পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল টেলিফোন পরিষেবা চালু হল ভারতে। দেশে এল ৫জি পরিষেবা। গত পাঁচ বছর ধরে যে পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল টেলিফোন পরিষেবার জন্য ভারত চেষ্টা চালাচ্ছিল, এবার তা যেন সার্থক হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (অক্টোবর ১) মোবাইল ফোন এবং ডিভাইসে অতি উচ্চগতির ইন্টারনেট যুগের প্রতিশ্রুতির সূচনা করে কিছু নির্বাচিত শহরে ৫জি পরিষেবা চালু করে দিলেন।
৫জি পরিষেবা প্রথমে কোথায় পাওয়া যাবে?
প্রথম পর্যায়ে ৫জি আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, চেন্নাই, দিল্লি, গান্ধীনগর, গুরুগ্রাম এবং হায়দ্রাবাদ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হল। মোবাইল সার্ভিস অপারেটররা এনিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছেন। রিলায়েন্স জিও চলতি বছরের ৫জি স্পেকট্রাম নিলামের জন্য ৮৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে। তারা আগস্টেই বলেছিল যে দিওয়ালির মধ্যে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই এবং কলকাতার মত মেট্রো শহরগুলোয় ৫জি নেটওয়ার্কের উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করবে।
নিলামে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছিল ভারতী এয়ারটেল। তারা বলেছে, ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার মধ্যেই দেশের সমস্ত শহরে ৫জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। সংস্থাটি আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ এলাকাতেও পাওয়া যাবে ৫জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা।
৫জি কীভাবে জীবনকে প্রভাবিত করবে?
যোগাযোগ মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে বলেছে, '৫জি নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ এবং সামাজিক সুবিধাগুলো দ্রুত ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরবে। এতে ভারতীয় সমাজে এক বদল ঘটবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতে ৫জি-এর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব ৪৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকরা উচ্চতর ইন্টারনেট গতি উপভোগ করতে পারবেন। এর ফলে লেটেন্সি কম লাগবে।
লেটেন্সি হল ডেটার প্যাকেট পাঠাতে এবং প্রতিক্রিয়া পেতে একটি ডিভাইসের সময় লাগে। লেটেন্সি যত কম হবে, প্রতিক্রিয়া তত দ্রুত হবে। আর, ৫জি চালু হলে কম লেটেন্সি থেকে গ্রাহকরা উপকৃত হবেন। ৪জি-তে লেটেন্সি ১০ থেকে ১০০ মিলি সেকেন্ডের মধ্যে থাকে। ৫জি-তে এটি ১ মিলিসেকেন্ডের কম হবে। এতে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে। ৪জি-র ১০০ এমবিপিএসের বদলে ৫জি-তে সর্বোচ্চ ইন্টারনেট গতি ১০ জিবিপিএস-এ পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন- ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের জের, মুম্বইয়ের পেট্রোকেমিক্যাল সংস্থায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
ভারত কখন তার ৫জি প্রকল্প শুরু করে?
২০১৭ সালে, সরকার ৫জি চালু করার জন্য রোডম্যাপ মূল্যায়ন ও অনুমোদনের জন্য শিল্পকর্তা, একাডেমিক এবং নিয়ন্ত্রকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চস্তরের কমিটি বানিয়ে দিয়েছিল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এজে পলরাজের নেতৃত্বে এই কমিটির মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের ৫জি পরিষেবার পথে হাঁটাপথকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা। পাশাপাশি, লক্ষ্য ছিল, টেলিকম নেটওয়ার্ক সংস্থাগুলোর অভাব যাতে রোধ করা সম্ভব হয়। এই কমিটি ২০১৮ সালে তার রিপোর্ট জমা দেয়।
কমিটি ৫জি চালুর সমস্যা দূর করতে নিয়ন্ত্রক, স্পেকট্রাম নীতি, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে ল্যাবগুলোকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। এমনকী, ৫জি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য গবেষণা এবং বিকাশ অব্যাহত থাকায়, পরীক্ষামূলকভাবে সরকার অপারেটরদের জন্য স্পেকট্রাম বরাদ্দ করাও শুরু করেছিল। ২০১৯ সালে টেলিকম বিভাগ এবং সেক্টর নিয়ন্ত্রক সংস্থা TRAI স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু করে। চলতি বছরের আগস্টে, ৫জি স্পেকট্রামের নিলামের মাধ্যমে পরিষেবা চালুর চূড়ান্ত পদক্ষেপ করেছিল সরকার।
Read full story in English