গত দুই দশকে ইউক্রেনে বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তার বেশিরভাগই আবার ভারতের। বিশ্বের সব দেশের মধ্যে প্রতিবার ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া ইউক্রেনে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। ইউক্রেন সরকারের নথিই এমনটা বলছে। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ ভারতের বহু পড়ুয়ারই স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সার্থক করতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য পড়ুয়া প্রতিবছর পাড়ি জমান বিদেশে। তাঁদের অনেকে গিয়ে নামেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে।
বিলেত ফেরত ডাক্তার থেকে ব্যারিস্টার। ভারতে স্বাধীনতার আগে, তার কদরই ছিল আলাদা। স্বাধীনতার পরও উপনিবেশ পরবর্তী অধ্যায়ে সেই কদর বিন্দুমাত্র কমেনি, বই বেড়েছে। তবে, বিলেত বা ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়ার সাধ্য সকলের থাকে না। সস্তায় পুষ্টিকর এবং সুস্বাদুর আগমার্কা কায়দায় বহু ভারতীয় পড়ুয়ারই সেই চাহিদা মেটায় ইউক্রেন।
গতবছর (২০২১) জুনে সংংসদে বিদেশ মন্ত্রক একটা নথি পেশ করেছিল। সেই নথি অনুযায়ী, ওই সময়ে ১৮ হাজার পড়ুয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছিলেন। তার পরই ছিল রাশিয়ার নাম। যেখানে সেই সময় লেখাপড়া করছিলেন সাড়ে ১৬ হাজার পড়ুয়া। তার পর নাম ছিল ফ্রান্সের। সেখানে সেই সময় ১০ হাজার পড়ুয়া লেখাপড়া করছিলেন। তবে, গতবছরের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ইউক্রেনের থেকেও বেশি পড়ুয়া সেই সময় লেখাপড়া করছিলেন জার্মানিতে। সেখানে পড়তে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়ার সংখ্যাটা ছিল ২০ হাজার ৮০১।
তবে, শুধু ভারতীয় পড়ুয়াই না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই বহু পড়ুয়া প্রতিবছর ইউক্রেনে লেখাপড়া করতে যান। ইউক্রেন স্টেট সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সেদেশে ৮০,৪৭০ জন পড়ুয়া বিশ্বের নানা দেশ থেকে পড়তে গিয়েছেন। যার মধ্যে শুধু ভারতীয় পড়ুয়ার সংখ্যাই ছিল ১৮ হাজারের আশপাশে। এছাড়াও মরক্কো থেকে গিয়েছিলেন ১০.২ শতাংশ, আজারবাইজান থেকে ৬.৮ শতাংশ এবং তুর্কমেনিস্তান থেকে ৬.৬ শতাংশ এবং নাইজেরিয়া থেকে ৫.৪ শতাংশ। অথচ, দুই দশক আগেও সংখ্যাটা ছিল বেশ কম। ২০০০ সালে এই সংখ্যাটাই ছিল মাত্র ১৮ হাজার। ২০১১ সালে আচমকা সংখ্যাটা বেড়ে হয়ে যায় ৫৩,৬৬৪। তারপর থেকে ক্রমশই ইউক্রেনে লেখাপড়া করতে আসা বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ছেই। .
আরও পড়ুন- ইউক্রেন ত্যাগ সম্পূর্ণ, কিন্তু ভারতীয় ছাত্ররা আটকে বেলারুশে
ইউক্রেন সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া ইউক্রেনে আসেন ডাক্তারির শিক্ষা নিতে। যেমন ২০১৯ সালে যে ৮০,৪৭০ জন পড়ুয়া বিদেশ থেকে ইউক্রেনে পড়তে এসেছিলেন, তার মধ্যে ৩২.৩ শতাংশ পড়ুয়া এসেছিলেন ডাক্তারি পড়তে। শুধু তাই নয়, ওই বছর ইউক্রেনে ডাক্তার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ৭.৭ শতাংশ। ইউক্রেনে ৪৫টি মেডিক্যাল কলেজ আছে। ২০১৫ সালে ইউক্রেন থেকে মেডিক্যালে স্নাতক হয়েছেন ১,৫৮৭ জন। ২০১০ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ৪,২৫৮। তবে, ইউক্রেন থেকে পাশ করে ভারতে ডাক্তারি করতে হলে 'ফরেন গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এগজামিনেশন' পরীক্ষায় পাশ করা জরুরি।
ইউরোপের এক সমীক্ষা বলছে, ইউক্রেনে লেখাপড়ার খরচ কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারি পড়ার খরচ বছরে ৭০ হাজার ডলার, কানাডায় খরচ বছরে ৯০ হাজার ডলার। আর ব্রিটেনে বছরে ৪০ হাজার পাউন্ড। সেখানে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে লাগে বছরে ৫ হাজার মার্কিন ডলার। সঙ্গে, ডাক্তারিতে ভর্তির জন্য ইউক্রেনে বিশেষ কড়াকড়ি করা হয় না। একইসঙ্গে, ইউক্রেন ইউরোপের দেশ। সেই কারণে, ইউক্রেন থেকে পাশ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চিকিত্সা করার সুযোগ পাওয়া যায়। আর, সেই কারণেই বিদেশি পড়ুয়ারা বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকার পড়ুয়ারা ইউক্রেনে লেখাপড়া করার জন্য এতটা উত্সাহী। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইউক্রেনও। বিদেশি পড়ুয়া ধরতে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু কনসালটেন্সি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই বিদেশি পড়ুয়াদের দেওয়া অর্থে আর্থিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে ইউরোপের দেশটি।
Read story in English