মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে শিবাজি মহারাজ বরাবরই প্রাসঙ্গিক। গত বুধবারই (৩০ নভেম্বর), মহারাষ্ট্রের পর্যটনমন্ত্রী বিজেপির মঙ্গলপ্রভাত লোধা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের আগ্রা থেকে ঐতিহাসিক পলায়নের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তিনি মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবির থেকে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডের দলত্যাগের কথা বলছিলেন। সেই সময় মাত্রা ছাড়িয়ে শিণ্ডের দলত্যাগকে শিবাজি মহারাজের পলায়নের সঙ্গে তুলনা করে বসেন। যা ফের মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রাজ্যপালের মন্তব্যে বিতর্ক
কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি শিবাজি মহারাজকে পুরোনো জমানার নেতা বলেছিলেন। আর, তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নীতিন গড়কড়িদের নতুন জমানার নেতা বলেছেন। অর্থাৎ, শিবাজির সঙ্গে গড়কড়িদের তুলনা টেনেছেন। যা উদ্ধবের শিবসেনা এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র মত মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলোকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ করেছে। কারণ, এই দলগুলো বরাবরই শিবাজি মহারাজকে মহারাষ্ট্রে অবিসংবাদী নেতা হিসেবে প্রচার চালিয়ে এসেছে।
মন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্য
ঠিক কী বলেছিলেন মঙ্গলপ্রভাত লোধা? তিনি বলেছেন, 'ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে আগ্রায় বন্দি করে রেখেছিলেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। কিন্তু, শিবাজি মহারাজ স্বরাজ্যের জন্য সেই বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডেও দীর্ঘদিন ধরে কারও কাছে বন্দি ছিলেন। কিন্তু, মহারাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে তিনিও সরে দাঁড়িয়েছেন।'
ঠিক বলেছেন লোধা?
চলতি বছরের জুনে দলীয় নেতৃত্ব এবং মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে একনাথ শিণ্ডের 'বিদ্রোহ' শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোট সরকারকে পতনের পথে চালিত করে। তারপর থেকে শিণ্ডে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সত্যিই কি লোধা ঠিক বলেছেন? ফিরে দেখা যাক, শিবাজি মহারাজের সময়কাল।
ছত্রপতি শিবাজি কে?
ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ (১৬৩০-১৬৮০) ১৭ শতকে একটি স্বাধীন মারাঠা রাজ্য তৈরি করেছিলেন। তিনি একজন সেনাপ্রধানের ছেলে ছিলেন। তাঁর বাবা শাহজি ভোঁসলে ছিলেন দাক্ষিণাত্যের এক সুলতানের সেনাপতি। তিনি পুণের দায়িত্বে ছিলেন। সেই পুণেকে ঘিরেই স্বাধীন মারাঠা সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন শিবাজি।
শিবাজিকে শ্রদ্ধার কারণ কী?
শিবাজি তাঁর মৃত্যুর দুই শতাব্দী পরও মারাঠাদের কাছে কিংবদন্তি হয়ে রয়ে গিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ রাজ ও পরবর্তী ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধেও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন। যার জেরে শুধু মহারাষ্ট্রই নয়। গোটা ভারতে তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
আরও পড়ুন- বহুতলের আগুন নেভাতে গেলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ, আতঙ্ক তুঙ্গে
শিবাজি ও মুঘল
উল্কার গতিতে শিবাজির রাজ্যের বৃদ্ধি মুঘলদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। ১৬৫০-এর দশকে ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য অভিযানের সময় প্রথমবার সরাসরি মুঘলদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু, ঔরঙ্গজেব মুঘল সিংহাসনের জন্য যুদ্ধ করতে দিল্লির দিকে গেলে, শিবাজি দাক্ষিণাত্যের আরও অঞ্চল দখল করে নেন।
ঐতিহাসিক পলায়ন
ঔরঙ্গজেব তাঁকে ১৯৬৬ সালে আগ্রায় ডাকেন। তিনি ঔরঙ্গজেবের জন্য বহুমূল্যের উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, পালটা উপযুক্ত সম্মান পাননি। প্রতিবাদ জানালে তাঁকে বন্দি করা হয়। আগ্রায় তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়। তিনি সেই গৃহবন্দি অবস্থা থেকেই প্রতিদিন ব্রাহ্মণদের মধ্যে ফল বিতরণ শুরু করেন। অবশেষে অনুচরদের সহায়তায় সেই ফলের ঝুড়িতে করেই তিনি পালিয়ে যান। পরে নানা ছদ্মবেশ ধরে নিজের রাজ্যে ফেরেন। এরপর শিবাজি ফের শক্তি সঞ্চয় করে সাম্রাজ্য বিস্তারে মন দেন। ১৬৭৪ সালে তিনি ছত্রপতি উপাধি ধারণ করে স্বাধীন মারাঠা সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন।
Read full story in English