আসাম এনআরসি: নাম নেই 'বিদেশী' সুবেদার সানাউল্লাহ ও তাঁর তিন সন্তানের
আর্মি কোর অফ ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে ২০১৭-র অগাস্টে অবসর গ্রহণ করেন ৫২ বছর বয়সী সানাউল্লাহ। কর্মজীবনে জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুবেদার মহম্মদ সানাউল্লাহর তিন সন্তানের স্থান হলো না শনিবার প্রকাশিত আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস-এর (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকায়। অথচ তালিকায় রয়েছে তাঁর স্ত্রীর নাম। জুলাই মাসে আসামে অবৈধ বিদেশী ঘোষিত হন সানাউল্লাহ, এবং তাঁকে চালান করা হয় একটি ডিটেনশন সেন্টারে, যার পর তাঁর ওপর নজর পড়ে গোটা দেশের।
Advertisment
এনআরসি-র শর্তাবলী অনুযায়ী, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল দ্বারা যাঁরা বিদেশী ঘোষিত হয়েছেন, এবং তাঁদের সন্তান-সন্ততিরা স্থান পাবেন না রেজিস্টারে। এক্ষেত্রে সানাউল্লাহের স্ত্রী তালিকায় রয়েছেন কারণ তিনি তাঁর বাবার দিক থেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।
আসাম এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় স্থান হয় নি ১৯ লক্ষের বেশি মানুষের। গতবছর প্রকাশিত খসড়া তালিকায় নাম ছিল না ৪০ লক্ষ মানুষের। শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৬১ জন আবেদনকারীর মধ্যে চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা হয়েছে ৩ কোটি, ১১ লক্ষ, ২১ হাজার ৪ জনের।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সানাউল্লাহকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, "আমার হাইকোর্টে মামলা চলছে, কাজেই আমি আশা করি নি যে আমার নাম লিস্টে থাকবে। বিচার ব্যবস্থায় পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমার, আমি নিশ্চিত যে সুবিচার পাব।"
আর্মি কোর অফ ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে ২০১৭-র অগাস্টে অবসর গ্রহণ করেন ৫২ বছর বয়সী সানাউল্লাহ। কর্মজীবনে জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন তিনি।
২০০৮-০৯ সালে তাঁর নাম প্রথমবার স্থান পায় সম্ভাব্য অবৈধ বিদেশীদের তালিকায়, এবং তাঁর বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে (এফটি) 'রেফারেন্স' মামলা রুজু করে আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখা। এই সময় নিজের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন সানাউল্লাহ। চলতি বছরের ২৩ মে মামলায় হেরে যান তিনি। ছদিন পর আসামের গোয়ালপাড়া জেলার একটি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে, যেখান থেকে অন্তর্বর্তী জামিনে তিনি মুক্তি পান ৮ জুন।
গুয়াহাটির সাতগাঁওয়ের বাড়িতে সানাউল্লাহের স্ত্রী সামিনা বেগম
"সীমান্ত শাখার এফটি কেসটা না থাকলে আমার নাম থাকত তালিকায়। আমার সমস্ত কাগজপত্র ঠিক আছে," এর আগে বলেছিলেন সানাউল্লাহ।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ২১ মে, ১৯৮৭ সালে যোগ দেন সানাউল্লাহ, এবং ২০১৪ সালে পান রাষ্ট্রপতির শংসাপত্র, "সাধারণ স্থায়ী সেনাবাহিনীতে নায়েব সুবেদার হিসেবে জুনিয়র কমিশনড অফিসার" পদে তাঁর উন্নতির জন্য। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর যোগ্যতা অর্জনের পরীক্ষা দিয়ে কামরূপ (গ্রামীণ) জেলায় আসাম পুলিশের সীমান্ত বিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন তিনি।