শনিবার রাতে ইন্দোনেশিয়ায় একটি ফুটবল ম্যাচে দাঙ্গা ও তার জেরে পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আরও অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন। পূর্ব জাভার মালাংয়ের কাঞ্জুরুহান স্টেডিয়ামে এই ঘটনা ঘটেছে। ঠিক কী কারণে এতবড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল ওই স্টেডিয়ামে?
ঠিক যা ঘটেছিল?
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল জনপ্রিয়। বড় ম্যাচ খেলার আগে আবেগ বাড়ে। প্রায়ই সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মালাং-এ এই সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছিল। তার মধ্যেই অতিরিক্ত ভিড় এবং পুলিশের টিয়ার গ্যাস ঘটনাস্থলে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছিল।
কী ভাবে ঘটনাটা বাড়ল?
শনিবার, আরেমা এফসি হোম স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পারসেবায়া সুরাবায়ার সাথে খেলছিল। দুই দলের সমর্থকদের সম্ভাব্য দাঙ্গা ঠেকাতে শুধুমাত্র আরেমা ভক্তদের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যাইহোক, পার্সেবায়া ৩-২ ব্যবধানে জয়ী হওয়ার পর, হাজার হাজার ক্ষুব্ধ ভক্ত মাঠে বোতল ও অন্যান্য জিনিসপত্র খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের দিকে ছুড়তে থাকেন। এর জের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত সমর্থকরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।
পুলিশের ভূমিকা
পালটা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। যাতে আতঙ্কিত দর্শকরা স্টেডিয়াম থেকে বেরনোর জন্য ছোটাছুটি শুরু করে। স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার। কিন্তু, টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার। হুড়োহুড়িতে পদদলিত এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ১৭৪ জন মারা যান। এর মধ্যে একটি পাঁচ বছর বয়সি বালক ও দু'জন পুলিশ আধিকারিকও আছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ কী বলছে?
কেন এমন হল, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তা বলেন, 'পুরো নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দর্শকরা পুলিশ আধিকারিকদের ওপর হামলা করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, লাভ হয়নি। তাই পুলিশকে কড়া হতে হয়েছে।'
আরও পড়ুন- কেজরিওয়ালকে ভয়? মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মুখ বদলাতে ভরসা পাচ্ছে না বিজেপি
এখন কী অবস্থা?
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নিয়ম অনুযায়ী স্টেডিয়ামে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া নিষিদ্ধ। পূর্ব জাভা পুলিশ আগে সেই নিয়ম জানত কি না, সেই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ঘটনায় ক্ষুব্ধ ফিফা ইন্দোনেশিয়ার পিএসএসআই ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। পিএসএসআই আবার ঘটনার তদন্তে একটি দলকে মালাং-এ পাঠিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া সরকারের ভূমিকা
ইন্দোনেশিয়া সরকার জানিয়েছে, তার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করবে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোও ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় পরীক্ষা না-হওয়া পর্যন্ত প্রিমিয়ার সকার লিগ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রী জয়নুদিন আমালি বলেন, 'আমরা ম্যাচের আয়োজন এবং সমর্থকদের উপস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করব। আমরা কি সমর্থকদের ম্যাচে যোগদান নিষিদ্ধ করার দিকে ফিরে যাব? সেটাই আমরা এবার আলোচনা করব।' ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল সংস্থা ইতিমধ্যেই আরেমা এফসিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাকি মরশুমে আর কোনও ম্যাচ আয়োজন করতে পারবে না।
Read full story in English