Uttarakhand’s Uniform Civil Code Bill: উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় পেশ হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি), এই বিল পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। গত বছরের শেষ দিকে, দেশজুড়ে এই আইন চালুর পক্ষে মত ব্যক্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিধানয়ভায় বিলটি পাশ হলে, দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ডে এই আইন চালু হবে। কী আছে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলে?
বর্তমানে বিবাহ-সম্পত্তির অধিকারের মত ব্যক্তিগত বিষয়ের বিরোধ নিষ্পরত্তির জন্য, বিভিন্ন ধর্মের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন আইন রয়েছে। সেগুলি বাতিল করে সকল ধর্ম নির্বিশেষে একটি অভিন্ন ব্যক্তিগত আইন তৈরির কথা বলা হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত এক বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল পুষ্কর সিং ধামি সরকার। সম্প্রতি সেই কমিটি যে রিপোর্ট জমা দেয়, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮২ পৃষ্ঠার এই খসড়া বিল তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় প্রস্তাবিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলটির মূলত চারটি দিক রয়েছে। সেগুলো হল- বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, লিভ ইন সম্পর্ক এবং এগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়সমুহ। তবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলের বিধান উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য নয়।
বর্তমানে, ভারতে ব্যক্তিগত আইন বেশ জটিল, প্রতিটি ধর্মের মানুষ নিজেদের নির্দিষ্ট বিধি অনুসরণ করে। অভিন্ন দেওয়ানী বিধি বিলের ধারণা হল- বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রে ভারতের সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য অভিন্ন আইন প্রযোজ্য হবে।
প্রস্তাবিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলটিতে উল্লেখ রয়েছে যে-
১. বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত প্রস্তাব
- বিবাহের নথিভুক্তকরণও বাধ্যতামূলক।
- বিবাহ নথিভুক্তকরণ না করলে সরকারি সুবিধা মিলবে না।
- মেয়েদের বিবাহের বয়স বৃদ্ধি, যাতে তারা বিয়ের আগে শিক্ষা অর্জনের পর্যাপ্ত সময় ও সুবিধা পায়।
- বিবাহবিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যুর পর মুসলিম মহিলাদের যে হালাল এবং ইদ্দত করেন, তা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা।
- মুসলিম মহিলারা সহ সকল মহিলাকে দত্তক গ্রহণের অধিকার প্রদান করা।
- জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. বহু বিবাহ রোধে প্রস্তাব
- সকল ধর্মের জন্য বহুবিবাহ এবং বাল্যবিবাহের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা।
- সকল ধর্মের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের একটিই অভিন্ন ভিত্তি ও প্রক্রিয়া।
৩. লিভ-ইন সম্পর্ক সংক্রান্ত প্রস্তাব
- লিভ-ইন সম্পর্ক আইনগতভাবে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা, অন্যথায় ৬ মাস পর্যন্ত জেল।
- ২১ বছরের কম বয়সীদের লিভ ইনের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সম্মতি বাধ্যতামূলক।
- কোনও সঙ্গী বিবাহিত হলে বা অন্য সম্পর্কে জড়িত থাকলে, নাবালক বা নাবালিকা হলে এবং জোর করে বা প্রতারণা করে সম্মতি আদায় করা হলে অথবা ভুল পরিচয় দিলে, লিভ-ইন সম্পর্ক নথিভুক্ত হবে না।
- লিভ-ইন সম্পর্কের ইতি টানতেও উভয়ের বিবৃতি জমা করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে যে, উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হোক বা না হোক, ধারা ৩৮১-এর উপ-ধারা (১) এর অধীনে লিভ-ইন সম্পর্কের একটি বিবৃতি রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হবে। যে দম্পতিরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন অথচ বিবৃতি জমা দেননি, তাঁদের জন্য একটি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়ই শাস্তি হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪. উত্তরাধিকার সংক্রান্ত প্রস্তাব
- সকল ধর্মের পুত্র ও কন্যার সমান অধিকার।
- বৈধ ও অবৈধ সন্তানের সমান অধিকার।
- দত্তক নেওয়া এবং জৈবিকভাবে জন্ম নেওয়া সন্তানদের সমান অধিকার।
- কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তিতে স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের সমান অধিকার।
আরও পড়ুন- L K Advani: শুধুই রামভক্তি, আসলে কোন প্রেক্ষিতে রথযাত্রা করেছিলেন বিজেপির ‘লৌহপুরুষ’ আদবানি?