এখন সাজো সাজো রব। একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে। পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে দৈনিকগুলোর পাতায়। প্রধানমন্ত্রী নাকি অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। ট্যুইটার জুড়ে ট্রেনডিং হচ্ছে শ্রমিকদের সম্মান। কী আছে সেই প্রকল্পে একবার দেখে নেওয়া যাক।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রত্যেক শ্রমিকদের থেকে মাসে ১০০ টাকা করে নেওয়া হবে। ৩০ বছর পরে সেই শ্রমিক মাসে ৩০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন।
আরও পড়ুন, কৃষকদের ৩.৩০ টাকা ভিক্ষা এবং আধার
কিন্তু এই প্রকল্পে আধার লাগবে। কেন? কারও কাছ থেকে থেকে টাকা নেওয়ার সময় যদি তাঁকে চিনে উঠতে পারা যায় তাহলে পরে কেন তা সম্ভব হবে না?
আসলে একেই বলে আধার দুর্নীতি। যা বছরের পর বছর চোখের সামনে ঘটে যাবে কিন্তু বুঝতে পারা যাবে না। এই দুর্নীতি রাফাল কেলেঙ্কারির চেয়ে অনেক বড়, যা চোখের সামনে ঘটে যাবে কিন্তু বুঝে উঠতে পারা যাবে না।
আধার তৈরিই হয়েছে দুর্নীতিকে মান্যতা দেওয়ার জন্য। যদিও বলা হয়েছে আধার দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা হবে কিন্তু বাস্তবে কী ঘটছে? ২০০৫ সালের তথ্য বলছে ৪৩.৫ কোটি মানুষ অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। দেশের জিডিপিতে ৫০% অবদান তাদেরই।
যদি এর একটা অংশ বা পুরোটাই ১০০ টাকা করে মাসে জমা দেয় তাহলে সে অর্থের পরিমাণ কম নয়।
একজন শ্রমিক ১০০ টাকা ৩০ বছর সময়কাল ধরে জমা দিলে কত টাকা তিনি জমা দিচ্ছেন? ৩৬০০০ টাকা! এবার যদি দীর্ঘ ৩০ বছর পর তাঁর হাতের ছাপ যদি না মেলে তাহলে কী হবে?
আরও পড়ুন, নির্বাচনে এবার জাতীয় নিরাপত্তা, না কৃষি সমস্যা?
এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আধার কী? আধার কি দুর্নীতি বন্ধ করার নামে নিজেই একটা দুর্নীতি নয়? একটি রাজনৈতিক দলের মুখপত্রে এই বিষয়টি নিয়ে লেখা হয়েছে কিন্তু তারা সন্তর্পণে আধার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। কারণ তারা এই আধারের জনক, ২০০৯ সালে তারাই এই আধার এনেছিল গরীব মানুষের উপকার করার নাম করে। কিন্তু উপকার কি হয়েছে? তাহলে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আধারের কারণে বঞ্চিতদের তালিকা রোজ বাড়ছে কেন? রোজ কেন ‘সন্তোষী’ র উদাহরণ বাড়ছে? মধ্যবিত্ত মানুষজন হয়তো ভাবছেন তাঁরা এই তালিকায় পড়বেন না, কিন্তু সে আশা অন্যায় কারণ কিছুদিন পরেই এই তালিকায় তাঁদের নাম যুক্ত হবে।
অনেকে ভাবতেই পারেন আধারে অসুবিধা কোথায়? আসলে এখানেই প্রশ্ন। যে ব্যক্তি একবার টাকা জমা দিলেন, তিনি কিন্তু আধার না দেখালে সেই টাকা আর পাবেন না। তাহলে পাবেন কারা? এ অর্থ সাইফন হয়ে যাবে অন্য কোনো আধার সংযোগ করা আ্যকাউন্টে আর তারপর বলা হবে আধারের জন্য "এতো এতো " টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
মন্ত্রী রবিশঙ্করপ্রসাদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে এই বছরে ৫.৬ লক্ষ কোটি টাকা বিভিন্ন সরকারি সুবিধা থেকে সাশ্রয় হয়েছে। কারা পেলো না, কারা বাদ গেল, তার কোনও বিশদ তথ্য নেই। এখানেই দুর্নীতি, আধারের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ বাদ যাবে বিভিন্ন কারণে আর বলা হবে সাশ্রয় হয়েছে। আরও একটা কথা এখানে বলা দরকার যে ওই মন্ত্রী বেশ কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে ৪৯০০০ আধার নিবন্ধক বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যদি ধরা হয় প্রতিটি নিবন্ধক দিনে গড়ে ১০ টি আধার করে থাকে তাহলে এই ১ বছরে এই নিবন্ধকদের করা কতগুলো ভুয়ো আধার আছে? সেগুলো কি বাতিল হয়েছে? সম্ভবত না। এই ভুয়ো আধার দিয়েই যত দুর্নীতি করা সম্ভব। কারা এই কৃষকদের বা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ করা টাকা পাবেন? তারা কি সত্যি আছেন? না ভুয়ো আধার দিয়ে টাকা সাইফন করার জন্যই এই প্রকল্প? আধারের জন্য আর কী কী চাওয়া হয়েছে, একবার দেখে নেওয়া যাক। নাম, লিঙ্গ, তফশিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত কিনা, কতটা জমি আছে এই সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। তার মানে সরকারের কাছে সমস্ত তথ্য এসে গেল।
আরও পড়ুন, শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর সন্ধানে
একটা “পরিচয়পত্র“ দেওয়ার নাম করে মুখের এক টুকরো রুটি কেড়ে নেওয়ার নাম হলো আধার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাকেকে অমান্য করে মোদী সরকার আধার আইন নিয়ে অধ্যাদেশ পাশ করিয়েছে, আগামী দিনে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির মর্জিতে দেশের নাগরিকদের ছেড়ে দিতে চাইছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ইস্তাহার প্রকাশিত হবে সব রাজনৈতিক দলের। কারা আধারের বিপক্ষে, আরা কারই বা পক্ষে তা নজরে রাখা জরুরি।
দেশ জুড়ে বেশ কিছু মানুষ এই নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন। সমস্ত রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে এবার সম্ভবত তাঁরা বলে উঠবেন যে আধার ধ্বংস না করতে পারলে একটি ভোট ও নয়।
(সুমন সেনগুপ্ত, পেশায় বাস্তুকার। মতামত ব্যক্তিগত)