৭০ বছর বয়সী গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। তামিল টাইগারদের বিচূর্ণ করার ব্যাপারে তিনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।
রাজাপক্ষে ভূতপূর্ব সেনা আধিকারিক। তাঁর ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে যখন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তিনি ছিলেন গোতাবায়া ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলমের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এই অভিযানের ফলেই টাইগারদের পরাজয় ঘটেছিল এবং টাইগার নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ নিহত ছিলেন।
রাজাপক্ষ ভাইরা সন্ত্রাসবাদের পরাজয় ঘটানোর কৃতিত্ব দাবি করেছেন বারবার এবং একই সঙ্গে তাঁদের দাবি ছিল পৃথিবীর মধ্যে শ্রীলঙ্কাই একমাত্র দেশ যে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।
পড়ুন, ক্যাব বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে সরকার এত উদ্যোগী কেন?
রাজাপক্ষরা চার ভাই। গোতাবায়া এবং মাহিন্দ ছাড়া অন্য এক ভাই হলেন বাসিল রাজাপক্ষে। মহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫-১৫ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা ছিলেন এবং ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ছিলেন সাংসদ। চামাল রাজাপক্ষে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সংসদের অধ্যক্ষ ছিলেন।
নির্মম বলে গোতাবায়ার পরিচিত রয়েছে, এবং এলটিটিই-র বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতা লঙ্ঘনকারী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।
এলটিটিই বিরোধী যুদ্ধে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় সিংহলি বৌদ্ধদের আধিপত্য স্বীকৃত হয়ে গিয়েছে তামিল বিদ্রোহীদের পরাজয়ের জেরে।
শ্রীলঙ্কার মুসলিমবিরোধী বৌদ্ধ উগ্রপন্থী শক্তি বলে পরিচিত বদু বালা সেনার মূল শক্তি হিসেবে ধরা হয় গোতাবায়া রাজাপক্ষকে। দেশে ২০১৪ সালের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার পিছনে ছিল এই সংগঠন। মনে করা হয়, ২০১৮ সালের ক্যান্ডিতে মুসলিম-বিরোধী সন্ত্রাসের পিছনেও ছিল এই সংগঠন।
শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ এবং আমেরিকায় গোতাবায়া মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত। একদা তিনি মার্কিন নাগরিক ছিলেন এবং তাঁর সেখানে একটি বাসস্থানও ছিল। দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য মার্কিন নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গোতাবায়া।
এ বছরের শুরুতে আমেরিকায় গোতাবায়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। তাতে অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে এক সাংবাদিককে অত্যাচার ও খুনের অভিযোগও ছিল। দেশে রাজাপক্ষের শাসন চলাকালীন বহু বিক্ষুব্ধদের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে স্বাধীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলারও।
জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর অবসেশন লুকোনোর খুব একটা চেষ্টা করেন না তিনি এবং নিজেকে সাধারণ একজন প্রেসিডেন্টের বদলে জাতীয় নিরাপত্তা সম্রাট বলেই দেখতে চাইবেন তিনি।
শ্রীলঙ্কায় নির্বাচনের সময়ে বেশ কয়েকজন বলেছেন, গোতাবায়ার জয় দেখিয়ে দিয়েছে ভোটাররা নাগরিক অধিকারের উপর কাটছাঁট মেনে নিতে রাজি।
পড়ুন, বিশ্লেষণ: সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা ও শবরীমালা রায় কোথায় আলাদা হয়ে গেল
রাজাপক্ষ ক্ষমতায় ফেরার জেরে শ্রীলঙ্কা ও চিনের আলোচনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ভারত। মহিন্দা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন চিন ব্যাপক সুযোগসুবিধে দিয়েছিল, ঋণ দেওয়া হয়েছিল কয়েক বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কায় বন্দর ও হাইওয়ে বানাবার সময়ে সে দেশকে ঋণভারে জর্জরিত করে দেওয়া হয়েছিল।
এই ঋণের জেরে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিও ডুবতে বসে। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা যখন ঋণ শোধ দিতে ব্যর্থ হয়, সে সময়ে হামবানটোটা বন্দর এবং সংলগ্ন ১৫হাজার একর জমি চিনকে লিজ দিতে বাধ্য করা হয়।
মাহিন্দা জমানার শেষ দু বছরে একেবারেই না-জানিয়ে একাধিকবার শ্রীলঙ্কার সামরিক সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ কলম্বোর বন্দরে পৌঁছে যায়, যা ভারতের পক্ষে অতীব উদ্বেগের।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম দফায়, গোতাবায়া যখন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন, সে সময়ে শ্রীলঙ্কায় চিনা সাবমেরিনের নোঙর ফেলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল ভারত। কলম্বো সে সময়ে জানিয়েছিল, এ ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। বহু বছর ধরেই জ্বালানি ভরার জন্য এবং নাবিকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন দেশের সামরিক জাহাজ আসে শ্রীলঙ্কায়।