অতিমারির অধ্যায় কাটিয়ে আগামী প্রজাতন্ত্র দিবসে ফের কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রধান অতিথির আসন দিতে চলেছে ভারত সরকার। কথায় বলে, সরকারের নড়েচড়ে বসতে দীর্ঘ সময় লাগে। বিরাট প্রশাসন, তা লাগাই স্বাভাবিক। তো কীভাবে চলল অতিথি বাছাই পর্ব?
আল-সিসি কে?
আগামী বছর, ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে প্রধান অতিথি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেহ ফাতাহ আল-সিসি। মিশরের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি মিশরের সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদে ছিলেন। সেই সময় মিশরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত মহম্মদ মোরসি সরকার চালাচ্ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে সেনা অভ্যুত্থান ঘটান আবদেহ ফাতাহ আল-সিসি। তবে, সেনার শক্তিতে মিশরের ক্ষমতা দখল রাখেননি সিসি। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর, জয়ী হন। নির্বাচনে অর্থনৈতিক উন্নয়নই ছিল সিসির প্রতিশ্রুতি। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, সিসির আমলেই মিশরের আর্থিক পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। আর, সমালোচনা ঢাকতে সিসির লোকজন বেছে বেছে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন। এহেন মিশরের প্রেসিডেন্টই আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতের প্রধান অতিথি।
কীভাবে প্রধান অতিথি বাছাই হয়?
অনেক কিছু ভাবনাচিন্তা করে, তবে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি বেছে নেয় নয়াদিল্লি। প্রজাতন্ত্র দিবসের ঠিক ছ'মাস আগে থেকে প্রধান অতিথি বাছাইয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। রাষ্ট্রদূত মনবীর সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, প্রধান অতিথিকে বেছে নেওয়ার আগে নানা বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিদেশ মন্ত্রক। সবার আগে বিবেচনা করা হয়, সেই দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন। কারণ, প্রজাতন্ত্র দিবসে কোনও দেশের শীর্ষস্তরের কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থই হল, ভারতের সঙ্গে সেই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। সেই দেশ ভারতের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে বিদেশ মন্ত্রক আগ্রহী। আর, সেই কারণেই প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে সেই দেশের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন- নির্ধারিতর চেয়ে অনেকটাই বেশি সময় ধরে চলছে কাতার বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো, কিন্তু কেন?
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন
আরেকটি কারণ যা ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রধান অতিথি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। তা হল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (NAM)। এই আন্দোলন ভারত ১৯৫০-এর শেষের দিকে এবং ১৯৬০-এর দশকের প্রথম দিকে শুরু করেছিল। সদ্য ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসা দেশগুলোকে নিয়ে এ হল ভারতের এক আন্তর্জাতিক আন্দোলন। যার উদ্দেশ্য, বিশ্বের রাজনৈতিক মেরুকরণ থেকে নিজস্বতা বজায় রেখে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা। আর, এই চেষ্টায় যেসব দেশ পরস্পরকে সমর্থন করতে আগ্রহী, তাদের নিয়েই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন শুরু করেছিল নয়াদিল্লি। সেই কারণেই ১৯৫০ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের প্রথম প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ। ন্যাম (NAM)-এর পাঁচ প্রতিষ্ঠাতার যিনি অন্যতম। বাকি চার প্রতিষ্ঠাতা হলেন, নাসের (মিশর), এনক্রুমাহ (ঘানা), টিটো (যুগোস্লাভিয়া) ও নেহরু (ভারত)।
Read full story in English