দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) কুকুরের মাংস উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার ওপর একটি বিল পাস করেছে। যাকে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো 'ঐতিহাসিক বিজয়' হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিলটিতে কুকুরের মাংস খাওয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। বরং, ২০২৭ সাল পর্যন্ত কুকুরের মাংস বিক্রি, বিতরণ, কুকুর হত্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিলটি পাস করানো হল কেন?
দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খাওয়া একটি শতাব্দী প্রাচীন রীতি। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় গরুর মূল্য ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। এতই মূল্যবান যে ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত মানুষকে গরু জবাই করার জন্য সরকারি অনুমতি নিতে হত। অতএব, গরু না-পেয়ে কুকুরের মাংসই এখানকার বাসিন্দাদের কাছে প্রোটিনের সর্বোত্তম উত্স হয়ে ওঠে। সমাজের সমস্ত শ্রেণির লোকেরাই কুকুরের মাংস খেতে শুরু করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পোষা প্রাণীর মালিকরা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এনিয়ে লাগাতার উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে। তার জেরে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৯৩% প্রাপ্তবয়স্ক বলেছেন যে তাঁরা ভবিষ্যতে কুকুরের মাংস খেতে চান না। আর ৮২% বলেছেন যে তাঁরা এই সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছেন। গত বছর সিওল, দ্য নিউ ইয়র্কের একটি প্রাণী কল্যাণ সংস্থা 'অ্যাওয়ার'-এর সমীক্ষা অনুসারে টাইমস এমনটাই প্রতিবেদনে জানিয়েছে। অতএব, এটি অবাক করার মত কিছু না। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি মানুষের ব্যবহারের জন্য কুকুরের প্রজনন, জবাই এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করার একটি বিল প্রস্তাব করেছিল। বিলটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ও ফার্স্ট লেডি কিম কিওনের কাছ থেকেও জোরালো সমর্থন পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী উভয়ই, পশুপ্রেমী এবং কুকুর পোষেন। তাঁরাও কুকুরের মাংস বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জারি সরকারি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে প্রচার করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বলেছিলেন যে কুকুর হত্যা প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অগ্রাধিকারগুলোর অন্যতম।
আরও পড়ুন- এ এক অন্য রামমন্দির, যেখানে শ্রীরামের রং কালো, পিছনে বিরাট ইতিহাস, কী সেটা?
কুকুরের মাংসের ব্যবসা কি ভারতে অনুমোদিত?
হ্যাঁ। তবে, নিষেধাজ্ঞাও আছে। যেমন, ২০২০ সালের জুলাই মাসে, নাগাল্যান্ড রাজ্যে কুকুরের মাংস আমদানি, বাণিজ্য এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু, গত বছরের জুনে, গৌহাটি হাইকোর্টের কোহিমা বেঞ্চ আধুনিক সময়েও নাগাদের মধ্যে কুকুর খাওয়াকে 'একটি স্বীকৃত নিয়ম' হিসেবে পর্যবেক্ষণ করে কুকুরের মাংস আমদানি, বাণিজ্য এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণার নির্দেশকে বাতিল করেছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, হংকং এবং তাইওয়ান ইতিমধ্যে কুকুরের মাংস আমদানি, বাণিজ্য এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে।