পৃথিবী ১৯৬০ সাল থেকে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দিনের সাক্ষী হল। গত ২৯ জুন, পৃথিবী নিয়মমাফিক ২৪ ঘণ্টায় তার দৈনিক ঘূর্ণন শেষ করেনি। ১.৫৯ মিলিসেকেন্ড কম সময়ে শেষ করেছে। পারমাণবিক ঘড়িতে ধরা পড়েছে সেই সময়সীমা। যার অর্থ আগামিকাল বর্তমানে তাড়াতাড়িই আসছে। এককথায় সময় যেন উড়ে যাচ্ছে। এই ভাবনার সঙ্গে যেন কম সময়ে পৃথিবীর ঘূর্ণন শেষ করা হুবহু মিলে যায়।
পৃথিবীর যেন তাড়া আছে। এটা কি নতুন?
নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন কিন্তু, ২৯ জুনই প্রথম ঘটল না। ইদানিং হামেশাই ঘটছে এটা।
যেমন গত ২৬ জুলাই, এই ঘোরা ১.৫০ মিলিসেকেন্ড আগে শেষ হয়েছিল। অর্থাৎ ২৯ জুনের চেয়েও কম সময়ে। আর, ২০২০ সালে যখন গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস নিয়ে ভাবছে, সেই সময় পৃথিবী ২৮ দিন সময়ের আগেই ঘোরা শেষ করেছে। তার মধ্যে ১৯ জুলাই সবচেয়ে কম সময়ে দৈনিক ঘূর্ণন শেষ করেছে পৃথিবী। নির্দিষ্ট সময়ের ১.৪৭ মিলিসেকেন্ড আগেই শেষ করেছিল ঘোরা।
মিলিসেকেন্ড কাকে বলে?
সেকেন্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে মিলিসেকেন্ড বলে। যেমন আমাদের চোখের পাতার প্রতিটি কম্পনের সময়সীমা এক সেকেন্ডের ১০ ভাগের এক ভাগ। যার আসলে ১০০ মিলিসেকেন্ড। আর পিটি উষা ১৯৮৪ সালের অলিম্পিকে লস অ্যাঞ্জেলসে তাঁর ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া করেছিলেন এক সেকেন্ডের একশো ভাগের একভাগের জন্য। উষা তাঁর ৪০০ মিটার হার্ডলস শেষ করেছিলেন ৫৫.৪২ সেকেন্ডে। সেখানে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী রোমানিয়ার ক্রিস্টিয়ানা কোজোকারু ৫৫.৪১ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন। পাঁচ নম্বরে থাকা সুইডেনের অ্যান-লুইস স্কোগ্লান্ড দৌড় শেষ করেছিলেন ৫৫.৪৩ সেকেন্ডে।
আরও পড়ুন- জৈব রসায়নের পড়ুয়াই বানাচ্ছিল হাজার কোটি টাকার মাদক, গ্রেফতারের পর হতবাক গোয়েন্দারা
দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে কেন?
বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট কিং জানিয়েছেন, 'এটা অবশ্যই অদ্ভূত। নিশ্চিতরূপে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আর, এমন পরিবর্তন হয়েছে যা আমরা ১৯৭০ এর দশকে রেডিও জ্যোতির্বিদ্যার শুরুর সময়কালে দেখিনি।' তাঁর অনুমান জলবায়ুর পরিবর্তন পৃথিবীর ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করেছে। এতে যেমন গ্রিনল্যান্ড এবং আন্টার্কটিকার বরফের চাদর বেশ কিছুটা গলে গেছে। তাতে সমুদ্রের ঢেউয়ের চলাচলেরও পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের প্যারিস অবজারভেটরির ক্রিশ্চিয়ান বিজুয়ার্ড আবার বলেছেন, 'আমরা কেবলমাত্র অনুমান করছি। কিন্তু, কারণটা সত্যিই জানি না। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি যে কারণটা অভ্যন্তরীণ। আর, তার সঙ্গে পৃথিবীর গতির সম্পর্ক রয়েছে।'
পৃথিবী এভাবে দ্রুতগতিতে ঘুরলে কী হবে?
যদি পৃথিবী দ্রুত ঘুরতে থাকে এবং তার জন্য দিনগুলো পরবর্তীতে ছোট হয়ে যায়, তবে বিজ্ঞানীদের প্রথমবারের মতো ' নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড' চালু করতে হতে পারে। যার অর্থ, ঘড়ি থেকে এক সেকেন্ড বাদ দেওয়া হবে।
Read full story in English