করোনার পর, ভাইরাসের যেন নয়া পৃথিবীর খোঁজ পেয়ে গিয়েছি আমরা। কত রকমের ভাইরাস, তার রোগের কত ধরনের ব্যাপার স্যাপার। যত সেই পৃথিবীটাকে জানা যাচ্ছে তত অবাক হতে হচ্ছে। যেমন ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাস। এই নয়া ভাইরাসেরও সংক্রমণ ঘটেছে চিনে। চিনের পূর্বাঞ্চলের দুটি প্রদেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণের খবর মিলেছে। ৩৫ জন এখনও পর্যন্ত এতে আক্রান্ত বলে জানা যাচ্ছে। ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাসকে ছোট করে লেভি (LayV) বলেও ডাকা হচ্ছে। হেনিপাভাইরাসে প্রবল ভাবে অসুস্থ হয়ে ওঠে জন্তুরা যেমন, তেমনই মানুষ। ফলে এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ বা ভ্যাক্সিন নেই এ রোগের।
ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাস কী?
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, হেনিপাভাইরাসের একটি ধরন এই ল্যাঙ্গিয়া, জুনোটিক ভাইরাস এটি, মানে বন্যদের দেহের ভাইরাস, তাদের থেকে এসেছে মানবশরীরে। চিনে প্রথম দেখা যায় জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে। হেনিপাভাইরাসের আর যে সব ধরন রয়েছে, সেগুলি হল হেন্দ্রা, নিপা, সেডার, মোজিয়াং এবং ঘানাইয়ান ব্যাট ভাইরাস। আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘানাইয়ান ব্যাট ভাইরাস এবং মোজিয়াং ভাইরাস এখনও পর্যন্ত মানুষের ভিতর ছড়ায়নি। কিন্তু হেন্দ্রা এবং নিপা ছড়িয়েছে। মৃত্যুও ডেকে এনেছে।
ল্যাঙ্গিয়ায় জ্বর হয়, অন্যগুলিতেও হয়। কিন্তু এটির জিনোমের চেহারের সঙ্গে মিল রয়েছে মোজিয়াং হেনিপাভাইরাস। যা দক্ষিণ চিনে পাওয়া গিয়েছে।
কী করে ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাস মিলল?
ল্যাঙ্গিয়া পূর্ব চিনে পাওয়া গিয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত কিছু রোগীর শরীরে, যাঁরা পশুপ্রাণীর সংস্পর্শে আসেন। রোগীদের চিহ্নিত করে আলাদা করে রাখা হয় সঙ্গে সঙ্গেই। গবেষণা বলছে, ৩৫ জনের ল্যাঙ্গিয়া ধরা পড়েছে। শান্ডং এবং হেনান প্রদেশে। এঁদের মধ্যে ২৬ জন নতুন এই ভাইরাসেই সংক্রমিত, তাঁদের মধ্যে অন্য কোনও রোগজীবাণু সক্রিয় নয়।
আরও পড়ুন- জাতীয় পতাকা নিয়ে জোর টক্কর দলগুলোর, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’র পালটা কর্মসূচি অন্যান্যদের
ল্যাঙ্গিয়ার লক্ষণগুলি কী?
যাঁদের শুধুমাত্র ল্যাঙ্গিয়া হয়েছে, সেই ২৬ জন রোগীর লক্ষণ বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে-- সবারই জ্বর হয়েছে, তাঁদের ৫৪ শতাংশের দুর্বলতা দেখা গিয়েছে, ৫০ শতাংশের হয়েছে সর্দি, ৩৮ শতাংশের বমি বমি ভাব দেখা গিয়েছে। ২৬-এর ৩৫ শতাংশের লিভারের সমস্যা দেখা গিয়েছে। ৮ শতাংশের কিডনিতে প্রভাব পড়েছে। থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, মানে অনুচক্রিয়ার অভাব দেখা গিয়েছে ৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে, লিউকোপেনিয়া, অর্থাৎ কিনা শ্বেত রক্ত কণিকার অভাব দেখা দেয় ৫৪ শতাংশের।
কোথা থেকে ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাস এল?
সেই একই হিসেব। পশুর শরীর থেকে এসেছে লাফ কেটে মানব শরীরে। শ্রু নামে ইঁদুরের মতো দেখতে এক প্রাণীর শরীরে এই ল্যাঙ্গিয়া পাওয়া যায় মূলত। এরা এই ভাইরাসটির স্বাভাবিক ধারক বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সেরোসার্ভে চালিয়ে এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে কুকুর এবং ছাগলের রক্তেও।
মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণ প্রসঙ্গে কী জানা যাচ্ছে?
এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট উত্তর সামনে আসেনি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, খুব কম সংখ্যক নমুনা তাদের হাতে এসেছে, ফলে এর মাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। যে ৩৫ জনের দেহে এই ল্যাঙ্গিয়ার উপস্থিতি মিলেছে তাঁরা একে অপরের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তেমন কোনও তথ্য মেলেনি। ফলে এখনও পর্যন্ত এই সংক্রমণকে বিক্ষিপ্ত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ৯ জন রোগীর সংস্পর্শে আসা তাঁদের পরিবারের ১৫ জন সদস্যের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাঁরা কেউই ল্যাঙ্গিয়ায় সংক্রমিত নন।
Read full story in English