লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দু দিন আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্মশানের পুরোহিতদের জন্য ভাতা ঘোষণা করেছেন। লোকসভা ভোটের ট্রেন্ড যা দেখা যাচ্ছে, তাতে গত লোকসভার ফল থেকে প্রায় ৭ ৮ গুণ ভাল রেজাল্ট করবে বিজেপি। ফলে রাজ্যে হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচারের সাপেক্ষে, তৃণমূল কংগ্রেসের এই পুরোহিত ভাতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে একটু দেরিই হয়ে গেল।
এখনকার খবর অনুসারে তৃণমূল কংগ্রেস ৪২টির মধ্যে মাত্র ২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে, ১৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ১৪-র ভোটে ৩৪টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে মমতার বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ এনেকটা কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্পের প্রতিশ্রুতির মতই শোনাচ্ছে।
আরও পড়ুন, ইতিহাসের দোরগোড়ায় বিজেপি, কী ভাবে?
এমন এক রাজ্য যা বামপন্থীদের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল, এবং ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস মা-মাটি-মানুষ-এর ডাক দিয়ে নতুন য়ে রাজনীতি, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির এই উত্থানের ব্যাখ্যা কী হতে পারে!
এবারের ভোটে বিজেপির তৈরি করা প্রশ্নমালার উত্তর মমতা ব্যানার্জির কাছে ছিল না। রাজ্যে সে অর্থে ভূমিহীন বিজেপির ইস্যু ছিল- তৃণমূল এবং মমতা তোষণের রাজনীতি করছেন। এ ছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ের সময়েও বেশ চমকপ্রদ কিছু পদক্ষেপ করেছিল বিজেপি। এ ব্যাপারে শুধু অমিত শাহ-কৈলাস বিজয়বর্গীয়র উপরেই ভরসা করেনি তারা, কাজে লাগিয়েছিল মমতার একদা দক্ষিণ হস্ত মুকুল রায়কেও। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যিনি দল ছাড়ার সময় থেকে নিজেকে বেশি সামনে আনতে দেননি, তিনিই এবারের পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় জয়টা অর্জন করেছেন। ভোটে না লড়েই।
এবার যা হল, তা বামেদের পক্ষে অন্তিমও হতে পারে। এখনও পর্যন্ত বামেরা একটি আসনেও জিতছে না এবং কংগ্রেস মালদার মত দুর্গতেও হরছে। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের ঐক্য হয়নি যে দুটি আসনে তার একটি রায়গঞ্জ। এখানে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি সাংসদ মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন, ভোট গণনা হচ্ছে কীভাবে, পদ্ধতিগুলি জেনে নিন
দক্ষিণ বঙ্গে তৃণমূল সামান্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এখানে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, মালা রায়ের মত নেতারা বিজেপির থাবা এড়াতে পেরেছেন।
কিন্তু যে দলের নেত্রী কয়েকদিন আগে অবধি প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর এখন আর আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নেই।
দু বছরের মধ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। এবারের লোকসভা ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কী বার্তা নিয়ে আসছে! এবারের লোকসভা ভোট ২১ সালের বিধানসভার আগে সেমিফাইনাল ছিল। সে লড়াইয়ে বড়সড় ক্ষতি যে তৃণমূলের হয়ে গেল তাতে সন্দেহ নেই।