানানসই নয়। কারণ এটি তৈরি হয়েছে উপনিবেশিক কালে। ফলে নাগরিকের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভারসাম্য আনতে হবে।
কাজটা কিন্তু কঠিন।' এর ফলে এখন কেন্দ্রীয় সরকার বড়সড় এক চ্যালেঞ্জের সামনে। তাদেরকেই খুঁজে বার করতে হবে মধ্যবর্তী কঠিন সেই রাস্তা, যাতে সাপ মরে আবার লাঠিও না ভাঙে। তার পর এই পথে ইউএপিএ নিয়ে কী হবে, তাও কেউ বলতে পারে না। এটা নিশ্চিত যে, ইউএপিএ নিয়ে মামলাগুলিতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের এই স্থগিতাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জোর সওয়াল চলবে। তাতে সরকারি আইনজীবীদের ব্যাকফুটেও যেতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: বৈবাহিক ধর্ষণের আইন কী? দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে শোরগোল কেন?
শীর্ষ আদালত বলেছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ওই ১২৪-এ ধারায় অভিযুক্তরা সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেই সব আর্জি বিবেচনা করে পদক্ষেপ করার জন্য অনুরোধও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যেহেতু যত দিন রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনার ফল বেরোয়, তত দিন এই সব মামলায় কোনও রায় দেওয়া যাবে না, ফলে সেই নিরিখে আর্জিগুলিকে ভেবে দেখার কথা বলা হয়েছে।
এখানে বলতে হবে একটি মামলার কথা।
সেটি ১৯৬২ সালের। কেদারনাথ সিং বনাম ভারত সরকার মামলা। যেখানে ১২৪-এ ধারা-টিতে নতুন করে সিলমোহর পড়েছিল। বলা হয়, যদি কোনও বক্তব্য শান্তিশৃঙ্খলাকে ব্যাহত করে, তা হলে সেই ব্যক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল। ফ্রি স্পিচ, বা মত প্রকাশের অধিকার বা বাক স্বাধীনতার সঙ্গে এই আইনের সম্পর্ক কী হবে, এই বিষয়টি জরুরি এখন। কেদারনাথ বনাম ভারত সরকার মামলার রায়ের বিচার করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে। তাদের সাত সদস্যের বেঞ্চকে।
Read full story in English