Advertisment

ভারতের নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যগুলি কী কী?

মৌলিক কর্তব্যের বিষয়টি ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীতে সংবিধানের ৪ এ অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে সময়টা ছিল ইন্দিরা গান্ধী সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Fundamental Duty, Indian Citizen

ইন্দিরা গান্ধীর সরকার জরুরি অবস্থার সময়ে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য নির্দিষ্ট করেছিল

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকার মৌলিক কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে যাচ্ছে। সংবিধান দিবসে সংসদের যৌথ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাংবিধানিক কর্তব্যের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি আবার সেবা ও কর্তব্যের মধ্যে ফারাকও টেনেছেন। ওই অনুষ্ঠানেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে তফাৎ করেছেন। উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু মৌলিক কর্তব্য স্কুল পাঠ্যে ঢোকানোর প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ওই কর্তব্যের তালিকা স্কুলে এবং অন্যান্য প্রকাশ্য স্থানে টাঙানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন। সংবিধান দিবসের দিনই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এক লেখায় নাগরিকদের উদ্দেশে বলেছেন, মৌলিক অধিকারের মত মৌলিক কর্তব্যও স্মরণে রাখা উচিত।

Advertisment

মৌলিক কর্তব্য সংবিধানে বর্ণিত আছে। ইন্দিরা গান্ধীর সরকার জরুরি অবস্থার সময়ে এই সংস্থান নির্দিষ্ট করেছিল।

সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যের বিষয় এল কীভাবে?

মৌলিক কর্তব্যের বিষয়টি ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীতে সংবিধানের ৪ এ অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে সময়টা ছিল ইন্দিরা গান্ধী সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থা। এখন সংবিধানের ৫১ এ অনুচ্ছেদে ১১টি মৌলিক কর্তব্যের কথা বলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ৪২ তম সংশোধনীর সময়ে গৃহীত। অন্য যে কর্তব্যের কথা সংবিধানে রয়েছে, তা জোড়া হয়েছে ২০০২ সালে, সংবিধানের ৮৬ তম সংশোধনীতে, অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে।

এই কর্তব্যগুলি বিধিবদ্ধ, আইনের দ্বারা একে বলবৎ করা যায় না। তবে কোনও একটি বিষয়ের বিচার চলাকালীন আদালত এগুলি গণ্য করতেও পারে। একজন নাগরিক যে মৌলিক অধিকার ভোগ করেন, তার সাপেক্ষেই মৌলিক কর্তব্যের বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মৌলিক কর্তব্যের ধারণা সংগৃহীত হয়েছে রাশিয়ার সংবিধান থেকে।

পড়ুন, ইনার লাইন পারমিট কী, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)-এর সঙ্গে তার যোগাযোগ কোথায়?

মৌলিক কর্তব্যগুলি কী কী?

যে ১১টি মৌলিক কর্তব্য রয়েছে সেগুলি হল:

*সংবিধান মেনে চলা এবং তার ধারণা ও প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতকে সম্মান করা

*আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ধারণাগুলো যা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে, সে আদর্শগুলি মেনে চলা

*ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং সংহতিকে রক্ষা করা এবং ঊর্ধ্বে তুলে ধরা ভারতের নাগরিকদের প্রাথমিক জাতীয় কর্তব্যের অন্যতম

*দেশকে রক্ষা করা এবং দেশের প্রয়োজনে ডাক পড়লেই জাতীয় পরিষেবা প্রদান

*ধর্ম-ভাষা- অঞ্চল-বা কোনও রকম বিভেদকে প্রশ্রয় না দিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব ও সংহতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা- মহিলাদের সম্মানহানিকর যে কোনও অভ্যাস পরিত্যাগ করা

*আমাদের মিশ্র সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে মূল্য দেওয়া ও তাকে রক্ষা করা- আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পৃথিবীর পবিত্রতম ও মূল্যবান ঐতিহ্যের অন্যতম, এ ঐতিহ্য পৃথিবীর ঐতিহ্যের অংশও বটে

*বন, হ্রদ, নদী, এবং বন্যপ্রাণের মত জাতীয় পরিবেশকে রক্ষা করা ও তার উন্নতিসাধন করা, সমস্ত প্রাণের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন

*বৈজ্ঞানিক ভাবনা, মানবতা, জিজ্ঞাসু সত্তা এবং সংস্কারের উন্নতি সাধন

*জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করা এবং হিংসার পথ ত্যাগ করা

*ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে সমস্ত ক্ষেত্রে উৎকর্ষের জন্য সংগ্রাম যাতে দেশ ক্রমাগত উপর দিকে উঠতে পারে

*৬ থেকে ১৪ বছর বয়সকালের মধ্যের শিশুকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা বাবা-মা বা অভিভাবকের দায়িত্ব

কোন পরিস্থিতিতে ৪২ তম সংশোধনী পাশ হয়েছিল?

