টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই) হোয়াটসঅ্যাপের মত কিছু প্ল্যাটফর্মকে আইনি ইন্টারসেপশনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ, সিগন্যাল বা টেলিগ্রামের মত প্ল্যাটফর্মহুলিকে বৈধ ইন্টারসেনপশনের আওতায় আনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কের একদিকে রয়েছে সরকার এবং নিয়ন্ত্রকরা, অন্যদিকে রয়েছে টেকনোলজি সংস্থা এবং গোপনীয়তাক অধিকারকর্মীরা। কর্তপক্ষ চায় এই প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে যেসব মেসেজ বা কল করা হয় সেগুলির অ্যাকসেস দেওয়া হোক আইন বলবৎকারী সংস্থাগুলিকে। ভারতও এই ধরনের যোগাযোগের উপর নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
ট্রাই কেন বৈধ ইন্টারসেপশন চাইছে?
টেলিকম সেক্টরের নজরদাররা ওভার দ্য টপ সার্ভিস প্রোভাইডরদের (ওটিটি), অথবা যে সব প্ল্যাটফর্ম পুরনো টেলিকম কোম্পানির পরিকাঠামো ব্যবহার করে, তাদের উপর নিয়ন্ত্রণকাঠামো তৈরি করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। ওটিটি গুলির উপর নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ২০১৫ সাল থেকে নজরে রেখেছে ট্রাই, যখন থেকে মোবাইল সংস্থাগুলি হোয়াটসঅ্যাপ ও স্কাইপে বিনামূল্যে মেসেজ ও কল পরিষেবা দিতে শুরু করায় তাদের ক্ষতির বিষয়টি উদ্বেগ প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন, সানাউল হক: উত্তর প্রদেশের ছেলের আল কায়েদার উপমহাদেশীয় প্রধান হয়ে ওঠার কাহিনি
সে সময়ে আরেকটি প্রসঙ্গও সামনে এসেছিল। এই পরিষেবাগুলি ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫-র আওতায় পড়ে না। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবেই এই পরিষেবাগুলি চলতে থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাই টেলিকম সংস্থা এবং ওটিটি পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে অবস্থানগত ফারাকের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক পরিপ্রেক্ষিতও। তবে গত দু তিন বছরে সারা দেশে ডেটা ব্যবহারের যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে এ সময়ে আর্থিক বিষয়টি আর তত গুরুত্বপূর্ণ থাকছে না বলে মনে করছেন ট্রাইয়ের আধিকারিকরা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিয়ন্ত্রকরা টেলিকম সংস্থা ও ওটিটি পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে ভারসাম্যের অভাব রয়েছে, সেদিকে খতিয়ে দেখছেন। টেলিকম সংস্থাগুলি বৈধ ইন্টারসেপশনের আওতায় পড়লেও, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি বর্তমানে আইন বলবৎকারী সংস্থাগুলির আওতার বাইরে।
নিয়ন্ত্রকরা কী ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করতে চলেছে?
ট্রাই নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা টেলিকম বিভাগ (ডট)-এর কাছে পেশ করবে, ডট পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করবে। বর্তমানে নিয়ন্ত্রকরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সারা পৃথিবীতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বৈধ ইন্টারসেপশনের পদ্ধতিগুলি খতিয়ে দেখছেন। অন্য নিয়ন্ত্রক বা কর্তৃপক্ষকে ইন্টারসেপশনের কোনও সুবিধা দেওয়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তেমন উদাহরণ পাওয়া গেলে ভারত সরকারকেও সে রকম সুবিধা প্রদান করার কথা বলা হবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে।
কোন আইনবলে টেলিকম সংস্থাগুলি বৈধ ইন্টারসেপশনের আওতায় পড়ে?
ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫-তে বলা হয়েছে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অথবা জননিরাপত্তার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার অস্থায়ীভাবে অধিকারগ্রহণ করতে পারে, যতদিন সে আপৎকালীন পরিস্থিতি বদায় থাকে অথবা জননিরাপত্তার প্রয়োজন থাকে। এর ফলে টেলিকম সংস্থাগুলি মেসেজ, কল এবং কোনও মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হলে এসব সম্পর্কিত লগ সরকারকে দিতে বাধ্য। তবে সরকার এখন আর টেলিগ্রাফ আইনের উপর নির্ভর করছে না। তারা চায় এই প্ল্যাটফর্মগুলিই তাদের উপর নজরদারি করার পদ্ধতি বাৎলে দিক।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ১১ তালিবান জঙ্গির বিনিময়ে ৩ ভারতীয়ের মুক্তি
তাহলে কি এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে যেসব মেসেজ আদানপ্রদান করা হয়ে থাকে সেগুলির উপর নজর রাখা যায় না?
হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলির দাবি তারা তাদের মেসেজ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপট করে রাখে। এর ফলে এই সব মেসেজের হদিশ পাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে অনিশ্চিত।
হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েবসাইটের FAQ পেজে বলা রয়েছে, কোনও ইউজার আমাদের পরিষেবা থেকে কনটেন্ট ডিলিট করে দেবার আগে আমরা যথাযথ অনুরোধ না পেলে আইন বলবৎকারী সংস্থাগুলির জন্য কোনও ডেটা সংরক্ষণ করি না।
একই সঙ্গে বলা হয়েছে, আনডেলিভার্ড মেসেজ ৩০ দিন পর সার্ভার থেকে ডিলিট হয়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপ প্রাইভেসি পলিসি অনুসারে আমরা ইউজার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার এবং শেয়ার করতে পারি কয়েকটি ক্ষেত্রে। সেগুলি হল, ১) ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখা, ২) বেআইনি কাজকর্ম চিহ্নিত করা, তদন্ত করা এবং তার প্রতিষেধ, ৩) আইনি ব্যবস্থায় সাড়া দেওয়া বা সরকারের অনুরোধ, ৪) আমাদের নীতি ও পদ্ধতি বলবৎ করা। এ ছাড়াও আমাদের পরিষেবায় এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতি চালু রয়েছে, যার ফলে হোয়াটসঅ্যাপ নিজে বা কোনও তৃতীয় পক্ষ কোনও মেসেজ পড়তে পারে না।
অন্যত্র কী পরিস্থিতি?
এখনও পর্যন্ত কোথাওই মেসেজিং অ্যাপের মেসেজের অ্যাকসেস কাউকে দেওয়া হয়নি। তবে সর্বত্রই আইন বলবৎকারী সংস্থাকে এই অ্যাকসেস দেবার ব্যাপারে চাপ তৈরি হচ্ছে। মার্কিন বিচার বিভাগ এনক্রিপটেড বার্তার অ্যাকসেস নতুন করে দাবি করেছে। নিউ ইয়র্ক চাইমসে গত ৩ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল যৌথভাবে ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকেরবার্গকে চিঠি লিখে বলেছেন, সংস্থাগুলির উচিত নয় ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ডিজাইন তৈরি করা যার ফলে সিরিয়াস ধরনের অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রেও কোনও রকম কনটেন্টের কোনও অ্যাকসেসই না পাওয়া যায়।
ভারতে আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ বারবার বলেছেন, সিরিয়াস অপরাধ আটকানোর জন্য মেসেজের হদিশ রাখা অতীব জরুরি। ভারত সরকার মেনেই নিয়েছে এনক্রিপটেড মেসেজের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়, তারা এখন চায় যেসব মেসেজের মাধ্যমে হিংসায় উস্কানি বা অন্য দুষ্কৃতিমূলক কাজকর্ম হয়, সেগুলির উৎস নিজে দেখেই দিক এই প্ল্যাটফর্মগুলি।
Read the Full Story in English