গত মাসেই, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পূর্ব আফগানিস্তানের কুনার এবং খোস্ত প্রদেশে ভোরে বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ২০টি শিশু-সহ কমপক্ষে ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে, এই হামলার কথা ইসলামাবাদ স্বীকার করেনি। তবে, আফগানিস্তান প্রশাসন মনে করছে, খাইবার-পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় সাত জন পাকিস্তানি সৈন্য আফগান জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল। সেই হামলার প্রতিশোধ নিতেই পালটা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান।
পাকিস্তান সৈন্যদের ওপর হামলাকারী জঙ্গিরা কোন দলের?
যে জঙ্গিরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল, পাকিস্তানের সৈন্যদের হত্যা করেছিল, তারা তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য বলেই মনে করছে পাকিস্তান সেনা। ২০০৭ সালে কুখ্যাত জিহাদি কমান্ডার বাইতুল্লাহ মাসুদ এই জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে। এটি প্রাথমিকভাবে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের পশতুন উপজাতিদের এলাকা, বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের বাসিন্দাদের সমর্থনে পুষ্ট।
এই জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য কি?
ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস রিপোর্ট অনুযায়ী, টিটিপির মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, 'শরিয়ত আইন প্রয়োগ করা, আফগানিস্তানে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করা ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ।' মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়াও এবং আফগানিস্তান বর্তমানে তালিবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় টিটিপি একচেটিয়াভাবে শরিয়ত আইন বাস্তবায়ন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে মনোনিবেশ করেছে।
টিটিপি কোন উল্লেখযোগ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে?
এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সবচেয়ে দুঃসাহসী হামলার মধ্যে অন্যতম ২০১৪ সালে করাচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দখল করা এবং ১৫০ জনকে হত্যা করা। যাদের অধিকাংশই পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলের একই বর্ষের ছাত্র। তার আগের বছর আবার পেশোয়ারে, টিটিপি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল। হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল, ঐতিহাসিক অল সেন্টস চার্চ। সেখানে ২০১২ সালে তারা কমপক্ষে ১২০ জনকে হত্যা করে। আবার, ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল টিটিপি।
আফগান তালিবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী?
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক শীর্ষকর্তার দাবি অনুযায়ী, টিটিপি এবং আফগান তালিবান জঙ্গিরা 'একই মুদ্রার দুই মুখ'। পাকিস্তানি তালিবানরা তাদের ঘনিষ্ঠ আফগান তালিবানদের লোক ও সামরিক যন্ত্রাংশ দিয়ে সাহায্য করে। এমনকী, সীমান্তের ওপারের উপজাতিভুক্ত এলাকা থেকে শত শত আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েও তারা আফগানিস্তানে পাঠিয়েছে। আফগান তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর গত বছর জেলে আটক কয়েকশো টিটিপি জঙ্গিকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিল। আফগান তালিবানের সহযোগী আল কায়েদা এবং হাক্কানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গেও টিটিপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
আরও পড়ুন- ইংরেজির বদলে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের সংস্কৃতে শপথগ্রহণ, তামিলনাড়ুতে রাতারাতি অপসারিত ডিন
বিমান হামলা নিয়ে আফগান তালিবানের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
তালিবান কর্তৃপক্ষ বিমান হামলার ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কাবুলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ' খোস্ত এবং কুনারে শরণার্থীদের ওপর পাকিস্তানের হামলার তীব্র নিন্দা করছে আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরশাহি। পাকিস্তান সরকারকে এই ধরনের ইস্যুতে আফগানদের ধৈর্য পরীক্ষা না-করার এবং একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না-করার অনুরোধ করা হয়েছে।' পাকিস্তানি তালিবানও হামলার নিন্দা করার পাশাপাশি বিবৃতি দিয়েছে। পাকিস্তানি তালিবানের মুখপাত্র মুহম্মদ খুরাসানি বলেছেন, 'আমরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বলতে চাই যে প্রতিটি যুদ্ধের একটি নীতি আছে। পাকিস্তান যুদ্ধের প্রতিটি নীতিকে লঙ্ঘন করেছে। আমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করছি যে তারা নির্যাতিত মানুষ এবং শরণার্থী শিবিরে বোমাবর্ষণ না-করে, যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে লড়াই করুক।' পাকিস্তানের বিদেশ দফতর বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'পাকিস্তান গত কয়েক মাসে আফগান সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছে পাক-আফগান সীমান্ত অঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য। জঙ্গিরা আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাচ্ছে।'
Read story in English