তখন নির্বাচন বন্ধ, নাগরিক অধিকার খর্বিত। সরকার মিসা (মেনটেন্যান্স অফ ইন্টারন্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট)-এর আওতায় হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে, এবং গরিবি হঠাওয়ের নাম করে বস্তি উচ্ছেদ করছে, চলছে নির্বীজকরণ। ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী বইয়ে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ লিখেছন, সাংসদরা য়খন আটত, সে সময়ে শ্রীমতী গান্ধীর মেয়াদকাল দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে পাশ করানো হল একাধিক সাংবিধানিক সংশোধন।

সাংবিধানিক অধিকার যোগ করা ছাড়াও ৪২ তম সংশোধনীতে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতের বর্ণনায় সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হল সমাজবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ।

যুক্ত করা হল নতুন নির্দেশাত্মক নীতি, তাকে মৌলিক অধিকারের উপরে স্থান দেওয়া হল। আইনের সাংবিধানিকতা খতিয়ে দেখবার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের যে ক্ষমতা তা কাটছাঁট করা হল। কেন্দ্রীয় আইনের সাংবিধানিক বৈধতা যাচাইয়ের অনুমতি কেড়ে নেওয়া হল হাইকোর্টের কাছ থেকে। সংবিধানে সংযুক্ত করা হল অনুচ্ছেদ ১৪৪ এ। ওই অনুচ্ছেদে বলা হল, কেন্দ্রীয় কোনও আইন  বাতিল করতে গেলে সাত বিতারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের দুই তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে

৪২ তম সংশোধনীর কোনগুলি এখনও লাগু?

১৯৭৭ সালের ভোটে জনতা পার্টির প্রতিশ্রুতি ছিল সংবিধানকে জরুরি অবস্থা পূর্ববর্তী সময়ে ফিরিয়ে আনার। তবে সম্পূর্ণ ফিরিয়ে আনার জন্য যে পরিমাণ সংখ্যা প্রয়োজন হয়, ক্ষমতায় আসার পর মোরারজি দেশাই সরকারের হাতে তা ছিল না। পরিবর্তন সাধিত হয়েছে অল্প অল্প করে।

১৯৭৭ সালে, ৪৩ তম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনের সাংবিধানিক বৈধতা পরীক্ষার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা হয়। পরের বছর, ৪৪ তম সংশোধনীতে ৩৫২ নং অনুচ্ছেদের আওতায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ভিত্তি পরিবর্তন করা হয়। আগে যে ভিত্তি ছিল আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, তার জায়গায় আনা হয় সশস্ত্র বিদ্রোহ। এ ছাড়া জরুরি অবস্থা প্রবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা লিখিত ভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করলে রাষ্ট্রপতি তা করতে পারবেন না বলে জানানো হয়।

পড়ুন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মুখে এক দেশ এক ভোট তত্ত্ব কেন?

প্রতিষেধক আটক আইনের আওতায় দু মাসের বেশি আটক রাখা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয় ১৯ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে। ৩১ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের জায়গায় আইনি অধিকারের আওতায় আনা হয়।

সংবিধানের অন্য গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলি

প্রথম সংশোধনী, ১৯৫১

সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হল যাতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণি বা সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উন্নতিসাধনের জন্য যে কোনওরকম ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ১৯ তম অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হল যাতে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটানোর আইনের সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়া যায়। বক্তব্যের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধের জন্য নতুন ভিত্তি রচিত হল, যে কোনও রকম ব্যবসা করা বা যে কোনও পেশা বেছে নেবার স্বীকৃতি দেওয়া হল। ৩১ এ ও ৩১ বি অনুচ্ছেদ এবং নবম তফশিল অন্তর্ভুক্ত করা হল যাতে প্রশ্নহীন ভাবে ভূমিসংস্কার সম্পর্কিত আইনকে বৈধতা দেওয়া যায়।

 ২৪তম সংশোধনী, ১৯৭১
১৩ নং ও ৩৬৮ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কে সংসদের অধিকার নিয়ে কোনও রকম সন্দেহ মুছে দেওয়া হল। সংবিধান সংশোধনের জন্য বিল আনা হলে রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিতে বাধ্য থাকবেন।

২৬ তম সংশোধনী, ১৯৭১
পুরনো ভারতীয় রাজ্যগুলির শাসকদের অধিকার খর্ব করার জন্য ২৯১ নং ও ৩৬২ নং অনুচ্ছেদ বিলোপ করা হল।

৫২ তম সংশোধনী, ১৯৮৫
দলত্যাগ বিরোধী আইন আনা হল দশম তফশিলের আওতায়, যার জেরে আইনপ্রণেতারা অযোগ্য হয়ে পড়বেন।

৬১ তম সংশোধনী, ১৯৮৯
সংবিধানের ৩২৬ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে ভোটের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করা হল

৭৭ তম সংশোধনী, ১৯৯৫
সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদের আওতায় নিয়ে আসা হল চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ।

৯১ তম সংশোধনী, ২০০৩

কেন্দ্রে মন্ত্রীসংখ্যার ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমা বেঁধে দেওয়া হল।

৯৯ তম সংশোধনী, ২০১৪

সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য জাতীয় বিচার কমিশন তৈরি করা হল। তবে এই সংশোধনী ২০১৫ সালে অসাংবিধানিক বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

Live Blog














Constituition of India
Advertisment