সোমবার সকালে বিসিসিআইয়রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেভাবে তাঁর উপর দায়িত্বভার এসে পড়েছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
আমি যখন এসেছিলাম তখন আমি জানতাম না যে আমি প্রেসিডেন্ট হব। আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি আপনাদের বলেছিলাম (প্রাক্তন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান) ব্রিজেশ প্যাটেলের কথা। আমি এখানে এসে দেখলাম সব পাল্টে গিয়েছে। আমি কখনও বিসিসিআই ভোটে লড়িনি এবং আমি কখনও জানতাম না এরকম হয়। সংবাদসংস্থা পিটিআই তাঁকে এ ব্যাপারে উদ্ধৃত করেছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: কেন অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন অভিজিৎ বিনায়করা?
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সদস্যরা রবিবার সর্বসম্মতিক্রমে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে এই পদের জন্য মনোনীত করেছেন। সোমবার বিভিন্ন পদে মনোনয়ন জমা দেবার শেষ তারিখ ছিল। আগামী ২৩ অক্টোবর বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিসিসিআইয়ের পদাধিকারী কারা?
বিসিসিআইয়ের পাঁচজন পদাধিকারী রয়েছেন- প্রেসিডেন্ট, ভাই, প্রেসিডেন্ট, সচিব, যুগ্ম সচিব এবং কোষাধ্যক্ষ। বিসিসিআইয়ের আইনানুসারে বোর্ডের পূর্ণ সদস্যদের মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁদের প্রতিনিধিদের দ্বারা এই পদাধিকারীরা নির্বাচিত হন।
বিসিসিআইয়ের পূর্ণ সদস্যরা হল ২৯টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। প্রতিটি রাজ্য এবং দিল্লি একটি পূর্ণ সদস্য। ব্যতিক্রম হল, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্র। এই দুই রাজ্যের আবার তিনটি করে পূর্ণ সদস্য রয়েছে। গুজরাটের বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। মহারাষ্ট্রের রয়েছে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: প্রধানমন্ত্রী মোদীর জঞ্জাল সাফ
ভারতীয় রেল, সশস্ত্র বাহিনী এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজ বিসিসিআইয়ের প্রতিটি বার্ষিক সাধারণ সভায় একটি করে ভোট দিতে পারে। বিসিসিআইয়ের কিছু অ্যাসোসিয়েশট সদস্য থাকলেও তাদের ভোটাধিকার নেই।
এই নির্বাচন একেবারেই একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাপার। সদস্যদের আনুগত্য খুব স্পষ্ট, এবং যদি বা কখনও লড়াই হয়ও, তাহলে প্রায়শই তার ফলাফলও আগে থেকেই জানা থাকে।
বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের ভূমিকা কী?
বিসিসিআইয়ের আইনানুসারে পদাধিকারীদের যে ক্ষমতা এবং কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্ট সাধারণ সভার এবং অতিরিক্ত পরিষদের বৈঠকের সভাপতিত্ব করতে পারেন এবং বার্ষিক অডিট এবং বিসিসিআইয়ের অন্যান্য অর্থনৈতিক স্টেটমেন্টে স্বাক্ষরকারী তিনজনের মধ্যে তিনি অন্যতম। মনে রাখতে হবে বিসিসিআই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের নোবেল লরিয়েট ইউনূস কেন গ্রেফতারির মুখে
বিসিসিআই সভাপতি হলেন দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ক্রিকেট আধিকারিক এবং সারা দেশের সমস্ত ক্রীড়া সংগঠনের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি সম্মানীয় পদও বটে। দীর্ঘদিন ধরে এ পদে বিরাজ করেছেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং পূর্বতন রাজপরিবারের লোকজন। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশ কিছু অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। ২০১৫ সালে জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর সভাপতি হন শশাঙ্ক মনোহর, তিনি ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন। এর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হব অনুরাগ ঠাকুর, তাঁকে ২০১৭ সালে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এর পর থেকে অন্তর্বর্তী সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সি কে খান্না।
প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ কতদিনের?
বিসিসিআইয়ের সমস্ত পদাধিকারীদেরই পদ সাম্মানিক। বিসিসিআইয়ের নিয়মে বলা হয়েছে, "একজন পদাধিকারীর মেয়াদ তিন বছরের এবং কোনও ব্যক্তিই তিন বারের বেশি পদাধিকারী হতে পারবেন না।" বলা হয়েছে, "রাজ্য অ্যাসোসিয়েশন বা বিসিসিআই (বা একযোগে দুইই)য়ে যিনি পরপর দুবার কোনও পদ অলংকৃত করেছেন, তিনি তিন বছরের কুলিং অফ পিরিয়ড সম্পূর্ণ না করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।"
গত মাসেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দ্বিতীয়বারের জন্য সিএবির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে ডালমিয়ার মৃত্যুর পর তিনি প্রথমবার সিএবির প্রেসিডেন্ট হন। তার আগে, ২০১৪ সালে তিনি সিএবি-র যু্গ্ম সচিব হয়েছিলেন। ফলে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তিনি পদাধিকারী হিসেবে ৬ বছর সময় কাটাবেন।
কম মেয়াদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সৌরভ বলেন, "হ্যাঁ, আইন সেরকমই এবং আমাদের সে নিয়েই চলতে হবে।"
Read the Full Story in English