সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী তাঁকে 'রাষ্ট্রপত্নী' বলে উল্লেখ করার পরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে অপমান করার অভিযোগ করেছে। ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্রপতি ও সভাপতি (স্পিকার) শব্দগুলো লিঙ্গ-নিরপেক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর, তাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি।
গত ২৮ জুলাই, ২০২২ (বৃহস্পতিবার) ভোপালে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে মন্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। শুধু স্মারকলিপি জমাই নয়, সংসদের উভয় কক্ষে এনিয়ে রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড ঘটান বিজেপি সাংসদরা। অধীর চৌধুরীকে তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে কঠোর আক্রমণেও পিছপা হননি।
যদিও অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন যে তিনি শব্দটি ব্যবহার করে ভুল করেছেন। এটি তাঁর মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, তাতেও শান্ত হননি বিজেপি নেতৃত্ব। লোকসভায় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, রাজ্যসভায় নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে বিজেপি নেতৃত্ব অধীর চৌধুরীর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। সঙ্গে, তাঁরা দাবি করেন এই মন্তব্যের জন্য অধীর চৌধুরী এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে। স্মৃতি ইরানি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস আসলে আদিবাসী বিরোধী আর নারী বিরোধী। শুধু তাই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডারকেও কংগ্রেস 'অপমান' করেছে।
আরও পড়ুন- নিষ্ঠা যাত্রার মাঝেই আজানের সুর, বক্তব্য থামিয়ে বিরল নজির আদিত্য ঠাকরের
যখন প্রতিভা পাটিল রাষ্ট্রপতি ছিলেন
দ্রৌপদী মুর্মুই প্রথম নন। ভারত এর আগেও একজন মহিলা রাষ্ট্রপতি পেয়েছে। প্রথমবার মহিলা রাষ্ট্রপতি পাওয়ার সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছিল। ইউপিএ যখন ২০০৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাজস্থানের প্রাক্তন রাজ্যপাল প্রতিভা পাটিলকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখনও এই বিষয়টিকে ঘিরে কিছু আলোচনা ও জল্পনা শুরু হয়েছিল।
সেই সময় রাষ্ট্রপ্রধানকে সম্বোধন করার সঠিক উপায় নিয়ে একটি ছোটখাটো বিতর্ক হয়েছিল। কারণ, কারও কারও মতে 'রাষ্ট্রপতি'-র মধ্যে একটি 'পুরুষ' বোধ রয়েছে। তবে, সেই সময় ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্রপতি ও সভাপতি (স্পিকার)-র মত শব্দগুলোকে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ বলে বোঝানো হয়। আর, তাতেই বিতর্কটি শীঘ্র শেষ হয়ে যায়। বিভিন্ন অধিকারবাদী ও নারীবাদীরা সেই সময় 'রাষ্ট্রমাতা' শব্দের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, একটি সাংবিধানিক পদের জন্য এই ধরনের পদের ব্যবহার 'লিঙ্গ-পক্ষপাতমূলক'।
সাংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ সেই সময়ে বলেছিলেন যে তৎকালীন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারপারসন নাজমা হেপতুল্লাকে সর্বদা 'উপসভাপতি' বলে সম্বোধন করা হত। সেভাবেই রাষ্ট্রপতি পাতিলকে 'রাষ্ট্রপতি মহোদয়া' বলা যেতে পারে। ভারত তারপর আরও দু'জন মহিলা স্পিকার মীরা কুমার ও সুমিত্রা মহাজনকে পেয়েছে। তাঁদের দু'জনকেই অবশ্য 'সভাপতি' হিসেবে বারবার সম্বোধন করা হয়েছে। শিবসেনার তৎকালীন সুপ্রিমো বালাসাহেব ঠাকরের আবার প্রস্তাব ছিল, প্রতিভা পাটিলকে 'রাষ্ট্রাধ্যক্ষ' বলে সম্বোধন করার। যাইহোক প্রতিভা পাটিলকে বরাবর রাষ্ট্রপতি বলেই সম্বোধন করা হয়েছে। ২০১২ সালে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়।
গণপরিষদে যা হয়েছে
গণপরিষদও আলোচনা করেছিল রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে সম্বোধন করা উচিত। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে গণপরিষদে বিতর্ক চলাকালীন, এইচ ভি কামাথ ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই, জওহরলাল নেহরু যে মূল খসড়াটি পেশ করেছিলেন, তাতে একটি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন (তখন) অনুচ্ছেদ ৪১-এ 'ফেডারেশনের প্রধান হবেন প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি)', 'ভারতের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন'-এ পরিবর্তন করা হয়েছে? বিতর্কের সময় এমন পরামর্শও ছিল যে 'রাষ্ট্রপতি' শব্দের বদলে 'নেতা' বা 'কর্ণধার' শব্দ ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু নেহেরু পরামর্শ দিয়েছিলেন যে 'রাষ্ট্রপতি' শব্দটিই চূড়ান্ত করা উচিত।
Read full story in English