দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভূতটা যখন বেরিয়ে এসেছে, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন কেজিবি ভ্লাদিমির পুতিন পরমাণু অস্ত্র সম্ভার নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তৃতীয় একটা ভয়াল যুদ্ধের গা-ঘামানো পর্বে ছবির মতো শহর কিয়েভের বহু অংশ ধ্বংসস্তূপ যখন, তখন ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে খবর। আলোচনা চলছে বেলারুশ সীমান্তে। রয়টার্স এই খবর করেছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের এক পরামর্শদাতাকে উদ্ধৃত করে। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া ধিক্কারের বিস্ফোরণ। বাকি ইউরোপে পুতিনের দেশ এখন একঘরে। রুশ উড়ানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপের বৃহদংশ। কানাডাও সেই পথে পা দিয়েছে।
পাশাপাশি, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাতেও রাশিয়া চাপের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং লেনদেন যে সংস্থাটির সফটওয়্যারের মারফত হয়ে থাকে, সেই সুইফট থেকে রাশিয়াকে কার্যত কানটি ধরে বার করে দেওয়া হয়েছে। সুইটফ এক বিশাল ব্যাঙ্কিং লেনদেন নেটওয়ার্ক। কোনও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট হলে এদের মাধ্যমেই প্রথম মেসেজ যায়। ২০১৮-র হিসেবে ২০০টি দেশের ১১ হাজার আর্থিক সংস্থা এই মাধ্যমে যুক্ত। পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস এবং ফেডএক্সে জানিয়ে দিয়েছে, তারা রাশিয়ায় পণ্য পাঠাবে না। এই দুই সংস্থার পরিধিটা বিরাট। এর মাধ্যমেও রাশিয়া চাপে পড়বে, অন্তত সেই আশা!
আলোচনা নিয়ে দু'কথা
বেলারুশের শহর হোমেলে রাশিয়ার কথা মতো বসতে চাইনি ইউক্রেন। বেঁকে বসেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি। তাঁর বক্তব্য ছিল, বেলারুশ রাশিয়ার হামলায় প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, তাই সেখানে আলোচনা হতে পারে না। কিন্তু রুশি তেরিয়া মেজাজ আর গোলাবারুদের যে হুঙ্কার, তাতে জেলেনেস্কি কার্যত মাথা নুইয়েছেন। অবশ্য এখানে একটি খেলা খেলেছে রাশিয়া। তারা আগেভাগেই প্রতিনিধিদের রওনা করে দেয় বেলারুশ সীমান্তের দিকে। ঘোষণা করে দেয়, আমরা এগিয়ে পড়েছি, তোমরা চলে এসো। তখন আর কিছুই করার নেই ইউক্রেনের। বেলারুশের দিকে গুটি গুটি এগিয়ে যাওয়া ছাড়া। তবুও তো আলোচনা। যা হোক করে যদি যুদ্ধটা থামে। এই আশায় বসে রয়েছেন ইউক্রেনবাসী, যিশুর নাম জপতে জপতে যেন তাঁরা বলছেন, যা রাশিয়া দূরে যা লেবুপাতায় করমচা।
আরও পড়ুন Explained: রুশ হামলায় ধ্বংস Antonov AN-225, বিশ্বের বৃহত্তম বিমান সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন
লড়াই ছড়াচ্ছে
কিয়েভের দিকে নানা দিক থেকে দানবীয় শক্তি নিয়ে এগোচ্ছে রাশিয়া। রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে দিতে চায় তারা। এক দিক থেকে পেটে অন্য দিকে অস্ত্রের প্রতাপে, দুই ভাবেই ইউক্রেনকে মেরে ফেলতে চাইছেন পুতিন। সেই লক্ষ্যে দক্ষিণ উপকূলকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে কিয়েভ থেকে। যাতে বন্দর মারফত কোনও রসদ না ঢুকতে পারে।
কিয়েভের মেয়র ভিটলি ক্লিটসকো রবিবার এ পি-কে বলেছেন, এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ রয়েছে, ঘর গরম হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত জলও রয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামো ভেঙেচুরে গিয়েছে। বেশি সময় নেই আমাদের হাতে। তাঁর অনুমান অনুযায়ী, রাশিয়ার হামলাকারীরা শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে।
আরও পড়ুন Explained: SWIFT থেকে বাদ রাশিয়া! কী এই SWIFT? কেন বাদ পড়ে আরও বিপাকে পুতিনের দেশ
বহু মানুষ কিয়েভ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। পলাতকদের মুষ্টিমেয় জাতীয়তাবোধের হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে যুদ্ধ করতে ফিরেও এসেছেন। সেনা জওয়ানরা আম আদমিদের যুদ্ধে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পলায়নপরদের গন্তব্য এখন মূলত পোল্যান্ড। সেখানে আশ্রয়ের ব্যাপারে আগেই কথা হয়ে গিয়েছে। হামলার আশঙ্কা ঘনিয়ে ওঠার পর থেকে যাত্রাটা শুরু হয়। পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে এখন তাই বিশাল গাড়ির লাইন। ১৪ কিলোমিটার যা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এদিকে তীব্র ঠান্ডা। জমে যাওয়ার জোগাড়।
বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া চেষ্টা, সেই উত্তেজনাতেই গা-গরম। শীত পরাস্ত যুদ্ধের কাছে। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের বাঁচাও। ধ্বনিত হচ্ছে চার দিকে।