Advertisment

প্রতি বছর কেন নতুন আই ফোন বাজারে আনে অ্যাপেল?

গড় ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর কাছে আই ফোন অত্যন্ত দামি। কিন্তু বিলাসবহুল ফোনের ক্ষেত্রেও আই ফোন এবাজারে চালকের ভূমিকায় চলে যেতেই পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Apple, Iphone 11

আই ফোন ১১-এর ভারতীয় বাজারদর ৬৪ হাজার টাকার কিছু বেশি

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপেল পার্কে মঙ্গলবার নতুন তিনটি আই ফোন, একটি নতুন অ্যাপেল ওয়াচ ও একটি নয়া আই প্যাডের কথা ঘোষিত হয়েছে। তেমন কোনও অবাক করে দেওয়ার মত কাণ্ড এবার এখানে ঘটেনি, যদিও আই ফোন ১১-এর বেসিক মডেলের দাম কম রাখা হয়েছে এবং আর্কেড ও অ্যাপেল টিভি প্লাসের মাসিক খরচের নতুন হার নিয়ে প্রশংসিতও হয়েছে সংস্থা।

Advertisment

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে কেন নতুন ফোন নিয়ে আসে অ্যাপেল?

অ্যাপেল ঠিক অন্য স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির মত নয়। আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে বেশ কিছু অ্যাপেল ব্যাবহারকারী রয়েছেন, যাঁরা অনেক অর্থ দিয়ে নতুন ফোন কেনেন না, তাঁরা সে অর্থের একটা অংশ ব্যয় করেন মাসিক টেলিফোন বিল হিসেবে। এটা প্রায় একটা সাবস্ক্রিপশনের মত- প্রতি বছর তাঁরা একটা নতুন আই ফোন পান, তাঁদের মাসিক বিল কয়েক ডলার বেড়ে যায়। এরকম ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব একটা কম নয়। এঁরা নিয়মতি নতুন ডিভাইস আপডেট করেন, এবং অ্যাপেলের বিক্রির পরিমাণও প্রতি ত্রৈমাসিকে কিছুটা বেড়ে যায়।

কিন্তু এই আপগ্রেডেশন নিশ্চিত করার জন্যই অ্যাপল বিভিন্ন ধরনের বাজেটের, নানারকমের ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন কিছু ফোন নিয়ে আসে। যেমন এ বছরের আই ফোন ১১ হল বাজেট ফোন এবং আই ফোন ১১ প্রো ও আই ফোন ১১ ম্যাক্স হল প্রিমিয়াম ফোন।

আরও পড়ুন, তিন ক্যামেরার সঙ্গে আর কী চমক আনল নতুন আইফোন?

কিন্তু অ্যাপেলের প্রতিটি ইভেন্টের আগে এত হৈচৈ হয় কেন?

আই ফোন হল আদি স্মার্টফোন- স্টিভ জোবস ২০০৭ সালে এই ধরনের ফোনের কথা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন। চারপর থেকে অ্যাপেল স্মার্ট ফোনের ট্রেন্ড সেটার হয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সারা দুনিয়ার মোবাইল ফোন শিল্প ও তার ব্যবহারকারীরা অ্যাপেলের বার্ষিক ইভেন্টের দিকে নজর রাখেন নতুন কী ফিচার আসে তা দেখার জন্য।

তবে গত কয়েক বছর ধরে অ্যাপেলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা বেশ কয়েকটি ফিচারের ক্ষেত্রে অ্যাপেলকে হারিয়ে দিয়েছে। যেমন নতুন আই ফোনে যে আলট্রা ওয়াইড লেন্স রয়েছে, তা অন্তত গত এক বছর ধরেই রয়েছে স্যামসাং, ওয়ান প্লাস এবং আরও কিছু ফোনে। কিন্তু এ সমস্ত ব্র্যান্ডই অ্যাপেল নতুন কী নিয়ে আসতে পারে তা আঁচ করার চেষ্টা করে থাকে এবং প্রায়শই হার্ড ওয়্যার ও সফ্টওয়্যার সিঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে তারা অ্যাপেলের তুলনায় পিছিয়ে থাকে।

এই হৈচৈয়ের ফলে বিশেষ করে অ্যাপেলের বিশ্বস্ত ব্যবহারকারীরা ভয়ে থাকেন, এই বুঝি তাঁরা কিছু মিস করে গেলেন, যা অ্যাপেলের পক্ষে সহায়ক হয়। এবং হৈচৈয়ের কারণেই যবহারকারীদের কাজে না লাগলেও বেশ কিছু আপগ্রেডেশনও ঘটে থাকে।

প্রতিটি নতুন ফোনই কি আগের চেয়ে ভাল?

হ্যাঁ। কিন্তু প্রশ্ন হল ঠিক কতটা বেশি ভাল। প্রযুক্তি ও আবিষ্কার স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে একেবারে চূড়া ছুয়ে ফেলেছে, ফলে ব্যবহারকারীকে একেবারে নতুনতম কোনও অভিজ্ঞতা দিতে পারা সত্যিই শক্ত হয়ে পড়েছে। যেমন অ্যাপেল বলছে শক্তিশালী A13 প্রসেসরের মাধ্যমে ক্যামেরা ব্যবহারে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা হবে, কিন্তু ব্যাস! এ বছরের জন্য ওইটুকুই।

Apple, Iphone 11 ছবি- নন্দগোপাল রাজন

বেশ কিছু ব্যবহারকারী মনে করছেন এদের ইনক্রিমেন্টাল আপডেটগুলি আর তেমন দরের নেই। আপগ্রেডেশনের সংখ্যা কমছে, অনেকেই দীর্ঘদিন একই ফোন ব্যবহার করছেন, যার ফলে অ্যাপেলের মত সংস্থার আয়তনে প্রবাব পড়ছে। এখন দেখার এই নতুন A13 বায়োনিক চিপ ও নতুন ক্যামেরায় সংযুক্ত তার নিউরাল ইঞ্জিন নতুন চাহিদা তৈরিতে কতটা সমর্থ হয়।

পরের বছরটা অবশ্য অন্যরকম হতেই পারে। আগামী বছর ৫জি নেটওয়ার্কের সুবিধে নেওয়ার চেষ্টা করবে সংস্থাগুলি। ৫জি প্রযুক্তি মৌলিক বাবেই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা পাল্টে দেবে।

পৃথিবীর স্মার্টফোনের বাজারের কী অবস্থা?

গত কয়েকটি ত্রৈমাসিক জুড়ে অবস্থা খুব ভাল নয়। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে রফতানি কমেছে ২ শতাংশ। স্যামসুং এবং হুয়াওই, শীর্ষস্থানীয় দুই সংস্থার বৃদ্ধি হয়েছে এক অংকে এবং তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যাপেলের হ্রাস হয়েছে ১৩ শতাংশ। অ্যাপেল নতুন লঞ্চের পর তৃতীয় ত্রৈমাসিকে একটু ভাল ফল করবে বলেই আশা করা যায়। এই ত্রৈমাসিকে সাধারণভাবে অ্যাপেল ভাল ফল করে থাকে। শাওমি, অপো এবং ভিভোর মত চিনা স্মার্টফোন কমদামি ফোনের বাজারে রাজত্ব করে চলেছে।

 অ্যাপেলের কাছে ভারত কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

গত কয়েক ত্রৈমাসিক ধরে অ্যাপেল চিনে তাদের বাজার হারিয়েছে। সে কারণে এবার তারা নজর দেবে ভারতের দিকে, যেখানে তাদের ফোনের উৎপাদন চালু রয়েছে। আইফোন এক্স আরের দাম কমার ফলে তাদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপেল এনেছে আইফোন ১১- যার দাম ৬৪, ৯০০ টাকা, যা অ্যাপেল এক্স আরের প্রথম দাম ৭৬,৯০০ টাকার চেয়ে অনেকটাই কম। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কিং পার্টনারদের মাধ্যমে ক্যাশব্যাক, ইএমআই এবং অন্যান্য অফারের মাধ্যমে ফোন আরও শস্তা করার দিকে নজর দিয়েছে তারা।

কিন্তু এসব সত্ত্বেও গড় ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর কাছে আই ফোন অত্যন্ত দামি। কিন্তু বিলাসবহুল ফোনের ক্ষেত্রেও আই ফোন এবাজারে চালকের ভূমিকায় চলে যেতেই পারে। এই ধরনের স্মার্টফোনে তাদের খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

(নন্দগোপাল রাজন অ্যাপেলের আমন্ত্রণে কুপার্টিনোয় রয়েছেন।)

বিশ্লেষণমূলক সব খবর পড়তে ক্লিক করুন এখানে

apple
Advertisment