ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অনুরোধ করেছেন, যাতে রাশিয়াকে 'সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক' তকমা দেওয়া হয়। এমনটা হলে, পুতিনের সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ সহজতর হবে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই অনুরোধ করেন। বাইডেন কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে, জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানোর বিভিন্ন পথের তিনি খোঁজ নিচ্ছেন।
সন্ত্রাসী আখ্যা
যে দেশগুলো বারবার করে সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে, সেই দেশগুলোকে 'সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক' তকমা দিয়ে থাকেন মার্কিন বিদেশ সচিব। মার্কিন বিদেশ দফতরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই তালিকায় থাকা দেশগুলোর ওপর চারটি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যেতে পারে। সেগুলো হল- মার্কিন সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রফতানি এবং বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা, উভয় দেশে ব্যবহারের সামগ্রী রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ, পাশাপাশি বিবিধ আর্থিক এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ। পাশাপাশি, তকমাপ্রাপ্ত ওই দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে জড়িত ব্যক্তি বা দেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তালিকাভুক্ত দেশগুলো
বর্তমানে এই তালিকায় চারটি দেশের নাম আছে। তালিকায় প্রথম, ১৯৭৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢুকেছে সিরিয়া। এরপর ১৯৮৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢুকেছে ইরান। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এই তালিকায় ঢুকেছে উত্তর কোরিয়া। বেশ কিছুদিন তালিকার বাইরে ছিল। ফের, ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি এই তালিকায় ঢুকেছে কিউবা। এই তকমা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ মাত্র। প্রয়োজনে তালিকা থেকে কোনও রাষ্ট্রকে বাদ দেওয়া যায়। আবার অন্তর্ভুক্তও করা যায়। ৯৩ সালে ক্লিন্টন জমানায় সুদান যেমন তালিকায় ঢুকেছিল। ২০২০ সালে, ট্রাম্প জমানায় বাদ গিয়েছে। ইরাক ৮২ সালে প্রথম বাদ যায়। ৯০ সালে ফের ঢোকে। ২০০৪-এ বাদ গিয়েছে। লিবিয়া বাদ গিয়েছে ২০০৬ সালে। কিউবা ঢুকেছিল ৮২ সালে। ওবামা জমানায় ২০১৫ সালে তালিকা থেকে বাদ যায়। ট্রাম্প জমানায় আবার কিউবা 'সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক'-এর তালিকায় ঢুকেছে।
আরও পড়ুন-সরকার মিথ্যে বলছে, করোনায় আট গুণ বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন, অভিযোগ রাহুলের
তকমা অনুমোদনকারী আইন
বর্তমানে আমেরিকায় তিনটি আইন আছে যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কাজে বারবার সমর্থন দেওয়ার জন্য একটি বিদেশি সরকারকে 'সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক' তকমার তালিকার্ভুক্ত করতে পারে। সেগুলো হল: (১) ১৯৬১ সালের বৈদেশিক সহায়তা আইনের ৬২০এ ধারা, যা বেশিরভাগ সাহায্য স্থানান্তর নিষিদ্ধ করে; (২) অস্ত্র রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনের (এইসিএ) ধারা ৪০, যা স্টেট ডিপার্টমেন্টের তত্ত্বাবধানে রফতানি, ক্রেডিট, গ্যারান্টি, অন্যান্য আর্থিক সহায়তা এবং রফতানি লাইসেন্সিং নিষিদ্ধ করে। আর, (৩) ২০১৮ সালের রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ১৭৫৪ (সি) ধারা।
তকমার প্রভাব
রিয়েল এস্টেট-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তকমাপ্রাপ্ত দেশের যাবতীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যাবে। বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যাতে সেই দেশকে আর ঋণ না-দেয়, তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রস্তাব দেবে। সেই দেশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দ্বৈত-ব্যবহার্য দ্রব্যের রফতানি নিষিদ্ধ করবে ওয়াশিংটন। সেই দেশের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দেশগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক ব্যবস্থা নেবে।
Read story in English