scorecardresearch

Explained: দেশজুড়ে ‘বিরসা ভগবান’-এর জন্মবার্ষিকী, নেতা হিসেবে কোন অবদান ছিল বিরসার?

ঝাড়খণ্ডের খুন্তি জেলায় জন্মেছিলেন আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডা।

President Droupadi Murmu
বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মালা দিচ্ছেন দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, কেন্দ্র ১৫ নভেম্বর দ্বিতীয় জনজাতি গৌরব দিবস পালন করেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, এবছর দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি ঝাড়খণ্ডের খুন্তি জেলার উলিহাতু গ্রামে ‘ভগবান’ বিরসা মুন্ডার জন্মস্থান পরিদর্শন করেছেন। তাঁর মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।

কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ১৫ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ‘জনজাতি গৌরব দিবস’ পালিত হবে। এই উপলক্ষে জাতীয় ও রাজ্যস্তরের নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। উদ্বোধন হয়েছে আল্লুরি সীতারামা রাজুর মূর্তির। নতুন ‘উপজাতি জাদুঘর’ তৈরির কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

মুন্ডা উপজাতি আজকের ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর অঞ্চলে বসবাস করত। ১৮৭৫ সালে যখন বিরসা মুন্ডা জন্মগ্রহণ করেন, তখন ব্রিটিশরা আদিবাসীদের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে বনভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল আর শোষণ করার চেষ্টা করছিল। এজন্য তারা আংশিকভাবে স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে মিত্রতা তৈরি করে। এই স্থানীয় জমিদাররা আদিবাসীদের কার্যত দাসত্ববৃত্তি করতে বাধ্য করেছিল।

ইংরেজরা এই লক্ষ্যে একটি সামন্ততান্ত্রিক জমিদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। যা আদিবাসীদের ‘খুন্তকাট্টি’ কৃষি ও জমির মালিকানা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। গোটা ব্যবস্থাটা এসে দাঁড়িয়েছিল সম্প্রদায়-ভিত্তিক। কারণ, ইংরেজরা রাজত্ব করার জন্য বাইরের এলাকা থেকে মহাজন, ঠিকাদার, সামন্ত ও জমিদারদের নিয়ে এসেছিল। বিরসা মুন্ডা তাঁর শিক্ষক জয়পাল নাগের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, বিরসা জার্মান মিশন স্কুলে যোগদানের জন্য খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। অবশ্য কয়েক বছর পর তিনি স্কুল ছেড়ে দেন।

এই অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব, সেই সঙ্গে খ্রিস্টান এবং মিশনারিদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা গর্জে ওঠে। ১৮৮৬ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে বিরসা মুন্ডা চাইবাসাতে প্রচুর সময় কাটিয়েছিলেন। এই অঞ্চল থেকেই আদিবাসী আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল। আদিবাসী সর্দারদের কাজকর্ম বিরসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তিনি মিশনারি ও সরকারবিরোধী কাজের অংশ হয়ে ওঠেন। ১৮৯০ সালে বিরসা যখন চাইবাসা ছাড়েন, সেই সময় তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর ব্রিটিশ নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে জড়িত।

বিরসা শীঘ্রই একজন আদিবাসী নেতা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন। তিনি আদিবাসীদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি নিজের মতাদর্শ ‘বিরসাইত’ চালু করেন। যা তাঁর ওপর আদিবাসী মানুষের বিশ্বাস বাড়ায়। আর বিরসা ঈশ্বরের মতো ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। শীঘ্রই, মুন্ডা এবং ওরাওঁ সম্প্রদায়ের মানুষজন বিরসার দলে যোগ দিতে শুরু করেন। যা ব্রিটিশদের ধর্মান্তর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন- বিশ্ব এখন ৮০০ কোটি জনসংখ্যার, বিপদ কোথায়, কী বলছে রাষ্ট্রসংঘ?

এরপর ১৮৯৯ সালে বিরসা উলগুলান আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন বিদেশিদের তাড়ানোর জন্য অস্ত্র এবং গেরিলা যুদ্ধের ওপর জোর দিয়েছিল। বিরসা মুন্ডা আদিবাসীদের ঔপনিবেশিক আইন মানা এবং ভাড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে উত্সাহিত করেছিলেন। তিনি সামাজিক ক্ষেত্রের পরিবর্তনকে উৎসাহিত করেছিলেন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আদিবাসীদের উৎসাহিত করেছিলেন। তাঁর অনুগামীদের কাছে ‘ভগবান’ (ঈশ্বর) এবং ‘ধরতি আবা’ (পৃথিবীর পিতা) নামে পরিচিত হন।

কিন্তু ব্রিটিশরা শীঘ্র এই আন্দোলন থামাতে সক্ষম হয়। ১৯০০ সালের ৩ মার্চ, মুন্ডা চক্রধরপুরের জামকোপাই বনে আদিবাসী গেরিলা সেনার সঙ্গে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই সময় ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। অবশেষে রাঁচি জেলে ১৯০০ সালের ৯ জুন, মাত্র ২৫ বছর বয়সে অসুস্থতার কারণে বিরসা মুন্ডার মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর এই আন্দোলন শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিরসা মুন্ডা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সংঘবদ্ধ করেছিলেন। তিনি ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের ভূমি রক্ষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

Read full story in English

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Explained news download Indian Express Bengali App.

Web Title: The leader birsha munda and his contributions