বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে সুপার সাইক্লোন 'আমফান'। বুধবার বিকেল বা সন্ধের মধ্যেই দিঘা ও বাংলাদেশের হাতিয়া হয়ে ধেয়ে যাবে অতি শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়। এই সময় ঘূর্ণিঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৬৫-১৭৫ কিমি। জানা যাচ্ছে পরিস্থিতি তেমন হলে আমফানের সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি পর্যন্ত। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, আমফান ইতিমধ্যেই সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। আবহবিদরা জানিয়েছেন, এই ঘূর্ণিঝড় এখন সুপার সাইক্লোনের চেহারা নিয়ে সমুদ্রের উপরে রয়েছে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০-২৩০ কিমি। কিন্তু আমফান যখন স্থলভাগের দিকে এগোবে, তখন ঝড়ের বেগ কমবে। অর্থাৎ, তখন আর সুপার সাইক্লোন থাকবে না, এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে আছড়ে পড়বে। সাধারণত, এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগের দিকে যত এগোবে, তত শক্তিক্ষয় হবে।
কীভাবে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন, ''সাইক্লোন একদিনে তৈরি হয় না। প্রথমে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়। এরপর নিম্নচাপ তৈরি হয়। এরপর গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়। পরে অতি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়। এরপর সাইক্লোনিং স্টর্ম তৈরি হয়। তারপর সিভিয়ার সাইক্লোন তৈরি হয়। এরপর ধাপে ধাপে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন, এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন, সুপার সাইক্লোন তৈরি হয়। সুপার সাইক্লোন সর্বোচ্চ। ঝড়ের ঘূর্ণনের গতিবেগের উপর ভিত্তি করে এটা ধার্য করা হয়''।
সুপার সাইক্লোন কী?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ কুমার দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে এর বিশদে ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেন, ''ঝড়ের গতিবেগের নিরিখে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে সাইক্লোনকে। ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ২২২ কিমি বা তার থেকে বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলি আমরা। ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ১৬৭-২২১ কিমি হলে তাকে এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে। ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ১১৮-১৬৬ কিমি হলে তখন ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে। ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিমি হলে, সিভিয়ার সাইক্লোন বলি। ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি হলে সাইক্লোনিং স্টর্ম বলি''।
আরও পড়ুন: Cyclone Amphan Live Updates: বাংলার বুকে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ‘আমফান’
আমফানের ক্ষেত্রে কী হবে?
সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ''সমুদ্রের উপরে রয়েছে সুপার সাইক্লোন। আমফানের ক্ষেত্রে, যখন এটি অতিক্রম করবে, তখন এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে ধেয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৬৫-১৭৫ কিমি। আমফানের সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৯৫ কিমি। ''
বাংলায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?
নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছেন, ”একদিকে করোনা, আরেক দিকে আরেকটা দুর্যোগ আসছে আমফান। দিনরাত কাজ করব আমরা। যাঁদের কাঁচা বাড়ি, যাঁরা সমুদ্রের কাছে থাকেন, ৩-৪ দিন সাবধানে থাকবেন। দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে”। ইতিমধ্য়েই প্রশাসনের তরফে দিঘা ও উপকূলবর্তী এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং অন্যান্য: কে রাখে এদের নাম?
আমফান নিয়ে কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী?
অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ নিয়ে সোমবার বিশেষ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইট করে পরে মোদী জানান, ”ঘূর্ণিঝড় আমফান নিয়ে সবরকম পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সবরকম প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। কেন্দ্র সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সবাই যাতে সুরক্ষিত থাকেন, সেই প্রার্থনা করছি”। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ২৫ এনডিআরএফ দল মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ১২টি দল প্রস্তুত রাখা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন ডিজি এনডিআরএফ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও ২৪ এনডিআরএফ দলকে স্ট্য়ান্ডবাই রাখা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আমফানের তাণ্ডবে কী ক্ষতি হতে পারে বাংলায়?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্য়োপাধ্য়ায় জানিয়েছেন, ''কাঁচা বাড়ি, কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গাছ উপড়ে যেতে পারে, যোগাযোগ ব্য়বস্থা বিচ্ছিন্ন হতে পারে, বিদ্য়ুতের খুঁটি ভেঙে পড়তে পারে, মাঠে ফসলের ক্ষতি হতে পারে''।
ঘূর্ণিঝড়ে সুরক্ষিত থাকবেন কী করে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছেন, ''এ সময় মাছ ধরতে কেউ যাবেন না। রেল ও যান চলাচল ঘুরপথে করা যেতে পারে। নৌকা চলাচল করা যাবে না। গুজবে কান দেবেন না, সরকারি প্রচারমাধ্য়মে খবর শুনুন। মূল্য়বান নথি সুরক্ষিত জায়গায় রাখুন। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিন। প্রয়োজনীয় খাবার মজুত রাখুন। টর্চ সঙ্গে রাখুন। বিদ্য়ুতের তারে হাত দেবেন না''।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন