সাম্প্রতিক অতীতে এত ভয়ানক বন্যা দেখেনি পাকিস্তান। ১২ বছর আগে ২০১০-এ একবার পাকিস্তানে ভয়ংকর বন্যা হয়েছিল। অনেকে বলেছিলেন, সেটা নাকি 'সুপারফ্লাড'। কিন্তু, এবার যা হয়েছে, ভাবাই যায় না। সেবারের বন্যার সঙ্গে তুলনা করাটাই বোকামি। সে বার ২,০০০ লোক মারা গিয়েছিল। ২ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। আর, এবার? সংখ্যাটা অনেক বেশি, সাড়ে ৩ কোটির কাছাকাছি। শুধুমাত্র, ২৭ আগস্ট পর্যন্তই ১,০৪১ জন মারা গিয়েছেন।
পাকিস্তানের জনসংখ্যার ১৫ শতাংশই জলে এখন বেঘর। শেহবাজ রশিদ, ইমরান মালিকদের মত পাকিস্তানের অনেক নাগরিকের বাড়িই এখন আর জলের উচ্চতার জন্য দেখাও যাচ্ছে না। এসব জানিয়েছেন পাকিস্তানের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী শেরি রেহমান। সরকারই যখন এই সব তথ্য দিচ্ছে, স্বভাবতই বুঝে নিন যে বেসরকারি মতে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাটা অনেক বেশি। পাকিস্তানের একটি প্রথমসারির সংবাদপত্র রবিবার (২৮ আগস্ট) লিখেছে, 'অর্ধেকের বেশি পাকিস্তান এখন জলের নীচে। অস্বাভাবিক বৃষ্টি থেকে হওয়া বন্যার জন্যই এমন পরিস্থিতি।'
কতটা ভয়ানক বৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানে?
পাকিস্তান প্রত্যেক বছর জুন-আগস্ট (বর্ষার মরশুম) মোটামুটি বৃষ্টিপাত হয়। জুন থেকে মরশুম শুরু হলেও জুলাইয়ে এসেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আর আগস্টে শেষ হয়। পাকিস্তান আবহাওয়া দফতর (পিএমডি)-এর হিসেব অনুযায়ী, তিন মাসে বৃষ্টি হয় ১৪০.৯ মিলিমিটার। গত বছর (২০২১ সাল) তো আরও কম ছিল ১২৫ মিলিমিটার। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন ১১.৩% বৃষ্টির ঘাটতি হয়েছে।
কিন্তু, এবছর জুনেই ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। তখনই বন্যা শুরু হয়ে গিয়েছে। জুনের শেষ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্তই প্রায় ৩০০ জন ওই বন্যায় মারা গিয়েছেন। ১ জুলাই থেকে ২৬ আগস্টের মধ্যেই ৩৫৪.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে, এই বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৩.৭ মিলিমিটার বা ২১১% বেশি। অনেক সময় প্রথম দিকে বেশি বৃষ্টি হয়। সময় যত এগোয়, পরের দিকে বৃষ্টি কমে আসে। কিন্তু, এবার সেই লক্ষণও নেই। শুধুমাত্র ১ থেকে ২৬ আগস্টের মধ্যেই পাকিস্তানে বৃষ্টি হয়েছে ১৭৬.৬ মিলিমিটার। পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী যা, স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০.৪ মিলিমিটার বা ২৫১% বেশি।
আরও পড়ুন- প্রধান বিচারপতির মেয়াদ মাত্র ৭৪ দিন, এত অল্পদিন কারা এই পদে ছিলেন?
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিন্ধু প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চল। ওখানে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪২.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৮৪% বেশি। বেলুচিস্তানেও একই সময়ে ১২৯.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২২% বেশি। এমনকী, গিলগিট বালটিস্তানেও ১২.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শেরি রেহমান টুইট করেছেন, 'আমাদের শহরগুলো এমন প্রবল বর্ষণের জন্য তৈরি নয়।' তিনি খাইবার পাখতুনখোয়ার মাদিয়ান ব্রিজের ওপর বন্যার জল বয়ে যাচ্ছে, সেই ভিডিও টুইটের সঙ্গে দিয়েছেন। ২০১০-এর বন্যার পর পাকিস্তান ওই ব্রিজ ৫ মিটার উঁচু করেছিল। তারপরও এই অবস্থা।
কেন এই অতিবৃষ্টি?
আর, এসব ছবিই তুলে ধরছে আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোটা বিশ্বের অংশ হিসেবে এই উপমহাদেশেও জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। এর পিছনে দূষণ একটা বড় কারণ। পাশাপাশি, চিন তাদের মরু অঞ্চলকে শস্যশ্যামলা করে তুলেছে। এর প্রভাবও গোটা উপমহাদেশে পড়েছে। বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণ। তার জেরে ভারতও কিন্তু, এই অতিবৃষ্টির আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়। আর, বিশেষজ্ঞদের এই সাবধানবাণীই যেন ভারতবাসীর কাছে আশঙ্কার কারণ।
Read full story in English