গত সপ্তাহে, রাজস্থানের যোধপুরে একজন চিকিৎসক একটি কুকুরকে তাঁর গাড়িতে বেঁধে শহরজুড়ে টেনে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। কুকুরটির একটি পা ভেঙে গেছে এবং সে চরম আঘাত পেয়েছে। বিষয়টি পশুপ্রেমীদের নজরে পড়ায় ডাক্তার রজনীশ গালওয়া, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ ধারা (প্রাণীহত্যা বা পঙ্গু করে দুষ্টুমি করা), ১৯৬০ সালের প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ (পিসিএ) আইনের ১১ ধারা (প্রাণীদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ)-র মুখোমুখি হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ
প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতার বেশ কয়েকটি ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। আর, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষোভ উসকে উঠেছে। পশুপ্রেমীরা আরও কঠোর শাস্তির দাবিতে ১৯৬০ সালের শাস্তি আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। যোধপুরের মামলাটিও শাস্তির সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে। যা ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন, ১৯৬০
আইনটি প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কাকে বলে, তা সংজ্ঞায়িত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত বোঝা চাপানো বা অতিরিক্ত কাজ করানো। পশুকে খাবার, জল বা আশ্রয় না দেওয়া। একটি প্রাণীর ক্ষতি করা বা তাকে হত্যা করা ইত্যাদি। এই সব ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রথমবারের অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি হবে জরিমানা-সহ ১০ টাকা বা তার বেশি। কিন্তু, ৫০ টাকার কম। আগের অপরাধের তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বা পরবর্তী অপরাধের ক্ষেত্রে সাজা হবে জরিমানা ২৫ থেকে ১০০ টাকা। অথবা তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা উভয়ই।
বর্তমান আইন প্রজাতিবাদী
এই আইনকে 'প্রজাতিবাদী' (খুব সহজভাবে বললে, মানুষ একটি উচ্চতর প্রজাতি যে আরও অধিকারের যোগ্য) বলে সমালোচনা করা হয়েছে। কারণ, এর শাস্তির পরিমাণ নগণ্য। তাই, 'নিষ্ঠুরতা' পর্যাপ্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন- মসজিদে মাথা ঠেকালেন, মাদ্রাসা ঘুরলেন ভাগবত, ইমামরা বললেন, ‘রাষ্ট্রপিতা’
আইন সংশোধনের আহ্বান
পশুপ্রেমী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি, বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও এই আইন সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট, 'ভারতীয় প্রাণীকল্যাণ বোর্ড বনাম এ নাগরাজা এবং অন্যান্য'-তে বলেছিল যে, 'সংসদ একটি কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পিসিএ আইনের যথাযথ সংশোধন করবে বলে আশা করা হচ্ছে' এবং 'ধারা ১১ লঙ্ঘনের জন্য, পর্যাপ্ত জরিমানা এবং শাস্তি আরোপ করা উচিত।'
সংসদে শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, কিষাণগঞ্জের সাংসদ মহম্মদ জাভেদ সংসদে একটি বিল এনেছিলেন। যাতে বলা হয় যে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হোক। পাশাপাশি, কারাদণ্ডের বিধি ধার্য হোক। যা একবছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। দ্বিতীয় বা পরবর্তী অপরাধের ক্ষেত্রে, জরিমানা ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা করা হোক। কারাদণ্ডের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হোক। এরপরও নানা প্রস্তাব জমা পড়েছে। আইন হওয়ার কথাও হয়েছে। কিন্তু, কোনওটাই কার্যকরী হয়নি।
Read full story in English