কোন্নগরের কলেজ অধ্যাপক নিগ্রহের ঘটনা সবাই জেনে গেছেন। কিছু ছাত্রীকে আটকে রেখে তাঁদের দিয়ে মমতা জিন্দাবাদ শ্লোগান দিতে যখন বাধ্য করা হচ্ছিল, তখন সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সে ঘটনার জেরে তাঁকে মারধর করা হয়। চোট লাগে ওই অধ্যাপকের মুখে ও মাথায়।
অধ্যাপক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের আক্রমণকারীরা তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল প্রথমে এ কথা অস্বীকার করার চেষ্টা করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ওই অধ্যাপককে ফোন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা এবং স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অধ্যাপকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এ ঘটনায় কলেজের দুই প্রাক্তন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন, তৃণমূলে ফেরার প্রশ্নই নেই, ভাল লোকেরাই দল ছাড়ছে: বৈশাখী
যারা অধ্যাপক নিগ্রহের ঘটনায় যুক্ত তারা কলেজে ছাত্রছাত্রীদের আটকে রেখে জোর করে মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ, জয় মমতা, তৃণমূল জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ানোর চেষ্টা করেছিল।
মমতা ব্যানার্জির দ্রুত প্রতিক্রিয়া বুঝিয়ে দিচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, গুণ্ডামির অভিযোগ উঠেছে তা যে দলেরই ক্ষতি করছে- সে কথা তিনি উপলব্ধি করেছেন। কলেজের ভর্তি দুর্নীতি থেকে কলেজ চত্বরে শিক্ষক-অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠেছে সে জন্য শিরোনামে উঠে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস।
পশ্চিমবঙ্গের মূল বিরোধী দল বিজেপি জনতার রোষ এবং তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে মোহমুক্তির ফায়দা তুলছে দ্রুত। এ রাজ্যে গেরুয়া হাওয়ার যে উত্থান তার কারণ তৃণমূল ও তার নেতাদের ব্যবহার এবং তাঁদের কার্যকলাপ।
ছাত্রসংগঠনের নেতা-নেত্রীদের একাংশের কাজে ক্ষুব্ধ মমতা এবার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন। সারা দেশের মতই এ রাজ্যেও বিজেপি যুব ভোটব্যাঙ্ককে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন, নির্বাচনী খরচ নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকুন, মোদীকে চিঠি মমতার
বাংলায় ছাত্র আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শুধু মন্ত্রী বা বিধায়ক নয়, ছাত্র আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর যুব অনুগামীদের বাড়াবাড়ির সংকট আগেও ভোগ করেছেন।
কোন্নগরের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। অতি সম্প্রতি কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে এক অধ্যাপক টিএমসিপির এক সদস্যের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন। এক মাস আগে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকাকে টিএমসিপির একদল ছাত্র নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করা হয় এবং তাঁর নিরাপত্তা নিয়েও হুমকি দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক ঘটনায় মমতার হস্তক্ষেপেপ ঘটনা তাঁর দলের ছাত্র সংগঠনের কাছে একটি বার্তার সূচক। দলের নেতাদের বলা হয়েছে, ছাত্র নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে এবং তাঁদের উপর নজর রাখতে। বিজেপির এই বেড়ে ওঠার সময়ে, এবং আগামী বছরের পুর নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রাখলে তৃণমূলের হাতে জনসমর্থন ফিরিয়ে আনার জন্য বেশি সময় নেই। মমতা জানেন তাঁর পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।
Read the Full Story in English