সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় বাজেটের এক দিন আগে দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা প্রকাশ করেন অর্থনৈতিক সমীক্ষা বা ইকনমিক সার্ভে (Economic Survey), যা সংসদে পেশ করা হয়েছে আজ, ৩১ জানুয়ারি। চলতি অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে অবশ্যই এবারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় আগ্রহ অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা কী?
অল্প কথায় বলতে গেলে বিগত এক বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের রিপোর্টই হলো অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সেই সঙ্গে থাকে আগামীতে কোনও বড় চ্যালেঞ্জের কথা, এবং তার সম্ভাব্য সমাধান। এই রিপোর্ট প্রস্তুত করে অর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগের (DEA) অর্থনৈতিক শাখা, তত্ত্বাবধানে থাকেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন ডাঃ কৃষ্ণমূর্তি সুব্রমনিয়ন। রিপোর্ট প্রস্তুত হলে তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
ভারতে প্রথম অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করা হয় ১৯৫০-৫১ সালে, এবং ১৯৬৪ পর্যন্ত বাজেটের সঙ্গেই পেশ করা হতো অর্থনৈতিক সমীক্ষাও।
গত কয়েক বছর ধরে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়ে আসছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা। যেমন ২০১৮-১৯ সালে প্রথম খণ্ডের বিষয় ছিল ভারতীয় অর্থনীতিতে কিছু মূল চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত গবেষণা ও বিশ্লেষণ, এবং দ্বিতীয় খণ্ডে ছিল আর্থিক বর্ষের আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা, যার আওতায় আসে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র।
আরও পড়ুন: বাজেট প্রাক্কালে সুখবর, ৬.৫ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস অর্থনৈতিক সমীক্ষায়
অর্থনৈতিক সমীক্ষা জরুরি কেন?
অর্থনৈতিক সমীক্ষা একটি অত্যন্ত জরুরি নথি, যেহেতু এতে বিস্তারিত ভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থান জানা যায়।
এই রিপোর্টের মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণও করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে তৎকালীন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ন গোলাপি কাগজে ছাপা সমীক্ষা পেশ করেন, লিঙ্গ সাম্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষিত করতে।
সরকার কি এই সমীক্ষা মানতে বাধ্য?
সাংবিধানিক ভাবে অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করতে অথবা তার অন্তর্গত পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য নয় সরকার। বস্তুত, সরকার চাইলে এই দলিলে উল্লিখিত সমস্ত পরামর্শ বাতিল করতে পারে। তবে সরকার মানতে বাধ্য না হলেও এই সমীক্ষার গুরুত্ব হেতু এটি পেশ করা হয়ে থাকে।
কী দিশা দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০?
গত ছবছরে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন, এই প্রেক্ষিতে অবশ্যই আগামীতে এই হার বৃদ্ধি, এবং সেক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই এবারের সমীক্ষার মূল বিষয়। এখানে কিছু ক্ষেত্র, যেমন বেকার সমস্যা, বেসরকারি বিনিয়োগ, এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে টাকা খরচে অনীহা নিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে কী পদক্ষেপ ঘোষিত হবে, সে সম্পর্কে আভাস দিয়েছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রক দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) চলতি আর্থিক বর্ষে স্রেফ পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত আর্থিক বর্ষে (২০১৮-১৯) এই বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ।