জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের দেওয়া যাবে বলে অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাাশি, বায়োলজিক্যাল-ই সংস্থার তৈরি কোরবেভ্যাক্স ৫ থেকে ১২ বছর বয়সিদের দেওয়া যাবে বলেও জানিয়েছে। করোনা দ্রুতহারে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। তাতে শিশুরাও যাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, সেকথা মাথায় রেখে এই অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কেন অনুমোদন দেওয়া হল?
করোনা অতিমারী রুখতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ভারত। প্রথম পর্যায়ে, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা স্বাস্থ্যসেবা এবং ফ্রন্টলাইন কর্মী ও বয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্করা ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এরপর সরকার চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৫-১৮ বছর বয়সিদের জন্য আর মার্চে ১২-১৪ বছর বয়সিদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। এবার চালু হতে চলেছে ১২ বছরের কম বয়সিদের টিকাদান কর্মসূচি। মঙ্গলবার জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতির পর, তা শীঘ্রই চালু হয়ে যাওয়ার পথ সুগম হল।
কখন এবং কোথায় শিশুদের করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে?
জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন এবং কীসের ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হল, সেই সংক্রান্ত তথ্য তিনটি সরকারি সংস্থার বিশেষজ্ঞদের কাছে রাখা হবে। এই তিনটি সংস্থা হল- ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন (এনটিএজিআই)। এই সংস্থা বৈজ্ঞানিক প্রমাণের প্রযুক্তিগত পর্যালোচনা করে সরকারকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দেয়। এছাড়া আছে কোভিড-১৯ ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং স্থায়ী প্রযুক্তিগত উপকমিটি। এই সংস্থাগুলো ছাড়পত্র দিলে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ছাড়পত্রের জন্য তৈরি করা ভ্যাকসিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জাতীয় বিশেষজ্ঞ গ্রুপ (এনইজিভিএসি) স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে একটি চূড়ান্ত সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী কয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।
আরও পড়ুন- গেরুয়া স্রোতে নামবদল, নতুন সংযুক্তি মহম্মদপুর, বদলে হল মাধবপুরম
কেন শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ?
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গুরুতর রোগ, মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই, যেহেতু শিশুরা ইতিমধ্যেই স্কুলে ফিরেছে, তাই তাদের সুরক্ষায় টিকা একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সুপারিশ করেছে যে ৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রত্যেককে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এই বয়সের জন্য পিফাইজার বা বায়োএনটেকের এমআরএনএ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সিডিসি লক্ষ্য করেছে যে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম (এমআইএস-সি) 'সবচেয়ে বেশি' প্রভাবিত হয়। এটি কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করে। অল্পবয়সি শিশুদের এমআইএস-সির বিরুদ্ধে কোভিডের টিকা কতটা ভালো কাজ করে, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে সিডিসি।
কোন ভ্যাকসিন, সেই ব্যাপারে কি প্রাপকের পছন্দই চূড়ান্ত?
অনূর্ধ্ব ১২-দের কোন টিকা দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। যেমন, সরকার ১২-১৪ বছর বয়সিদের জন্য শুধুমাত্র কোরবেভ্যাক্স এবং ১৫-১৮ বছর বয়সিদের জন্য শুধুমাত্র কোভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। জাইডাস ক্যাডিলা ডিএনএ ভ্যাকসিন, যা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের জন্য অনুমোদিত, তা কিন্তু, এখনও পর্যন্ত টিকাদান অভিযানে ব্যবহৃতই হয়নি।
এই ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা এবং সুরক্ষাগুলো কী কী?
মঙ্গলবার ভারত বায়োটেক জানিয়েছে, শিশুদের মধ্যে অ্যান্টিবডি প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ১.৭ গুণ বেশি। কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ৬ মাস পর শিশুদের মধ্যে শক্তিশালী ইমিউনিটি ক্ষমতা দেখাতে শুরু করে। সেই তথ্য কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করেছে ভারত বায়োটেক। বায়োলজিক্যাল-ই সংস্থাও জানিয়েছে, তাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শিশুদের জন্য তৈরি করোনার ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং ইমিউনিটি বাড়ায়।
Read story in English